লে. কর্ণেল ডা: নাসির উদ্দিন আহমদ
ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
সারা পৃথিবী জুড়ে ৮৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার সারা পৃথিবী জুড়ে পালিত হয় বিশ্ব কিডনি দিবস। কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনি অসুস্থ হয়ে পড়লে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। কিডনির অসুখে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। কিডনি ফেইলুর অত্যন্ত মারাত্মক পরিনতি ডেকে আনে। শুধু আক্রান্ত ব্যক্তি নয় পরিবার এবং অর্থনীতির উপরে নেমে আসে মহাবিপর্যয়।
কিডনি রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে আমরা কিডনি রোগ থেকে সহজেই নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবো।
অতিরিক্ত ওষুধ পরিহার করুন:
আমাদের অনেকেরই অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণের বাতিক রয়েছে। অতিরিক্ত ওষুধ বিশেষত ব্যথা নাশক ওষুধ কিডনির জন্য ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বেশিরভাগ ওষুধ কিডনি দিয়ে পরিশ্রুত হয়। সুতরাং যখনই সম্ভব আপনার ঔষধের তালিকা ছোট করে ফেলুন। সামান্য ব্যথা বেদনায় ঔষধ সেবনের বাতিক থেকে বেরিয়ে আসুন।
ডায়াবেটিসে কিডনির ক্ষতি:
ডায়াবেটিস কিডনির শত্রু। বিশ্বব্যাপী কিডনি ফেইলুরের অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। সেজন্য রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনির জন্য মহাবিপর্যয় সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস কিডনি, চক্ষু এবং স্নায়ুর বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। সে কারণে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
পরিমিত পানি পান করুন:
শরীরে যাতে পানি শূন্যতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। ডায়রিয়া সহ অনেক ব্যাধিতে শরীর থেকে পর্যাপ্ত পানি বের হয়ে যায়। পানিশূন্যতা থেকে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে।
ডায়রিয়া হলে শুরু থেকেই খাবার স্যালাইন দিতে হবে যাতে ভয়ানক পরিণতি সৃষ্টি না হয়।
পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ কিডনির মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়। প্রতিদিন সে কারণে থেকে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। এছাড়া যারা অতিরিক্ত গরমের মাঝে কাজ করেন, যাদের ঘর্ম নিঃসরণ বেশি হয় তাদের সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। কিডনির সুস্থতার জন্য পানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
নিজের ওজনকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের পাশাপাশি কিডনির উপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করে। শরীরে অতিরিক্ত বর্জ্য জমতে থাকে। নিয়মিত শরীর চর্চা এবং পরিমিত খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ওজনকে বাগে রাখতে হবে।
ধূমপান, অ্যালকোহল বিপর্যয়কর:
ধূমপান এবং অ্যালকোহল থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। এগুলো শরীরের মাঝে অনেক ধরণের রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ তৈরি করে যা কিডনির উপরে বাড়তি চাপ প্রয়োগ করে। কিডনিকে টেনে নেয় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ধূমপান এবং অ্যালকোহল শরীরের সবগুলো অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সেজন্য ধূমপান এবং অ্যালকোহল মুক্ত জীবন যাপন সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরী।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি ডেকে আনে। উচ্চ রক্তচাপ থেকে হতে পারে কিডনি ফেইলুর। আবার কিডনি ফেইলুর হলেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হয়ে পড়ে কষ্টসাধ্য। সেজন্য যাপিত জীবনে পরিবর্তন আনায়নের পাশাপাশি ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে অবশ্যই রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাবার ও শরীর চর্চা:
যেসব খাদ্যে অতিরিক্ত সোডিয়াম রয়েছে সে সমস্ত খাবার পরিহার করতে হবে। যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত তাদের অবশ্যই পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করা থেকেও মুক্ত রাখতে হবে রসনাকে।
নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে শরীরের সবগুলো অঙ্গকে সচল রাখতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন শরীর চর্চা সুস্থতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অভ্যাস:
অনেক ক্ষেত্রেই কিডনি রোগের উপসর্গ প্রকাশ পায় না। সেজন্য মাঝেমধ্যেই নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিতে হবে। নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে কোন রোগের প্রাথমিক অবস্থা নিরূপণ করা সম্ভব। বছরে অন্তত একবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিজের স্বাস্থ্যের হাল হাকিকত জেনে নিন। কিডনি রোগের জন্য সহজ পরীক্ষা হলো রক্তচাপ পরিমাপ করা, প্রস্রাবে অতিরিক্ত প্রোটিনের উপস্থিতি আছে কিনা তা নির্ণয় করা এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ই-জিএফআর নির্ণয় করা।
লেখক: মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডােক্রাইনােলজিস্ট, সিএমএইচ।
চেম্বার : ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিভাগ, আল -রাজি হাসপাতাল( ২ দ্বিতীয় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা। সিরিয়াল পেতে- মো: তারেক
মোবাইল : ০১৭৫৬১৭৩৭৬৫, ০১৭২৬০৫০৯১২