ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করেন প্রতিবন্ধী নুর ইসলাম

আমিরুল ইসলাম: রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী নুর ইসলাম (৫০) ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করেন। এতে যা পান তা দিয়ে সংসার চলে তার।

নুর ইসলামের বাড়ি পারুল ইউনিয়নের নাগদাহ মৌজার ছিদাম বাজার এলাকায়। এক যুগ ধরে অন্যের জমিতে পরিবার নিয়ে বসতি গড়ে বাস করছেন তিনি। সংসারে তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ভিক্ষাবৃত্তির উপার্জন দিয়েই পরিবারের ৫ সদস্যের ভরণ-পোষণ মেটাতে হয় তাকে।

আগে তার ভিক্ষাবৃত্তির জীবন ছিলো না। দশ বছর আগেও সমাজের অন্য সকলের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন ছিলো তার। হঠাৎ এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্যারালাইসিস’-এ এক হাত এক পা চলৎশক্তিহীন হয়ে যায়। এর পর থেকে দিনমজুর নুর ইসলামের সংসারে নেমে আসে অভাবের কালো মেঘের ছায়া। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে না পারলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন পরিবারকে একমুঠো খাবার যোগান দিতে। সবশেষ গত দুইমাস আগে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করতে শুরু করেন।

ভিক্ষাবৃত্তির আগে কাঁধে করে ছোট বাচ্চাদের বই, চকলেটসহ বাচ্চাদের বিভিন্ন অইটেম বিক্রি করে সংসার চালাতেন তিনি। এসব করে গত ৫ বছরে দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন তিনি।

বয়সের ভার আর জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সংসার চালাতে নিরুপায় হয়ে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকাসহ ধার দেনা করে নিজের বাহন হিসেবে একটি ঘাড়ার কিনেন। সেই ঘোড়ায় চড়েই দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করেন তিনি। প্রতিদিন ভিক্ষা করে ৩শ থেকে ৫শ টাকার মতো আয় হয় তার। এ দিয়েই এখন চলছে নুর ইসলামের সংসার। তবে গলার কাটা হয়েছে ঘোড়া কেনার ধার দেনার সেই টাকা।

ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেওয়ার বিষয়ে নুর ইসলাম বলেন ‘কেউ কি আর ইচ্ছা করে ভিক্ষা করে। কেউ কি আর ইচ্ছা করে ভিক্ষুকের জীবন বেছে নেয়! বাধ্য হয়েই এ পেশাতে আসতে হয়েছে আমাকে!’

তিনি তার সঙ্গের ঘোড়াটিকে ‘জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এ ঘোড়া আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ঘোড়াটি এই অল্প সময়েই আমাকে বোঝে, আর আমিও ঘোড়াটিকে বুঝি।’

ভূমিহীন প্রতিবন্ধী নুর ইসলাম সরকারের কাছে একটি বাড়ি উপহার চেয়ে বলেন, ‘যুবক বয়সে আমি একজন কর্মঠ মানুষ ছিলাম। প্যারালাইসিস হয়ে আমার জীবনটা লণ্ড-ভণ্ড হয়ে গেছে। এ অবস্থার মধ্যেই মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। সেই ধারদেনার ঘানি এখনও টানতে হচ্ছে আমাকে। কষ্টের এই জীবনে সরকার যদি একটু সহায় হয়ে আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতো, তবে ভালো হতো।’

নুর ইসলামের স্ত্রী হাসনা বানু বলেন, ‘আমরা অভাবি কিন্তু সহজে কারও কাছে হাত পাতি নাই কিন্তু শেষ সময়ে নিরুপায় হয়ে ঘোড়ার মাধ্যমে আমার স্বামী ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের থাকার জায়গা নেই অন্যের জমিতে ঘর করে থাকছি।’

পারুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘নুর ইসলাম একজন কর্মঠ লোক ছিলেন, প্যারালাইসিস হয়েও তিনি সততার সাথে থেকে নানাভাবে জীবনযাপন করে আসছেন। আমরা পরিষদ থেকে তার প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও নানাভাবে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করে থাকি। তার ভূমিহীনের বিষয়টি আমরা জেনেছি পরবর্তীতে এই ধরনের কোন সুযোগ আসলো আমরা বিষয়টি দেখবো।’

Print Friendly

Related Posts