বসন্তের রঙ ছড়ালো সাঁওতালদের বাহা উৎসব

ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বাহা উৎসবে মেতে উঠেছিলো গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ। সাঁওতালরা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের নাচ-গানের মধ্য দিয়ে দিনভর এ উৎসব পালন করে।

শনিবার (১১ মার্চ) উপজেলার কাটাবাড়ি ইউনিয়নের আদমপুর মিশন সংলগ্ন বুজরুকবেড়া আদিবাসী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সাঁওতালরা এই ‘বাহা পরব বা বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করে ।

‘সাঁওতালদের ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রক্ষায় চাই রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগ’ এই স্লোগানে বৃটিশ হাইকমিশন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও আইইডি’র সহযোগিতায় অবলম্বন ও জনউদ্যোগ-গাইবান্ধা এ উৎসবের আয়োজন করে।

দিনভর ধর্মীয় পুজা-অর্চনা ও সাঁওতাল সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক সাঁওতাল নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী অংশ নেন। সাঁওতাল-বাঙালিদের আগমনে মিলন মেলায় পরিণত হয় সাঁওতাল পল্লী। পরে স্থানীয় আদিবাসী শিল্পীদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত সাঁওতাল সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে।

‘বাহা পরব’ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গাইবান্ধা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কামাল হোসেন।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহেদ হাসান, বাংলাদের কৃষি ও পরিবেশ ইউনিটের প্রধান মোস্তফা নূরুল ইসলাম রেজা, পরিবেশ আন্দোলন-গাইবান্ধার আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান রাফেল, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, গোলাম রব্বানী মুসা, অঞ্জলী রানী দেবী, আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুরমু, সুচিত্রা মর্মু তৃষ্ণা, জাকব টুডু, থমাস হেমব্রম, মনির হোসেন সুইট প্রমুখ।

এসময় বক্তারা বলেন, সাঁওতালরা আমাদের এদেশেরই নাগরিক, তাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য এদেশের সংস্কৃতিরই অংশ। সাঁওতালদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় রাষ্ট্রীয় ও সামজিক উদ্যোগ গ্রহণ, সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাদান ও কালচারাল একাডেমি স্থাপন করার দাবি জানান।

‘বাহা পরব’ উদযাপন কমিটি আহবায়ক ডা. ফিলিমন বাস্কে বলেন, ‘প্রাণ-প্রকৃতিকে ভালোবেসে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী বাহা উৎসব পালন করে। এই বাহা উৎসবের পুজা পার্বন করলে আমাদের সমাজ ও পরিবারের উন্নয়ন হবে। বাহা পূজা না করা পর্যন্ত সাঁওতাল নারীরা বাহা ফুল অর্থাৎ শাল ফুল ছিড়েও না, মাথায়ও পরে না। ভবিষ্যতে যাতে এই ঐতিহ্যবাহী ‘বাহা পরব’ হারিয়ে না যায়, সেটা নতুন প্রজন্মকে জানাতেই এই উৎসব আয়োজন হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাঁওতালদের অন্যতম একটি প্রধান পার্বণ হচ্ছে ‘বাহা পরব’। বাহা অর্থ ফুল। তাই বাংলায় বাহা পরবকে ফুল উৎসব বলা হয়। নববর্ষ হিসেবে ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করে সমতলে বসবাসকারী সাঁওতালরা। উত্তরাঞ্চলে সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ওঁড়াও, মুন্ডা, মালো, মাহাতো, মালপাহাড়ী, রাজওয়ারসীসহ মোট ৩৮টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এই বাহা উৎসবে অংশ নেয়।

Print Friendly

Related Posts