পাকিস্তান প্রিমিয়ার লিগের এবারের আসরের শুরু থেকেই রোমাঞ্চের ছড়াছড়ি। রানবন্যার টুর্নামেন্টে রেকর্ড হয়েছে আবার সে রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড করেছে আরেকদল। এমন জমজমাট আসরের ফাইনালটা রোমাঞ্চকর না হলে কী আর মানায়! হয়েছেও তাই। রুদ্ধশ্বাস রোমাঞ্চে মোড়ানো ফাইনালে মুলতান সুলতানসকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নিয়েছে লাহোর কালান্দার্স।
শনিবার (১৮ মার্চ) ঐতিহ্যবাহী গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পিএসএলের এবারের আসরের ফাইনালে মুলতান সুলতানসকে ১ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতেছে লাহোর কালান্দার্স। আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২০০ রান করেছিল লাহোর। জবাবে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৯৯ রানে থামে মুলতান। মাত্র ১ রানের জন্য টানা দ্বিতীয়বারের মতো হেরে যায় ফাইনাল।
গত আসরের ফাইনালে লাহোরের কাছে ৪২ রানের হারের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ এসেছিল মুলতানের সামনে। গতবারের মতো এবারের ফাইনালেও মুখোমুখি লাহোর-মুলতান। এবার টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন লাহোরের অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদি। মির্জা তাহির বেগ ঝড় তুললেও ফখর জামানের ধীরগতির ব্যাটিংয়ে লাহোরের রানের গতি খুব বেশি জোরে ছোটেনি। পাঁচ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৩৮ রান তোলে লাহোর। ১৮ বলে ৩০ রান করে বিদায় নেন তাহির বেগ। ৫টি চারের পাশাপাশি ১টি ছয় মারেন তিনি।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৬.২ ওভারে ৫৭ রান যোগ করেন ফখর-আব্দুল্লাহ শফিক জুটি। দলীয় ৯৬ রানের মাথায় ৩৪ বলে ৩৯ রান করে ফখর বিদায় নেন। এদিন ব্যাট হাতে ব্যর্থ স্যাম বিলিংস। ৮ বলে ৯ রান করে বিদায় নেন এই ইংলিশ। এ সময় লাহোরের রান ১৩.৪ ওভারে ১১১। এই রানের সঙ্গে ১ রান যোগ হতে না হতেই আরও দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে লাহোর। বিলিংস ও আহসান ভাট্টিকে পরপর দুই বলে ফেরান উসামা মীর। ১ রান করা সিকান্দার রাজা আউট হন খুশদিল শাহর বলে।
তবে এখান থেকেই ফের ঘুরে দাঁড়ায় লাহোর। আব্দুল্লাহ শফিকের সঙ্গে যোগ দিয়ে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদি। ৪০ বলে ৬৫ রান করে আনোয়ার আলির বলে শফিক যখন বিদায় নেন, তখনো লাহোরের রান ১৮.৪ ওভারে ১৭৮। ৮ চার ও ২ ছয়ে ইনিংসটি খেলেন তিনি।
লাহোরের ইনিংসের শেষ ৮ বলে ২২ রান তোলেন শাহিন ও ডেভিড ভিসে জুটি। এর মধ্যে একাই ৬ বলে ২০ রান নেন শাহিন। ১৫ বলে ২ চার ও ৫ ছয়ে ৪৪ রান করেন লাহোর অধিনায়ক।
বড় লক্ষ তাড়া করতে নেমে মাত্র ৩.৩ ওভারে ৪১ রান তুলে মুলতানকে ভালো শুরু এনে দেন উসমান খান-মোহাম্মদ রিজওয়ান জুটি। ১২ বলে ১৮ রান করে ভিসের বলে বিদায় নেন উসমান। উসমানের বিদায়ের পর রিজওয়ান-রুশোর ব্যাটে দারুণভাবে লাহোরকে তাড়া করছিল মুলতান। ১০.৩ ওভারে রুশো যখন বিদায় নেন তখন দলের স্কোরকার্ডে জমা পড়েছে ১০৫ রান। ৩২ বলে ৭ চার ও ২ ছয়ে ৫২ রান করে রশিদ খানের শিকারে পরিণত হন রুশো। এক ওভার পর বল হাতে ফিরে রিজওয়ানকেও ফেরান রশিদ। ২৩ বলে ৩৪ রান করেন তিনি।
বল হাতে শুরুতে মার খাওয়া শাহিন শাহ এরপর ফের বল হাতে নিয়ে টানা দুই ওভারে নেন ৪ উইকেট। আগের স্পেলে মার খাওয়া শাহিন নিজের শেষ ওভারে ৬ রান দিয়ে আউট করেন টিম ডেভিড, আনোয়ার আলী ও উসামা মীরকে। তার আগের ওভারে বিদায় করেন কিয়েরান পোলার্ডকেও । এই স্পেলেই মুলতানকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন শাহীন। শেষ ২ ওভারে মুলতানের জয়ের জন্য লক্ষ দাঁড়ায় ৩৫ রান।
তবে হারিস রউফের করা ১৯তম ওভারে ২২ রান নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে ফেলেন খুশদিল শাহ ও আব্বাস আফ্রিদি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য মুলতানের লক্ষ দাঁড়ায় ১৩ রান। তবে জামান খানের করা ওভার থেকে ১১ রানের বেশি নিতে পারেননি মুলতানের ব্যাটাররা। শেষ ওভারে রানআউট হওয়ার আগে ১২ বলে ২৫ রান করেন খুশদিল শাহ। ৬ বলে ১৭ রান করে অপরাজিত থাকেন আব্বাস।
৪ ওভারে ৫১ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন শাহিন আফ্রিদি। সমান ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন রশিদ খান। ৩১ রানের বিনিময়ে ১টি উইকেট নেন ডেভিড ভিসে।