রমজানে যা মেনে চলতে হবে ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীকে  

ডা. জে, আর ওয়াদুদ 

চলছে পবিএ সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এ সময় বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীরা একটু বাড়তি সতর্কতা  গ্রহন করতে হবে। কেননা অনেকদিন যাবৎ ডায়াবেটিস ও কিডনির রুগীদের এক রকম যাপিত জিবন চলে পার করে আসছেন। রমজানের এই মাসটির  জীবন যাপন একটুখানি ভিন্নতর হবে। সারাদিন রোজা রেখে নিজেকে সুস্থ রাখবেন যেভাবে সে বিষয় টি আপনার পারিবারিক চিকিৎসক ঠিক করে দেবেন,তাই দেরি না করে একজন ডায়াবেটিস  ফুড কেয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে চলা ভালো। নতুবা আপনি বড় অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন।
প্রাথমিক  কিছু নিয়মনীতি মেনে চলা অত্যাবশ্যক যেমনঃ
সুস্থ কিডনির জন্য করণীয়ঃ
১. স্বাস্থ্যবান থাকুন, সজীব জীবনযাপন করুন আপনি যত সজীব-সতেজ জীবনযাপন করবেন তত আপনার কিডনি রোগ কম হবে। সকালে হাঁটুন দৌড়ান বা সাইক্লিং করুন।
২. ডায়াবেটিস আক্রান্তরা  ব্লাড সুগার বিশ নিয়ন্ত্রিত রাখুন। ডায়াবেটিস রোগ কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যদি ডায়াবেটিস রোগ প্রথমেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তবে কিডনি রোগ প্রতিহত করা যায়।
৩. ব্লাড প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ব্লাড প্রেশার অনিয়ন্ত্রিত সবচেয়ে বেশি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করার অন্যতম কারণ। সবেচেয়ে ভাল হয় যদি প্রেশারকে ১২০/৮০ সস ঐম রাখা যায়। যদি ১৪০/৯০ সস ঐম ওঠে তবে অবশ্যই আপনার ডাক্তারকে বলতে ভুলবেন না।
৪. পুষ্টিকর খাদ্য খাবেন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। লবণ কম খাবেন। লবণ খেতে পারবেন প্রতিদিন ৫-৬ গ্রাম। লবণ খাওয়া কমাতে হোটলের খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং কাঁচা লবণ একেবারেই খাবেন না।
৫. প্রতিদিন প্রচুর পানি ও তরল খাদ্য খান। প্রতিদিন তরল খাদ্যের পরিমাণ হবে ১.৫ থেকে ২ লিটার। তা হলে শরীরের বর্জ্য নিষ্কাষিত হবে সহজে।
৬. ধূমপান করবেন না। ধূমপান করলে কিডনিতে রক্ত প্রবাহের গতি কমে যায় ফলে তার কার্যক্ষমতা কমে যায়। উপরন্তু ধূমপান কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় প্রায় ৫০%।
৭. ব্যথার ওষুধ প্রতিদিন দোকান থেকে কিনবেন এবং খাবেন। এ অভ্যাস থেকে বিরত থাকুন। ব্যথার ওষুধ কিডনিকে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত করে। যখন দীর্ঘস্থায়ী কোন ব্যথা-বেদনায় ভুগতে থাকেন তখন ব্যথার ওষধু কিভাবে পরিহার করে সুস্থ থাকা যায় ডাক্তারের কাছে তা বাতলে নিন। প্রয়োজনে সাধারণ প্যারাসিটামল খেতে পারেন।
যদি আপনার নিচের কোন ঝুঁকি থাকে তবে নিয়মিত কিডনি ফাংশন পরীক্ষা করুন।
* যদি আপনি ডায়াবেটিসে ভোগেন ।
* যদি আপনার ব্লাড প্রেশার বেশি থাকে।
* যদি আপনার ওজন বেশি হয়।
* যদি আপনার বাবা-মা কেউ পূর্বে কিডনি রোগে ভুগে থাকেন। তবে
রোগীদের শুরুতেই সতর্কতা অবলম্বন করে যেতে হবে। এবং একজন ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। কেননা
দীর্ঘদিনের ডায়াবিটিসে মানবদেহে নানাবিধ রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
★ কি কি পরীক্ষা জরুরি :
ডায়াবেটিস রোগীর নিয়মিত ফলোআপের তিনটি অংশ রয়েছে। এক. রক্তে শর্করা ও অন্যান্য মাত্রা সঠিক আছে কি না, তা জানা; দুই. কোনো জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে কি না, তা খুঁজে দেখা; তিন. ডায়াবেটিস সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে জানা।
এক.  তিন থেকে ছয় মাস অন্তর রক্তে শর্করার গড় বা এইচবিএওয়ান সি পরীক্ষা করা উচিত। এর মাত্রা ৭–এর নিচে থাকা ভালো। এর সঙ্গে ফলোআপে রক্তচাপ মাপতে হবে। বছরে একবার রক্তে ক্ষতিকর চর্বি পরিমাপ করা উচিত। সেই সঙ্গে দরকার ওজন পরিমাপ করা এবং বিএমআই হিসাব করা। তবে এটাই যথেষ্ট নয়। রোগী নিজে বাড়িতে সপ্তাহে এক দিন বা দুই দিন নিজের শর্করা পরীক্ষা করবেন। খালি পেটে এবং খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর। এই পরিমাপ চার্ট করে রাখবেন। খালি পেটে সুগার ৬ মিলিমোল বা এর কম এবং খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ৮ মিলিমোল বা এর কম থাকা বাঞ্ছনীয়।
দুই.  ডায়াবেটিস–সংক্রান্ত কিছু জটিলতা রয়েছে। ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য আতঙ্কের নাম কিডনি অকার্যকারিতা। কিডনি কেমন কাজ করছে, তা জানার জন্য রক্তে ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষাই যথেষ্ট নয়। বছরে এক বা দুবার প্রস্রাবের অ্যালবুমিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে মাইক্রোঅ্যালবুমিন বা অ্যালবুমিন ক্রিয়েটিনিন অনুপাত পরীক্ষা করা। চিকিৎসক তাঁর কক্ষেই পায়ের স্নায়ু ও রক্তনালির সুস্থতা পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন। বছরে অন্তত দুবার চোখের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রেটিনাসহ চোখ পরীক্ষা করা উচিত। ফ্যাটি লিভার ডায়াবেটিসের সঙ্গে তাই মাঝেমধ্যে যকৃত পরীক্ষা করা উচিত।
তিন. নিয়মিত ফলোআপের একটি বড় অনুষঙ্গ হলো নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষিত করে তোলা। খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ইনসুলিন ও গ্লুকোমিটারের ব্যবহার, জটিলতা হলে কী করণীয় (যেমন হাইপোগ্লাইসমিয়া হলে কী করবেন) ইত্যাদি বিষয়ে চিকিৎসককে প্রশ্ন করুন ও বিস্তারিত জেনে নিন। চিকিৎসকের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় জেনে নিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করুন, এই জ্ঞান আপনাকে ডায়াবেটিস সুনিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।তবে পাশাপাশি ডায়াবেটিসের জটিলতা কমাতে হলে নিয়মিত এসব পর্যবেক্ষণে ও চিকিসৎকের  শরণাপন্নের বিকল্পই নেই।
ডা. জে আর ওয়াদুদ  M.D, Ph.D (সার্জারি)
ডায়াবেটিক ফুট অ্যান্ড জি সার্জন এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট হেড “ফুট কেয়ার প্রোগ্রাম” পরিচালকঃ ইব্রাহিম ডায়াবেটিক ফুট কেয়ার হাসপাতাল।
চেম্বার:
আইজি হাসপাতাল এন্ড  ডিসিইসি
বাড়ি # ৪২ রোড # ১০/এ ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা। ফোন: ০২-৯১৪৬৩৫৭
সূত্র: জ ই বুলবুল 
Print Friendly

Related Posts