বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ফুটবল ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হল চারটে— প্রথম দশ মিনিট, হাফটাইমের আগের পাঁচ মিনিট, দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম দশ মিনিট আর খেলার শেষ পাঁচ মিনিট। আবার ফুটবলের একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কথা হল— হাফফিট তারকা প্লেয়ারের চেয়ে একশো ভাগ ফিট গড়পড়তা প্লেয়ারের কার্যকারিতা বেশি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে আটলেটিকো মাদ্রিদ যদি প্রথম আপ্তবাক্যটার সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়ে থাকে শনিবার রাতে, তা হলে দ্বিতীয়টার হাতে মার খেল রিয়াল মাদ্রিদ।
হ্যাঁ, সান সিরো স্টেডিয়ামের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর কথাই বলছি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বকালের সেরা গোলমেশিন হওয়া সত্ত্বেও পুরো একশো ভাগ ফিট না থাকা রোনাল্ডোকে আমার মতে ফাইনালে পুরো ম্যাচ খেলানো উচিত হয়নি জিদানের। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট থাকায় ফ্রি-কিক মাস্টার এ দিন সেট পিসে শটই নিতে এগোলো না! ম্যাচের এক ঘণ্টার পর থেকে প্রায় দাঁড়িয়ে গেল। আর কোনও দলের সুপারস্টার ফুটবলার যখন খেলা থেকে অর্ধেক সরে যায়, তখন তার ছাপ পুরো টিমের ওপর পড়ে।
রোনাল্ডো আর রিয়ালের ক্ষেত্রে নব্বই মিনিট খেলার শেষ পনেরো-কুড়ি মিনিট ঠিক সেটাই ঘটল। রোনাল্ডো, বেল, মার্সেলোদের গতি ওই সময় অর্ধেকে নেমে গিয়েছিল। আর সেই সুযোগে আটলেটিকো যেমন গতি বাড়াল, তেমনই বল ধরে খেলে অনেক বেশি জায়গা আর সুযোগ তৈরি করে ফেলল। তারই নিটফল, পরিবর্ত ফুটবলার কারাস্কোর সমতা ফেরানো। গ্রিজম্যান আগে মোক্ষম সময়ে পেনাল্টি নষ্ট করে আটলেটিকোকে বিপদে ফেললেও দলের গোলের অ্যাটাকটা ওর পা থেকেই তৈরি। যার থেকে জুয়ানফ্রানের ক্রসের ওপর শট নিয়ে কারাস্কোর গোল।
গোল খাওয়ার আগে রিয়াল কোচ জিদান তুলে নিয়েছিল বেঞ্জিমাকে তুলে ভাসকুয়জকে নামিয়েছিল। কিন্তু রোনাল্ডোকে বসালে হয়তো ভাল হত।
রিয়ালকে ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে দিয়েছিল র্যামোস। দু’বছর আগে এই দু’দলেরই ফাইনালে যার ইনজুরি টাইমের গোলে ১-১ করেছিল রিয়াল। তার পর অতিরিক্ত সময়ে রোনাল্ডোদের সেই আরও তিন গোল। এ দিন ক্রুজের ফ্রি কিক বেল ব্যাকহেড করে আটলেটিকো বক্সে ফেললে তার উপর ফ্লিকে গোল করে র্যামোস।
রিয়াল মাদ্রিদের পনেরো মিনিটে করা গোলে হাফটাইমে আটলেটিকো ০-১ পিছিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটেই পেনাল্টি পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু টিমের সেরা স্কোরার গ্রিজম্যানই পেনাল্টি কিকটা মিস করে বসল! যদিও পেনাল্টিটা এফএ-র রেফারি মার্ক ক্ল্যটেনবার্গ না দিলেও বোধহয় পারতেন।
কেন? রিয়াল বক্সে ফের্নান্দো তোরেসকে ফাউলের জন্য পেনাল্টি। কিন্তু আমার মতে, ওই মুভটায় বিপক্ষ ডিফেন্ডারকে বডি কভার করছিল তোরেস। আর সেটা করতে গিয়ে পড়ে যায়। কোনও সরাসরি ট্যাকলে পড়েনি। আর গ্রিজম্যানের মারা পেনাল্টি কিক রিয়ালের ক্রসবারের তলায় লেগে গোললাইনের বাইরে ড্রপ খাওয়ার কারণ, শট নেওয়ার সময় ওর কিকিং ফুট থেকে নন-কিকিং ফুটের দূরত্ব স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে গিয়েছিল। ফলে বলের তলায় পায়ের কন্ট্যাক্ট হয়ে শটটা ওপরের দিকে উঠে গিয়েছিল।
তবে আসলটা হল প্রবল চাপ। এত বড় মঞ্চে পারফর্ম করা অসহনীয় চাপ। ম্যাচের আগে ইন্টারনেট ঘাঁটতে বসে পড়লাম, আটলেটিকো কোচ সিমিওনে বলেছে, ১১৩ বছরের চাপ উপভোগ করবে আজকের ফাইনালে। চাপ নিতে ও নাকি ভালবাসে। ১১৩ বছর হল আটলেটিকোর বয়স। যারা এত বছরেও কখনও ইউরোপ সেরার ট্রফি জিততে পারেনি।
কিন্তু মুখে সেই চাপ উপভোগ করার কথা বলা এক জিনিস আর কাজে করে দেখানো আর এক জিনিস! তবে সত্যিই, ম্যাচের ওই সময় গ্রিজম্যানের ওই ভাবে পেনাল্টি মিস করা দেখে মনে হচ্ছিল, আসলে আজকের রাতটাই আটলেটিকোর নয়। কিন্তু নব্বই মিনিট শেষে আমিই যে ভুল স্বীকার করে নিতেই হচ্ছে!
সুব্রত ভট্টাচার্য, আনন্দবাজার পত্রিকা