প্রীতিলতার ১১৩ তম জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু

প্রীতিলতা ভারতের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রথম শহীদ বিপ্লবী নারী। পুরো নাম প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।

স্বাধীনতাকামী এই বিপ্লবীর ১১৩ তম জন্মদিন আজ। তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে ১৯১১ সালের ৫ মে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার ছিলেন মিউনিসিপ্যাল অফিসের প্রধান কেরানি, মা ছিলেন প্রতিভাদেবী। ছয় সন্তানের মধ্যে প্রীতিলতা ছিলেন দ্বিতীয়। মা আদর করে তাকে রাণী ডাকতেন।

তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ১৯১৮ সালে। শিল্প সাহিত্য সর্বোপরী মেধায় সর্বসেরা থাকায় শিক্ষকদের কাছে তিনি ছিলেন প্রিয়। ১৯২৬ সালে মেধাতালিকায় বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২৮ সালে লেটার মার্কসসহ ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন ইডেন মহিলা কলেজে। চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পড়াশোনা শেষ করে, তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে ভর্তি হন। তিনি দূরশিক্ষার সঙ্গে দর্শনে স্নাতক হন, এবং পরবর্তীতে একজন স্কুলশিক্ষক হন।

১৯৩২ সালে স্নাতক পাস করা প্রীতিলতার সনদ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে বাতিল করে দেওয়া হয়। পরে ২০১২ সালের ২২ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

ঢাকায় পড়ার সময় বিপ্লবী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হন। স্নাতক পরীক্ষার পর ১৯৩২ সালের ১৩ জুন ধলঘাটে বিপ্লবীদের প্রধান ঘাঁটিতে মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে দেখা করেন। বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার কারণে প্রীতিলতা পুলিশের নজরদারিতে পড়েন। ফলে প্রীতিলতা আত্মগোপনে যান। চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকেন। ১৯৩২ সালের ১৩ জুলাই কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রীতিলতার আত্মগোপনের খবর প্রকাশিত হয়। ব্রিটিশ সরকার তাকে ধরতে ছবিসহ নোটিশ প্রকাশ করে।

১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামে পাহাড়তলীর ব্রিটিশদের প্রমোদকেন্দ্র ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমনের সিদ্ধান্ত হয়। মাস্টার দা সূর্যসেন প্রীতিলতাকে এই অভিযানের দায়িত্ব দেন। রাতে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বিপ্লবীরা ক্লাব আক্রমণ করেন। গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ইউরোপিয়ান ক্লাব কেঁপে উঠে। ক্লাবে একজন আর্মি অফিসারের রিভলবারের গুলিতে প্রীতিলতার দেহের বাম পাশে বিদ্ধ হয়।

সহযোদ্ধাদের কাছে তিনি তার রিভলবারটা দিয়ে আরো পটাশিয়াম সায়ানাইড চাইলে সহযোদ্ধা কালীকিংকর তা প্রীতিলতার মুখের মধ্যে ঢেলে দেন। তার মৃতদেহের পোশাকে নিজ হাতে লেখা বিবৃতিতে লেখা ছিল- ‘আমরা দেশের মুক্তির জন্য এই সশস্ত্র যুদ্ধ করিতেছি। অদ্যকার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি অংশ।’

ক্লাব আক্রমণে অংশ নেওয়া অন্য বিপ্লবীদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রীতিলতা। পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া প্রীতিলতাকে বিপ্লবীরা শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। পরদিন পুলিশ ক্লাব থেকে ১০০ গজ দূরে মৃতদেহ দেখে প্রীতিলতাকে শনাক্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের পর জানা যায় গুলির আঘাত তেমন গুরুতর ছিল না এবং পটাশিয়াম সায়ানাইডই ছিল তার মৃত্যুর কারণ।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts