রেজাউল করিম: তৃতীয় বারের মতো আগামী ২৫ মে অনুষ্ঠিত হবে দেশের সর্ববৃহৎ সিটি কর্পোরেশন গাসিকের নির্বাচন। এই নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ৯ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে নৌকা প্রার্থী আজমত উল্লা খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর মূল আলোচনায় রয়েছেন ।
তবে ঋণখেলাপীর দায়ে তুমুল আলোচনায় থাকা জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর হাইকোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাহাঙ্গীর। অপরদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আজমত উল্লাকে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন ইসি।
আগামিকাল ৭ মে রোববার নির্বাচন কমিশনে (ইসিতে) ব্যাখা দিতে যাবেন আজমত উল্লা খান। সেখানে তিনি তার পক্ষে জবাব দিবেন। ওই একই দিনে প্রার্থীতা ফেরত পেতে নির্বাচন কমিশনের আদেশের বিপরীতে উচ্চ আদালতে (হাইকোর্ট) যাবেন জাহাঙ্গীর আলম। ফলে গাজীপুর নগরবাসী ও ভোটাররা রোববারে কি হয় সেটি দেখার অপেক্ষায়। নগরবাসী বলছেন, ওইদিনের সিদ্ধান্তের পরেই পাল্টে যাবে এবারের নির্বাচনের চিত্র।
নগরবাসী বলছেন, আজমত উল্লা খান যদি ইসির কাছে সঠিক ব্যাখা না দিতে পারে বা প্রার্থীতা যদি বাতিল হয় তবে পরিস্থিতি অন্যরকম হবে। অপরদিকে জাহাঙ্গীরের আলম যদি হাইকোর্ট থেকে পজিটিভ বা নেগেটিভ আদেশ পান সেক্ষেত্রেও পাল্টে যাবে নির্বাচনী পরিবেশ। একাধিক ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায় রোববারের পরেই এবারের নির্বাচনের চিত্রটা ফুটে উঠবে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আজমত উল্লা খানের প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না, বিষয়টি নিয়ে তার ব্যাখ্যা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির ওই সভায় আজমত উল্লাকে আগামি ৭ মে ইসিতে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
আচরণবিধি সংক্রান্ত এই চিঠি ও ব্যাখ্যার বিষয়ে আজমত উল্লা খান বলেন, নির্বাচন কমিশনের দেওয়া চিঠি হাতে পেয়েছি। এই চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্য প্রমাণিত হয়েছে। যেতেতু আমাকে ডেকেছে আমি তাদেরকে বিষয়টির জবার দিব। আমি বিশ্বাস করি তাদের (ইসি) চাওয়া প্রশ্নের ব্যাখা দিতে সক্ষম হবো যে, আমি কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি।
অপরদিকে গত ৩০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের কারণে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন বাতিল করেন রির্টানিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। ওই সিদ্ধান্তের পর জাহাঙ্গীর আলম বিভাগীয় কমিশনার কাছে মনোনয়নপত্র বৈধ করণের আপিল করেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের ঋণ খেলাপীর কারণে মনোনয়ন বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া ওই আদেশ বহাল রাখেন।
বিভাগীয় কমিশনার থেকে আপিল খারিজ হওয়ার পর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার সকল কাগজপত্র বৈধ থাকার পরও আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। এজন্য আমি রোববার উচ্চ আদালতে যাবো। সেখানে আশা করি ন্যায় বিচার পাবো।
এদিকে শুক্রবার গাজীপুর ভোগড়া বাইপাস কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজে গিয়ে মুসুল্লিদের উদ্দেশ্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার সমস্ত কাগজপত্র ঠিক ছিলো। তারপরও বিভাগীয় কমিশনার আমার আপিল খারিজ করে দিয়েছে। আমি এখন উচ্চ আদালত হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাবো। আমারটা বাতিল হলেও আমার মনোনয়ন বৈধ আছে। আমি এই শহর রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছি। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গত ১৮ মাস ধরে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। আমি শেষ পর্যন্ত দেখতে চাই। সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন।
এখন পর্যন্ত যাচাই-বাছাই শেষে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ৯ জন নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান, জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, স্বতন্ত্র আবদুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল, হারুন অর রশিদ, সরকার শাহানুর ইসলাম স্বতন্ত্র, জাকের পার্টির রাজু আহমেদ ও জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। আমরা নির্বাচনের আচরণ বিধি মানতে প্রার্থীদের বিভিন্নভাবে নির্দেশনা দিচ্ছি। ইতোমধ্যে অনেককে সতর্ক করা হয়েছে, চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরেও তারা বিধিভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।