বিলাইছড়ি-কাপ্তাইয়ের কারিগর পাড়া সংযোগ সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির দুর্গম উপজেলার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বিলাইছড়ি। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৬ সালে। মোট আয়তন ৭৪৫.৯২ বর্গকিলোমিটার। এই উপজেলায় প্রায় ৩২ হাজার লোকের বসবাস। কিন্তু শুরু থেকেই কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত এই উপজেলাটি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
অবশেষে দুর্গম এই উপজেলাটি সড়ক যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
রাঙামাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিলাইছড়িকে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় আনার লক্ষ্যে ৩৩৮ কোটি টাকার একটি মেগাপ্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের ৪ মে একনেক সভায় প্রকল্পটি পাস হয়। কাপ্তাই উপজেলার রাইখালীর কারিগর পাড়া থেকে বিলাইছড়ি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে ৪০ কিলোমিটার সড়ক ও ১২টি সেতু। ২০২২ সাল থেকে প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের সবগুলো প্যাকেজের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। কিছু প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে এবং এরমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সড়কটির কাজ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সড়কটি নির্মিত হলে বিলাইছড়ি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি এখানকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য খুব সহজে বাজারজাত করা যাবে। এছাড়াও এলাকার শিক্ষা, চিকিৎসা ও পর্যটনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সড়কটির নির্মাণ কাজ সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, কাপ্তাইয়ের রাইখালী ইউনিয়নের ভাল্লুক্যা এলাকা থেকে সড়কটির প্রায় ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্মাণ কাজ চলছে। বর্তমানে সড়কটির দুই দিকে কাজ চলমান রয়েছে।
বিলাইছড়ির স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, এই সড়কটি সম্পন্ন হলে আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাপ্তাই হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পারবো। বিশেষ করে শুস্ক মৌসুমে যখন কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যায় তখন আমাদের নদীপথে যাতায়াত করতে খুবই অসুবিধা হয়। এই সড়কটি হলে বিলাইছড়ির মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হবে।
বিলাইছড়ির ১ নং ইউপি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান বলেন, কাপ্তাইয়ের কারিগর পাড়া দিয়ে বিলাইছড়ি পর্যন্ত যে সড়কটি নির্মাণ করছে এলজিইডি, তা আমাদের বিলাইছড়িবাসীর জন্য অত্যন্ত সুখবর। বিলাইছড়ি উপজেলার সাধারণ মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই সড়ক।
বিলাইছড়ি উপজেলার বাসিন্দা মৃনাল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এই সড়ক নির্মাণ হলে দুর্গম বিলাইছড়ি উপজেলার আমুল পরিবর্তন হবে।
বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যাও বললেন, এই ৪০ কি.মি. সড়কটি নির্মাণ হলে এখানকার মানুষ খুবই উপকৃত হবে।
বিলাইছড়ি এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন বলেন, বিলাইছড়ি-কাপ্তাই কারিগর পাড়া সড়ক প্রকল্পের বিলাইছড়ি অংশে সড়ক হচ্ছে ৮ কি.মি.। এই সড়কের প্রস্থ ১২ ফুট। সড়কটির নির্মাণ হলে বিলাইছড়ির দুর্গম এলাকার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হয়ে যাবে।
কাপ্তাই রাইখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউছুপ তালুকদার বলেন, এই রাস্তা নির্মাণ হলে কৃষিপণ্য খুব সহজে রাইখালীতে নিয়ে কৃষকরা বিক্রি করতে পারবেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
ভাল্লুক্যা এলাকার বাসিন্দা রনি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এই এলাকায় অনেক রাস্তা আছে বর্ষাকালে হাঁটার উপযোগী থাকেনা।
রাইখালী ইউনিয়নের ভাল্লুক্যা এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ সুশীল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, রাস্তাটি হওয়ার ফলে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসা সহজ হবে। এখান থেকে দ্রুত বিলাইছড়ি যাওয়া যাবে। আগে যেখানে তিন ঘণ্টা সময় লাগতো, এখন এক ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে।
কাপ্তাই প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ঝুলন দত্ত বলেন, শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর খুব কমে যায়। এতে নৌ চলাচল বিঘ্নিত হয়। সড়কটি নির্মাণ হলে এখানকার পাহাড়ী সম্প্রদায়ের দুর্ভোগ কমে যাবে।
কাপ্তাই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত আন্তরিক। এরই একটি অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে রাইখালী কারিগর পাড়া-বিলাইছড়ি সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনে কাপ্তাই অংশে ৩২ কি.মি. সড়ক এবং ৮টি সেতু নির্মিত হবে। এছাড়াও ২০ কি.মি. রাস্তা ও ৪টি সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি বলেন, এই সড়কটি হলে বিলাইছড়িবাসী পানি পথে যেভাবে কষ্ট করে যাওয়া-আসা করতে হয় তা থেকে মুক্তি পাবে। সড়ক পথে বিলাইছড়িকে যুক্ত করা যাবে। খুবই দূর্গম জায়গা দিয়ে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ ।
উল্লেখ্য, রাঙামাটির ১০ উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলা- বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এসব উপজেলায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌ পথ। কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর এ তিন উপজেলায় নৌ যোগাযোগ শুরু হয়। যোগাযোগ সংকটের কারণে এসব উপজেলা কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যবসা বাণিজ্যে অনেক পিছিয়ে আছে ।