আর্জেন্টিনাকে বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ জিতিয়ে উল্লাসে মাতিয়েছিলেন বাংলাদেশের কোটি কোটি আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ জেতানো স্বপ্নের নায়ক আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ এখন বাংলাদেশে।
৩৬ ঘন্টার ভ্রমণ শেষে ১১ ঘন্টার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
সোমবার (৩ জুলাই) ভোর সোয়া ৫টায় বাংলাদেশে পৌঁছে মাত্র ঘন্টা তিনেক মতো বিশ্রাম নিয়েই মার্টিনেজ চলে যান উত্তর বাড্ডার ফান্ডেডনেক্সট নামের আইটি কোম্পানির অফিসে।
ফান্ডেড নেক্সট কোম্পানিই মার্টিনেজকে বাংলাদেশে আনার মূল আয়োজক। সেখানে যাওয়ার পরই মার্টিনেজের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের। এসময় পলকের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ও দুই ছেলে।
ফান্ডেডনেক্সটের পর নেক্সটভেঞ্চারে যাওয়ার কথা ছিলো ১১টার দিকে। তবে তার চেয়ে প্রায় দেড় ঘন্টা আগেই সেখানে পৌঁছান তিনি।
বিশ্বকাপজয়ী এই তারকার সঙ্গে প্রায় আধা ঘন্টা সময় কাটিয়েছেন মাশরাফি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন তার দুই সন্তান হুমায়রা মর্তুজা আর সাহেল মর্তুজা।
মাশরাফির দুই সন্তানের সঙ্গে ছবি তোলাসহ তাদের অটোগ্রাফও দিয়েছেন মার্টিনেজ। মার্টিনেজের সঙ্গে সময় কাটিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অফিসিয়াল আইডিতে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে একটি পোস্ট দিয়েছেন মাশরাফি।
সেই পোস্টে মাশরাফি লেখেন বলেন, ‘এমিকে ভালো লাগার শুরু কোপা আমেরিকা থেকেই, যেখানে সে টাইব্রেকারে দুটি গোল আটকে দিয়ে দলকে জয় এনে দিল। কত বছর পর বড় কোনো শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা! লিওনেল মেসিও পেল দেশের হয়ে প্রথম বড় ট্রফির স্বাদ। স্বাভাবিকভাবেই পাখির চোখে তাকিয়ে ছিলাম বিশ্বকাপের দিকে। কিন্তু সৌদি আরবের সাথে হেরে মনে হয়েছিল, আরেকটি বিশ্বকাপও হয়তো শেষ হবে হতাশায়। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ানো এবং পরে বিশ্বকাপ জয় দেখতে পারাটা ছিল অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের মতো।’
সাবেক এই টাইগার অধিনায়ক আরও বলেন, ‘সেই জয়ের অন্যতম নায়ক এমির সঙ্গে দেখা হলো আমাদের এই ঢাকায়। খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা, কিন্তু দারুণ এক অনুভূতি। বিশ্বকাপজয়ী দলের গোলকিপার চোখের সামনে! সে তো জানে না, আমার এবং আমার মতো আরও কত কোটি মানুষের কত বছরের অপেক্ষা শেষ হলো, যেদিন তার ঐ হাত ধরেই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয় করল! আজকে সে ইন্টারভিউয়ের মাঝেই একবার ট্রাউজার উঠিয়ে দেখাল, পায়ের ঠিক সেই জায়গায় একটি ট্যাটু করিয়েছে, বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ বাঁশির ১৮ সেকেন্ড আগে কোলো মুয়ানির শটটি আটকিয়ে দিয়েছিল যে জায়গা দিয়ে। এক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো, আসলে বিশ্বকাপটাতো ওখানেই জিতে নিয়েছে।’
নিজের দুই সন্তান যে মার্টিনেজের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষায় ছিলো সেটি জানিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আজকে আসলে বেশি ভালো লাগছে আমার সন্তানদের জন্য। যখন বললাম, ‘এমি আসছে, তোমাদের কি দেখা করার ইচ্ছা আছে?’ ওরা লাফাচ্ছিল। সবশেষ দুটি দিন ওরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছিল না এমিকে দেখবে বলে। আজকে এমির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বললাম, ‘বাচ্চারা তোমার অটোগ্রাফ নিতে চায়।’ সে এত আন্তরিকতা দেখাল, এক কথায় অসাধারণ। এমনকি সে ছবিও তুলে দিল ওদের সঙ্গে। এখন তারা মহাখুশি, আর ওদের খুশিতে আমিও এখন মহাখুশি।’
সবশেষ বাংলাদেশও একদিন বিশ্বকাপ ফুটবলে জায়গা করে নেবে এমন আশার কথা জানিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘এমি, আপনাকে স্বাগত এই বাংলার মাটিতে। এখানে আপনাদের অগুনিত ভক্ত আছে, যুগ যুগ ধরে। আশা করি, আপনারও ভালো লাগছে এই মাটিতে পা রেখে। পাশাপাশি এটাও ভাবি, সত্যি বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ ফুটবলে কোয়ালিফাই করবে আর আমরা আমাদের পতাকা নিয়ে মিছিল করব, ইনশাল্লাহ। অনেকের কাছে এখন এটা অবাস্তব মনে হতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, কাজটা কঠিন, খুব কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। স্বপ্ন পূরণের সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি, ইনশাল্লাহ।’
নেক্সটভেঞ্চারের অফিস পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন মার্টিনেজ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কোভিড টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে। সেজন্যই সময়সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানা যায়।