পর্ব-১১
ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা মই। শূন্য মইয়ে উপরের সিঁড়িতে একটা দরজা। তুয়ার কাছে সব কিছু অনেক কঠিন মনে হলো। তুয়া নিরাশ হয়ে বলে,
“রূপ রেখা, রূপ রেখা
আমি ভাই হেথা একা
আছে ছাদে একটা মই
কিন্তু উঠার পথ কই?”
রূপ রেখা কানের কাছে ফিস ফিসিয়ে বলে-
“আছে আছে পথ ঐ
তোমায় সাহায্য করবে মই।”
তুয়া প্রাণ পনে বাঁচার চেষ্টা করে। মইটার দিকে তাকিয়ে দেখে মইটা শূন্যে না। নিচের দিকে এক ফালি দড়ি দিয়ে বাঁধা। পরেরগুলো বাঁশের টুকরো কাটানো, তুয়া ওর জামার পকেটেই যাদুর পাথর রেখে দড়ির উপরে পা রাখে। সাথে সাথে অটোমেটিক উপরে ওঠে যায়।
উপরে বড় রুমের ছাদের উপর যেন সভার মতো অনেক জীব বসে আছে। জীবগুলি বসে আছে নানান রংয়ে ঢংয়ে। এরা বিভিন্নভাবে ইশারাতে যেন সবাই ভেংচি কাটে। এই দেশটি তুয়ার পছন্দ হল না। এলো মেলো আওয়াজ আর ভেংচি কাটা কেমন যেন অবাক লাগে। ইতিমধ্যে পূর্বের দেশের কথা মনে হল কতইনা সুন্দর অথচ এই দেশ সুন্দর বলে মনে হল না। কেমন যেন আওয়াজের এক দেশ। চারদিকে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কেমন ভীতিজনক পরিবেশ । জানে না সামনে আসবে কি বেশ। কখন হবে যে ভীতির শেষ।
পর্ব-১২
জীবগুলি কিছুটা ছোট ছোট ডাইনোসোরের মতো। তুয়া ডাইনোসোরকে মোটেই ভয় পায় না। আর তাই জোরে জোরে পা ফেলে সভার মাঝখানে চলে যায়। তুয়াকে মিছে মিছি সবাই ভেংচি কাটে। ওদের সভানেত্রী যেন ভেংচি কেটে কথা বলে-
“তুই কোথাকার মেয়ে
এলি হেথায় মই বেয়ে।
আঁধার এলো আকাশ ছেয়ে
তুই কোথাকার মেয়ে।”
তুয়া আগের ডাইনোসোরের থেকে এদের যেন খুব কঠিন বলে মনে হলো। বলে,
“রূপ রেখার বান্ধবী আমি
এনেছে হেথায় সে
এসেছি মই বেয়ে।”
সভাপতি চেঁচিয়ে উঠে-
“এই সে মেয়ে
এই সে মেয়ে
চলরে তোরা ধেয়ে
চলরে তোরা ধেয়ে
উঠরে গান গেয়ে
উঠরে গান গেয়ে।”
পর্ব-১৩
তুয়া অবাক হয়ে গেল। সবার অনুভূতি বিশ্রী রকম। তবে কি ওরা তুয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিল। কেন কিসের জন্য। তুয়া কিছুই বুঝতে পারে না। সবাই ওকে ধরতে যাচ্ছে। ও পালাচ্ছে। দূরে দূরে। মনে মনে ভাবে এখন যাদুর পাথরটা ঘষা দিবে। কিন্তু রূপ রেখা তাকে পাথর ঘষা দিতে বারণ করেছে। হঠাৎ করে ওদের মধ্যে বড় কয়জন তাকে ঘিরে ধরেছে। হৈ চৈ আওয়াজের মধ্যে অসভ্য জীবগুলি ওকে ঘিরে ধরেছে। অ্যাঁ অ্যাঁ হা হা। বিভিন্নরকম অট্টহাসি আর তার সাথে কাঁশি। এই রকম অদ্ভুত আওয়াজ আর কাঁশির মধ্যে কখনও পড়েনি তুয়া।
ওদের বেশ ভুষা কেমন অদ্ভুত। যেন শান্তশিষ্ট পরিবেশ না। অশোভনীয় আচরণের মধ্যে তুয়া নিজেকে সামলাতে একটু ভয় পেল। কিন্তু বেশি ভয় পাওয়া যাবে না। এদের বুঝানো যাবে না যে এরা এদের ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে। এদের মাঝে সাহসী মেয়ে হিসেবে থাকতে হবে। নইলে এরা মাথার উপর উঠে নাচবে। দূরে দূরে ঘর বাড়ীগুলি কেমন যেন একটু ঘুরে। তুয়া নিজেকে সামলিয়ে নেয়। নিজের মনে অনেক সাহস নিয়ে আসে। তুয়ার জানা আছে এই রকম সময়গুলিতে কি করা যায় আর কি করা যায় না। আর নিজের মনের মাঝে যত রকম সাহস নিয়ে আসে অসীম শক্তি অর্জনের জন্য পরম আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করে। মনে মনে ভাবে আল্লাহ্ রক্ষা করবেন।
পর্ব-১৪
তুয়া সবাইকে সালাম জানায়। বলে,
“আমি তুয়া আমি তুয়া
আপনাদের সালাম জানাই
জানাই আকাশ ছোঁয়া।”
ওদের মাঝ থেকে একজন বলে,
“তুমি আমদের শত্রু
তাইতো করেছি ধাওয়া।
তুমি কি সেই মেয়ে
বাংলা গান গাওয়া।
তুয়া খুশি হয়ে যায়। বলে, আপনি ঠিক ধরেছেন। আমার দেশ বাংলাদেশ। আমি বাংলা গান পছন্দ করি।
তুয়া চিন্তুা করে বলে, কিন্তু আপনার পরিচয় তো জানা হলো না। আমি আপনার পরিচয় জানতে চাই। এতক্ষণে বুড়ো সভাপতি ক্ষমতা দেখিয়ে হো হো হো করে হেসে বলে,
“হো হো হো
আমি মি. ফসিল
সময়কে গুনি তিল তিল।”
তুয়া থামবার পাত্রী নয়। আর তাই সাহস নিয়ে বলে,
“বয়স তোমার কত শুনি
ক্যালকুলেটরে গুনি।”
পর্ব-১৫
মি.ফসিল এতক্ষণে মনে মনে ভাবে তুয়া মেয়েটা সোজা নয়। মি.ফসিলের এ পর্যন্ত কোন শিকার জানতে চায় নাই। মনে মনে বলে, এতোটুক মেয়ে শিকার না হয়ে শিকারি হয়ে এসেছে। সাংঘাতিক সমস্যা করতে পারে। যতই সমস্যা থাকুক একে সাবধানে রাখতে হবে। মি. ফসিল মিসেস সময়কে ডেকে শলা পরামর্শ করেন। মিসেস সময় অথাৎ টাইম বলে, স্যার আমি ওকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইবো। ওপাশ থেকে সৈন্যদের ঘেয়ার মধ্যে থেকে তুয়া বলে উঠে- স্যার আপনার বয়সটা তো বলা হলো না?
মি. ফসিল বলে,
“হে হে হে খুকী
আমার বয়স শোনা ঝুঁকি
হে হে হে খুকী।”
ঐ আকাশে চাঁদের বয়স
যায় না জানা
তেমনি আমার বয়স
জানতে মানা।”
তুয়া যেন জানার জন্য অনেক রকম ঝুকির জন্য প্রস্তুত। আর তাই মি. ফসিলকে বলে,
“মি. ফসিল যদিও তোমার
ফসিলের আছে রেশ,
আমার জানার আগ্রহের
নেই যে শেষ।
তুমি জানাও বেশ বেশ ॥
আমার আগ্রহের নেই শেষ,
আগ্রহের নেই শেষ
তুমি জানাও বেশ বেশ ॥
মি. ফসিল আবার বীর বিক্রমে বলে উঠে-
“হে হে হে খুকী
আমার বয়স শোনার ঝুঁকি
হে হে হে
নামটা আমার ফসিল
সব কিছুতে মারি
ঘুষি ও কিল
তোমার মতো খুকীর মুখে
দিব আমি সিল
এইটাইতো মুশকিল,
তোমার জন্য যা কিছু
যা কিছু আজ ভালো
আমি স্বপ্ন দেখি
তা কালো শুধু কালো।
তোমার জানা বাংলা ভাষা
বাংলা ভাষা
আমার কোন দিনও
মিটবে না আশা।”
পর্ব-১৬
মি. ফসিল মনে মনে দারুন ক্ষেপে যায়। ভাবে এই সাহসী মেয়ে কোথায় থেকে এলো। বলে উঠে-
“ওরে মেয়ে বোকা
নয় তো সোজা পড়া লেখা
জানতে চেয়ো না বয়স বার বার
খুলো পড়ার শুনার দ্বার।
সুন্দর ভাষায় এগিয়ে যাও
সুন্দর ভাষায় গান গাও।”
তুয়া বারে বারে বলে উঠে-
“বাংলা আমার মায়ের ভাষা
লক্ষ জনের লক্ষ আশা
এই ভাষাতে কথা বলি
সহজ সরল আমরা চলি।”
ফসিল বলে উঠে-
“সহজ সরল পথে চলো
বাংলা ভাষার কথা বলো।”
কিন্তু আমি বারবার
উন্মোচণ করি তর্কের ঘার ।
এই মুহুর্তে তুয়ার কাছে সব কিছু কঠিন লাগে।
পর্র্-১৭
মি. ফসিল ক্ষেপে যায় । উঃ আঃ বলে মাথার চুল টানতে থাকে। তুয়া খেয়াল করে মিসেস টাইম যেন একটু একটু তুয়ার পক্ষে। মি. ফসিলের পাশে এগিয়ে যায় বলে,
“ফসিল সাহেব ফসিল সাহেব
আপনি অযথা
কিশোরী মেয়েটির উপর
রেগে যাচ্ছেন সদা।
যেহেতু নামটি তোমার ফসিল
নাম শোনা সবার হাসিল।”
মিসেস টাইমের দিকে মি. ফসিল পিট পিট করে চায়। ফসিল যেন আরো রেগে যায়। বলে,
“মিসেস টাইম
কি বললে তুমি
কেঁপে উঠে ভূমি
রাখো তোমার সহানুভূতি
রাখো ভালবাসা-
বাংলায় ফসিল
সে যেন দূরাশা।”
তুয়া বলে-
“নিরাশ আমি হই নাই স্যার
বাংলা মোর আসে
বার বার।”
পর্ব-১৮
বিজ্ঞানী ফসিল একটু ক্ষেপে যায় বলে, ফসিল উ-হা-
“নামটি মি. ফসিল-
বয়স নয় কোনটি নয় অযুত-
নয় লক্ষ নিযুত
সময় যে বয়”
মিসেস টাইম বলে,
“হ্যাঁ আমি বয়ে যাই
অযুত কোটি লক্ষ নিযুত গাই”
মি. ফসিল বলে-
“বন্ধ কর তোমার গান
শূণ্য করো সময় মান”
মিসেস টাইম বলেন, সব কিছু বন্ধ করলে তো মি. ফসিল, আপনি শূণ্য হয়ে যাবেন।
মি. ফসিল বলে, আ হা
“ভেবোনা আমার জন্য
আমি হবোনা শূণ্য।”
মিসেস টাইম মনে মনে ভাবে মি. বিজ্ঞানী ফসিল একজন অহংকারী রাজা। তার এতো অত্যাচার মিসেস টাইম মানতে রাজি না। পরদেশী এই ছোট মেয়েটিকে এতো অপমান আর উপহাস একদম পছন্দ না। তারা যেন মেয়েটিকে অপমান করে সমস্ত বিশ্বকে অপমান করছে।
পর্ব-১৯
এতক্ষণে তুয়া অনেক কিছু বুঝতে পারে। মনে মনে ভাবে আহা এই লোকের সব বাসিন্দারা বাংলা ভাষাকে ভালবাসে না। যে করেই হোক মায়ের ভাষাকে ভালবাসতে হবে। মনে হয় তুয়া একজন চ্যালেন্জার। আর তাই এই ভাষাকে ভাল না বেসে সবাইকে ভালবাসা না শিখিয়ে কোথাও যাবে না। এই পৃথিবীর মধ্যে তার মায়ের মুখের ভাষা একটা স্থান দখল করে আছে। আর তাই এই ভাষা গান গেয়ে মরবে-
গুনগুনিয়ে গেয়ে ওঠে-
“সালাম সালাম
লক্ষ কোটি বাঙালির প্রাণ
লও সালাম সালাম
লও বাংলা গান।”
মি. ফসিল ক্ষেপে যায় বলে, এই মেয়ে বাংলায় গান গায়। একে শাস্তি দিতে হবে। নিয়ে যাও শাস্তি কক্ষে।
মি. ফসিল ভীষণ ক্ষেপে যায় বলে,
“দাঁত আমার
কড় কড়
বাংলা নিয়ে
তুই মর
তুই মর
দাঁত আমার কড় কড়।”
পর্ব-২০
বাংলা গান গাওয়ার জন্য শাস্তি, তুয়া অবাক হয়ে যায় । এরা হিং ফুং করে নাকি স্বরে কথা বার্তা বলে। আর তুয়া কোন রকমে এদের কথা বার্তা বুঝতে পারে না। এ বড় অন্যায়, নিজের ভাষায় কথা বলতে পারবে না। নিজের জন্য নিজের ভাষায় কথা বলতে প্রাণ দিতে হবে। তবে ওদের কাছে মাথা নত করা যাবে না। পরবর্তী ঘটনার জন্য তুয়া অপেক্ষা করতে থাকে। লোহার একটা বড় ঘরের মাঝে বসে থাকে তুয়া। চার দিকে লোহার দন্ড। প্রতিটি দন্ড দেখতে থাকে। দন্ডটির মধ্যে মধ্যে চার দিকে ফসিলের মুখ ভেসে উঠে সাথে নাকি সুরে কথা বলে-
“তোর অনেক আছে সাহস
তোকে করতে চাই যে বস।”
তুয়া চিৎকার করে বলে উঠে-
“ধন্য আমি ধন্য
মাতৃ ভাষার জন্য।
আমার বাংলা ভাষা ধন্য
ধন্য বাঙালির জন্য।
বিশ্বের কাছে বাঙালি আজ
হয়েছে, হয়েছে যে গণ্য
বাংলা ভাষার জন্য।”
(চলবে)