জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের (চট্টগ্রাম) এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে অনুমতি ছাড়া রাজনৈতিক সভা করার দায়ে ওমানের পুলিশ আটক করেছিল। মাসকাটে বাংলাদেশ দূতাবাসের মধ্যস্থতায় আটকের ১২ ঘণ্টা পর গতকাল বুধবার দুপুরে তিনি মুক্তি পান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাস ও দেশটিতে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
খাদিজাতুল আনোয়ার সনি ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত রফিকুল আনোয়ারের কন্যা এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। ওমানের নিয়ম না মেনে রাজনৈতিক সভা করার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দেশটির পুলিশ তাকে আটক করে। তিনি মুক্ত হলেও কয়েকজন এখনো ওমান পুলিশের কাছে আটক রয়েছেন বলে সূত্রগুলো জানায়।
বিষয়টি নিয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় গ্রেপ্তারের খবর সত্য নয় বলে নিশ্চিত করেন। জানান, গত মঙ্গলবার তিনি একটি পারিবারিক সফরে ওমানে এসেছেন। সঙ্গে মেয়েসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা রয়েছেন। তার আগমন উপলক্ষে সেখানে ওমান আওয়ামী লীগ, ওমান যুবলীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের পক্ষ থেকে একটি সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বিপুলসংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়। তবে এ ধরনের সভা করতে আয়োজকরা আগে অনুমতি নেননি। ফলে পুলিশ গিয়ে সভা বন্ধ করে দেয়। এতে গ্রেপ্তারের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ঢাকা ও মাসকাটের একাধিক সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্যক্তিগত সফরে ওমানের রাজধানী মাসকাট যান খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব আছাদুল হক। এ সময় সেখানে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন দেশটিতে বসবাসরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। ওই রাতেই তারা মাসকাটের বাণিজ্যিক কেন্দ্র রুয়িতে অবস্থিত হোটেল হাফা হাউসে সনির জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করেন। বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি জানার পর তাদের সতর্ক করেছিল। কারণ, এ হোটেলে খাদিজা উঠলেও সংবর্ধনা বা সভা করার কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। ওমানের আইন অনুসারে, সে দেশে বিদেশি নাগরিকদের জন্য পূর্ব ঘোষণা ও অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের রাজনৈতিক সভা বা অনুষ্ঠান করা নিষিদ্ধ।
সূত্র জানায়, সনির সমর্থক ওমান প্রবাসী বাংলাদেশিরা দূতাবাসের সতর্কবার্তা আমলে না নিয়ে মঙ্গলবার রাতেই হাফা হাউসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করছিল। আয়োজক হিসেবে ব্যানারে ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি’ উল্লেখ করা হলেও অনুষ্ঠানে ওমান প্রবাসী আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, চট্টগ্রাম সমিতিসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠান চলাকালে স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে রয়্যাল ওমান পুলিশের সিআইডির একটি দল ওই হোটেল ঘিরে ফেলে। ওমান পুলিশ এমপি সনিসহ মঞ্চে থাকা অন্তত ১৮ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। উপস্থিত সব বাংলাদেশির নাম, পরিচয় ও রেসিডেন্ট কার্ডের তথ্য রেকর্ড করা হয়। অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট ও ক্রেস্ট নিয়ে যায় তারা। এ ছাড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন ও স্পন্সরদের ব্যাপারেও তথ্য নেয় পুলিশ। খবর পেয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদের পর দূতাবাসের মধ্যস্থতায় গতকাল বুধবার দুপুরে সংসদ সদস্য সনি এবং ওমানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মুক্তি দেওয়া হয়। এজন্য তাদের মুচলেকাও দিতে হয়েছে বলে জানা গেছে।
ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, সংসদ সদস্য ব্যক্তিগত সফরে মাসকাটে আসেন। তার ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা ছিল না। তবু দূতাবাস তাকে সৌজন্য দেখিয়ে স্বাগত জানিয়েছে। এসেই তিনি বাংলাদেশিদের সংবর্ধনা নিতে রাজি হয়ে যান। এটা জানতে পেরে দূতাবাস থেকে তাকে ও আয়োজকদের সতর্কও করা হয়। এ দেশের নিয়মের কথা জানানো হয়। ঘরোয়া আয়োজনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাদের আরও বলা হয়, ওমান সরকার সবসময় বলে তাদের দেশের মাটি কোনো দেশের রাজনীতির জন্য নয়। এ ব্যাপারে তারা কড়া নিয়মকানুন মেনে চলে। তবু তারা নিয়ম না মেনেই অনুষ্ঠানটি করেছিল।
কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে আগত চট্টগ্রামের কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশিও সনির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তারাও এ অনুষ্ঠানে ছিলেন। ওমানে বসবাসকারীরা মুক্ত হলেও তাদের মধ্যে চার-পাঁচজন এখনো আটক রয়েছেন।
এদিকে গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তার কার্যালয়ে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনির ওমানে আটক বিষয়ে কোনো খবর তিনি জানেন না। মন্ত্রী বলেন, তিনি যদি সেখানে গিয়ে থাকেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে গিয়েছেন।