রাতে চাঁদ এলে/লোকগুলো বদলে যায়/যেন সারি সারি মুখোশ দুলছে কোনো/অদৃশ্য সুতা থেকে/আর হাওয়া ওঠে/ধাতুময় শহরের কোনো সংগোপন ফাটল/কিংবা হাঁ-খোলা তামাটে মুখ থেকে/হাওয়া ওঠে, হাওয়া ওঠে/সমস্ত শহরের মিনারচূড়োয় হাওয়া ওঠে/(ওড়ে কত শুকনো কাগজের/মতো স্বগতোক্তি/খড়কুটোর মতো ছোট ছোট স্বর,/
নৈরাশ্যের কালো ফুল।)(ইন্দ্রজাল)
শহীদ কাদরী ছিলেন নাগরিক কবি। তার কবিতায় শহুরে প্রতিচ্ছবি দেদীপ্যমান। বাংলা সাহিত্যের এই শক্তিমান কবির ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
শহীদ কাদরী দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসজীবন কাটিয়েছেন। ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট নিউ ইয়র্কের নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কবির মরদেহ দেশে আনা হয়েছিলো। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতির পক্ষ থেকে শেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর কবিকে ঢাকায় দাফন করা হয়।
তার জন্ম মাসও ছিলো আগস্ট। তিনি ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট ভারতের কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। দশ বছর বয়সে ১৯৫২ সালে শহীদ কাদরী ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৮০ সালের দিকে তিনি প্রবাসজীবন কাটাতে শুরু করেন। চলে যান জার্মানিতে। সেখানে বেশ কয়েক বছর ছিলেন। তারপর যুক্তরাজ্যের লন্ডনে এবং পরে যুক্তরাষ্টে প্রবাস জীবন কাটান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক বছরসহ জীবনের প্রায় তিন দশক তিনি প্রবাসে বসবাস করেন। প্রবাস জীবনেও তিনি লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন।
তার চারটি কাব্যগ্রন্থ-‘উত্তরাধিকার’, ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’, ‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’ ও ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’।
১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান শহীদ কাদরী। ২০১১ সালে তাকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক দেওয়া হয়।
বাংলা কবিতার শক্তিশালী কবি শহীদ কাদরী। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও তিরিশের পঞ্চপাণ্ডবের হাত বেয়ে এবং বিভাগোত্তর মধ্য চল্লিশের দশকে ঢাকাকেন্দ্রিক কবিতার যে চর্চা শুরু হয়, তারই পরবর্তী দশকের কাব্য-তুর্কিদের অন্যতম একজন তিনি। অর্থাৎ ১৯৫২ সালের মহান ভাষা-আন্দোলন ও মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে কবিতার যে বাঁক বদল ঘটে, শহীদ কাদরী ছিলেন সেই বাঁকেরই একজন। আধুনিক নাগরিক জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রেম, স্বদেশচেতনার পাশাপাশি বিশ্ব-নাগরিক বোধের সম্মিলন ঘটে তার কবিতায়।
-শাহ মতিন টিপু