শাহীন রহমান: হিমালয় নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে বরফ রাজ্যের উঁচু উঁচু সব পর্বতের কথা। এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে, অন্নপূর্ণাসহ আরো কত জানা-অজানা চূড়া।
এমন কি এই হিমালয়েই রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান। প্রতি বছর হিমালয়ের সৌন্দর্যের টানে ছুটে যায় হাজারো ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ পর্বত চূড়াগুলোর নেশায় পড়ে যান। এ এক প্রবল নেশা, যা মৃত্যুকেও ভয় পায় না।
হিমালয়ের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এই চুড়াগুলো স্পর্শ করার নেশাই মানুষগুলোকে পর্বতারোহী করে তুলে। তেমনই এক তরুণ পর্বতারোহী চলনবিলের সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। পাবনার চাটমোহর পৌর সদরে বেড়ে ওঠা এই তরুণ পেশায় একজন প্রকৌশলী হলেও পর্বতারোহণে তার রয়েছে বেশ কিছু সফলতা।
হিমালয়ের চার হাজার, পাঁচ হাজার এবং ছয় হাজার মিটার উচ্চতায় নিজ মাতৃভূমিকে নিয়ে গেছেন। তৌকির গতবছর হিমালয়ের এভারেস্ট-খুম্বু রিজিওনের ৬ হাজার ১৬৫ মিটার আইল্যান্ড পিক সফল অভিযানের মাধ্যমে ছয় হাজার মিটার পর্বতারোহী ক্লাবের সদস্য হন। তার এই অভিযানের সহযোগিতায় ছিলো রোপ ফোর, মিশন হিমালয়া, আর পি এস এফ।
স্বপ্নবাজ এই তরুণ পর্বতারোহীর এবারের অর্জন আরো বড়। গত ১৯ এবং ২১ অক্টোবর তিনি দু’টি পর্বত চূড়া আরোহণ করেন তিনি। ১৯ অক্টোবর বিকেল ৫টা ১৬ মিনিটে খুম্বু রিজিওনের ৫ হাজার ৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ২১ অক্টোবর সকাল ৮টা ২১ মিনিটে ৬ হাজার ১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চুড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন তৌকির।
লবুচে হাই ক্যাম্প থেকে সামিট শেষ করে আবার হাই ক্যাম্পে ফিরতে তিনি মাত্র ১০ ঘণ্টা ৫০ মিনিট সময় নেন। এবছর তার ঝুলিতে আরো একটি অর্জন যুক্ত হয়েছে। তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে কমার্শিয়াল এক্সপেডিশনের দলনেতা হয়ে একটি সফল ৬ হাজার মিটার অভিযান সম্পন্ন করেছেন।
এই অর্জন নিয়ে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তৌকির বলেন, ‘হিমালয়ের সবগুলো পর্বত অভিযান-ই কষ্টসাধ্য। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা এবং ঝুঁকিপূর্ণ ক্লাইম্বি শেষে যখন নিজ দেশের লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছি, তখন সব কষ্ট নিমিষেই আনন্দে রুপান্তরিত হয়ে গেছে।’
তরুণ এই পর্বতারোহীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আগামী বছর হিমালয়ের অন্যতম কঠিন পর্বত মাউন্ট আমা দাবালাম অভিযানে যাবেন। এর জন্য প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই অভিযান আরো সহজ হবে।’
তৌকির আরো জানান, ২০২৫ সালে তার মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে।
স্বপ্নবাজ এই তরুণ বর্তমানে নেপালে অবস্থান করছেন আরো একটি অভিযানের জন্য। অভিযান শেষে আগামী ৯ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, আহসানুজ্জামান তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতির ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তৌকির। তিনি চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন।