জাহিদুল হক চন্দন: মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মা নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষ রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপের আতঙ্কে রয়েছেন। একের পর এক রাসেল ভাইপারের দেখা মিলছে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। এতে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত ১০ নভেম্বর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বকচর মাঠের পাশে একটি রাসেল ভাইপার সাপ মেরে ফেলেন তারা। এর আগে উপজেলা সদরের বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পদ্মাপাড়ে একটি রাসেল ভাইপার ধরে নিয়ে আসেন এক বাল্কহেড চালক। এ বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলার চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়নে তিনজনকে রাসেল ভাইপার দংশন করে। তাদের একজন ২ মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর একজন এখনো ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন।
এ ছাড়া চরাঞ্চলের লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে ফসলের ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে সাপের দংশনে এক কৃষক মারা যান। অনেকের ধারণা রাসেল ভাইপার সাপের দংশনে তার মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে উপজেলার সুতালড়ি ইউনিয়নের হরিনাঘাট সংলগ্ন এলাকায় এক কৃষক ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে রাসেল ভাইপার দেখে মেরে ফেলেন।
উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাহিরচর এলাকার বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, গত ১০ নভেম্বর বকচর গ্রামে বকচর মাঠ সংলগ্ন পদ্মাপাড়ে একটি সাপ দেখে আমরা তিনজন সাপটি মেরে ফেলেছি। পরে দেখি রাসেল ভাইপার সাপ।
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম জানান, ৯ নভেম্বর বকচরে আরেকটি রাসেল ভাইপার সাপ দেখেছি। পরে সাপটি চলে গেছে।
বয়ড়া ইউনিয়নের খালপাড় বয়ড়া গ্রামের পদ্মাপাড়ে বালু মহালে কাজ করেন রকি খান। তিনি জানান, সম্প্রতি খালপাড় বয়ড়া পদ্মাপাড়ে এক বাল্কহেড চালক বালতিতে করে একটি সাপ ধরে আনে। আমি সাপটির ছবি তুলে রাখি। পরে ছবি দেখে একজন জানান, এটা রাসেল ভাইপার সাপ।
উপজেলার চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নে বিশেষ করে ফরিদপুর জেলা সংলগ্ন পদ্মার চর এলাকায় সম্প্রতি তিনজনকে রাসেল ভাইপার সাপে দংশন করে। তারা ফরিদপুরে চিকিৎসা নিয়েছেন। একজন কিছুটা সুস্থ হলেও এখনো শঙ্কামুক্ত নন। বসন্তপুর এলাকায় একজন ও এনায়েতপুর এলাকায় আব্দুল্লাহ নামের এক যুবককে রাসেল ভাইপার সাপ দংশন করে। একজনের চিকিৎসা এখনো চলছে। একজনের দংশনের জায়গা পচে গেছে। আমার চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়ন ছাড়াও সুতালড়ি ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পদ্মা পাড়ের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে।
রাসেল ভাইপার সম্পর্কে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আল মামুন বলেন, বিষধর প্রজাতির রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপ নিচু জমির ঘাসযুক্ত উন্মুক্ত পরিবেশে এবং কিছুটা শুষ্ক পরিবেশে বাস করে। অন্যান্য সাপ সাধারণত ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। তবে রাসেল ভাইপার সাপ ডিম পাড়ার পরিবর্তে সরাসরি বাচ্চা দেয়। স্ত্রী সাপ গর্ভধারণ শেষে ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়। তবে কোনো কোনো রাসেল ভাইপার সাপের ৭৫টি পর্যন্ত বাচ্চা দেওয়ার রেকর্ড আছে। পৃথিবীতে প্রতিবছর যত মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়, তার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ এই রাসেল ভাইপারের কামড়ে মারা যায়।
তিনি আরো বলেন, রাসেল ভাইপারের বিষ হেমোটক্সিন, যার কারণে কামড় দিলে মানুষের মাংস পচে যায়। রাসেল ভাইপার সাপ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দুর্লভ প্রজাতির একটি সাপ। এটি পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ জেলার গ্রাম অঞ্চলে ভয়ের অন্যতম কারণ। আগে শুধু বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে এ সাপ পাওয়া গেলেও বর্তমানে এরা পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলা ও চরগুলোতেও বিস্তার লাভ করেছে। সাপটির কবল থেকে বাঁচতে সচেতনতাই কার্যকর পথ।