ব্যস্ত সময় পার করছেন বরগুনা উপকূলের শুঁটকি পল্লীর শ্রমিকরা

ইফতেখার শাহীন, বরগুনা: উপকূলীয় জেলা বরগুনার বিভিন্ন শুঁটকি পল্লীগুলোতে চলছে শুটকি উৎপাদন। শীতের এ মৌসূমে এই এলাকায় প্রচুর পরিমানে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে শুঁটকি পল্লীর শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর নদীর মোহনায় জেলার তালতলী উপজেলার আশার চর, নিদ্রা, ফকিরহাট, নিশানবাড়িয়া এবং পাথরঘাটা উপজেলার খেয়াঘাটে পুরো দমে চলছে দেশি মাছের শুঁটকি তৈরীর কাজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, শুঁটকি শুকানোর জন্য বিশাল মাঠ জুড়ে জেলেরা মাচা তৈরী করে নারী-পুরুষ সবাই মিলে দিন রাত কাজ করছেন। আর এ কাজের সঙ্গে প্রায় ২০-২৫ হাজার জেলে ও শ্রমিক যুক্ত রয়েছেন।

জানা যায়, নভেম্বর থেকে মার্চ এপ্রিল পর্যন্ত শুঁটকি উৎপাদনের উপযুক্ত মৌসুম। এ সময় নদী ও সমুদ্র থেকে জেলেরা টনকে টন বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য আহরন করে রোদের তাপে সেগুলো শুঁটকিতে পরিনত করেন।

প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে জেলেরা শুঁটকি ব্যবসার জন্য এই এলাকায় আসেন। শুঁটকির জন্য প্রসিদ্ধ মাছ হলো লইট্যা, ছুরি, ফাইস্যা, পোয়া, রুপচাঁদা, লাক্ষা, চিংড়িসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ। এ অঞ্চলের শুঁটকি চট্রগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়। শুঁটকি প্রস্তুত করতে কীটনাশক বা অতিরিক্ত লবন দেয়া হয়না বলে এখানকার শুঁটকির বেশ চাহিদা রয়েছে।

আড়ৎদাররা জানান, নদি, সাগর থেকে কাঁচা মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি পল্লীতে নিয়ে এসে নারী শ্রমিকরা তা পরিস্কার করেন। এরপর পরিস্কার পানিতে মাছগুলো ধুয়ে মাচায় শুকাতে দেয়া হয়। তিন চার দিনের রোদে তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। প্রতিটি শুঁটকি পল্লী থেকে সপ্তাহে ১০০-১৫০ টন মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়।

শুঁটকি উৎপাদনকারী শ্রমিকরা জানান, তারা নানামুখি সমস্যায় জর্জরিত। পুঁজির অভাব, দাদনদারের শোষন, সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, শুঁটকির ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব।

অন্যদিকে শুঁটকি উৎপাদনের জন্য নেই কোন সরকারী নীতিমালা, মনিটরিং, প্রশিক্ষন ও আধুনিক ব্যবস্থা। তাই দিন দিন এ শিল্পের উন্নতি হলেও আধুনিক এবং মানসম্মত পদ্ধতি কোন উৎপাদকেরা গ্রহন করছেননা। শুঁটকি শিল্পে বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও এর সাথে জড়িত বিশাল জনগোষ্ঠি মনে করেন যে, এ মৌসুম তাদের জন্য আশির্বাদ স্বরুপ।

জানতে চাইলে, বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, বরগুনার বিভিন্ন চরে শুঁটকি পল্লীতে কয়েক হাজার দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। জেলে ও শ্রমিক শুঁটকি উৎপাদনকারী বিশাল জনগোষ্ঠি তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন এই শুঁটকি উৎপাদনে। অতএব, জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা যাতে নির্বিঘ্ন কাজ করে যেতে পারেন এজন্য তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts