রাজধানী ঢাকার বস্তিতে বসবাসরত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের চোখের সমস্যার মাত্রা এবং সে সমস্যা মোকাবিলার উপায় কী তা নির্ধারণের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো তাদের চক্ষু পরীক্ষা (আইস্ক্রিনিং) শুরু হয়েছে।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) স্ক্রিনিংয়ের প্রথম দিন কড়াইল বস্তিতে প্রায় ৫০ শিশুর চোখ পরীক্ষা করা হয়। সেখানকার ব্র্যাক ম্যাটারনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত স্ক্রিনিংয়ের নেতৃত্ব দেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আশিকুর রহমান আকন্দ।
অরবিস ইন্টারন্যাশনাল, ন্যাশনাল আই কেয়ার এবং ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগে এই চক্ষু পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
আয়োজকরা বলেছেন, তারা রাজধানীর অন্যান্য বস্তিতে বসবাসকারী শিশুদের মধ্যেও একই ধরনের স্ক্রিনিং কার্যক্রম চালাবেন। তারা জানান, স্ক্রিনিংয়ে যেসব শিশুর দৃষ্টি সমস্যা শনাক্ত করা হচ্ছে চিকিৎসার জন্য তাদেরকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
বাংলাদেশে অরবিস ইন্টারন্যাশনাল-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ বলেন, এখনও বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি এমন শিশুদের মধ্যে দৃষ্টি সমস্যার মাত্রা বোঝা এবং সেগুলোর সমাধানের জন্য কৌশল নির্ধারণের লক্ষ্যে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুদের স্বাভাবিক জীবন যাপন নিশ্চিত করা যায়।
তিনি বলেন, স্কুলে যেতে শুরু করেনি এমন শিশুদের চোখের সমস্যা বিভিন্ন কারণে, বিশেষ করে সমস্যা শনাক্তকরণে অসুবিধার কারণে সঠিকভাবে মোকাবিলা করা যায়নি।
ডা. মুনির বলেন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের চোখের সমস্যা শনাক্ত করা অন্য শিশুদের তুলনায় বেশি কঠিন। কারণ তারা ওই বয়সে স্কুলে যাওয়া শুরু করে না। শিশুরা যখন স্কুলে যায়, তখন শিক্ষক বা অভিভাবকরা সহজেই বুঝতে পারেন যে, তারা কোনও দৃষ্টি সমস্যায় ভুগছেন কিনা।
তিনি জানান, এই স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের একটি প্রধান লক্ষ্য হলো শিশুদের মধ্যে রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি (আরওপি), যেটা বিশ্বব্যাপী শিশু অন্ধত্বের একটি প্রধান কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য কারণ, চিহ্নিত করা এবং এ ব্যাপারে মায়েদেরকে সচেতন করা।
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, অপরিণত শিশুদের আরওপি হতে পারে, যারা ৩৫ সপ্তাহের গর্ভকালীন সময়ের আগে জন্ম নেয় এবং জন্মের সময় যাদের ওজন ২ কিলোগ্রামের কম হয়। তাদের মতে, জন্মের চার সপ্তাহের মধ্যে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা না হলে আরওপি অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
ডা. আশিকুর রহমান বলেন, এই স্কিনিং কার্যক্রম অভিভাবকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছে এবং অনেক অভিভাবক তাদের শিশুদের চোখ পরীক্ষা করতে কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. এসএমএ মাহবুব মুন্না এবং ব্র্যাক আই কেয়ার কর্মসূচির ম্যানেজার ডা. রাহানুমা অঞ্জলাও স্ক্রিনিংয়ে অংশ নেন।
ডা. রাহনুমা বলেন, চোখের স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম থেকে যেসব শিশুকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে তাদেরকে যেন সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং চিকিৎসা করানো হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য শিশুদের ট্র্যাক করবেন তারা।
স্ক্রিনিং কার্যক্রমে আরও উপস্থিত ছিলেন অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর ইকবাল হোসেন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার একেএম নুরুল কবির ও মহসিনা আফরোজ এবং কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্পেশালিস্ট সাহস মোস্তাফিজ।
এসআর/ঢাকা