মানিকগঞ্জের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের ‘ডায়াগনস্টিক বাণিজ্য’

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জেলার সরকারি চিকিৎসক। আবার নাক, কান, গলার রোগী দেখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালে বসে রোগীর সরকারি প্রেসক্রিপশনে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে পছন্দের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বলেন।

ডা. মো. আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রোগীদের। রোগীরা বলছেন, ডা. আলমগীর কারো কারো প্রেসক্রিপশনে টাকার অংকও লিখে দিচ্ছেন। কোথায় কার কাছে যেতে হবে তাও বলে দিচ্ছেন। তার মন মতো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করালে রোগীদের চিকিৎসা দেন না, করেন খারাপ আচরণ।

কেন তিনি এমন করেন, কেন তার কাছে আসা রোগীদের অহেতুক পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান। খোঁজ নিলে একাধিক সূত্র থেকেই বলা হয়, এর নেপথ্যে রয়েছে কমিশন বাণিজ্য। অনুসন্ধান বলছে, বিশেষজ্ঞ না হয়েও বিশেষজ্ঞ লিখে একটি বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানেও নিয়মিত রোগী দেখেন তিনি। তাই সরকারি সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তার কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন এমন একাধিক রোগী বলেন, সরকারি হাসপাতালে আসার পরেও কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা এখানে হয় না। ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে পরীক্ষা নিরীক্ষা লিখে দেন। সেই সাথে বলেও দেন কোন ডায়গনস্টিক সেন্টারে যেতে হবে। কেউ না চিনলে পুরো ঠিকানা, রুম নাম্বারও বলে দেন। কত টাকা দিতে হবে তাও বলে দেন।

এ বিষয়ে চিকিৎসক ডা. মো. আলমগীর হোসেন প্রেসক্রিপশনে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি অনেক আগের। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে মীমাংসা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ না হয়েও বিশেষজ্ঞ লিখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রোগী দেখার বিষয়ে অস্বীকার করেন। পরে তার বিশেষজ্ঞ লেখা স্বম্বলিত স্বাক্ষর করা প্রেসক্রিপশন দেখালে তিনি বলেন, এটি ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভুলে ছেপেছেন। আর আমি বিষয়টি খেয়াল করিনি।

এ বিষয়ে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজে এন্ড হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সৌমেন চৌধুরী বলেন, সরকারি প্রেসক্রিপশনে এভাবে লেখা ঠিক নয়। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রমাণ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিষয়টিতে অনেকেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে বলছেন, মন্ত্রীর নাকের ডগার হাসপাতালেই যদি এসব ঘটে তবে সারাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার অবস্থা সহজেই অনুমেয়।

জেডএইচসি/ মানিকগঞ্জ

Print Friendly

Related Posts