মো. মাসুম বিল্লাহ বিন রেজা ॥ তারাবীহ শব্দটি একটি আরবি পরিভাষা। এটি বহুবচন, একবচনে তারবীহাতুন। এর আভিধানিক অর্থ হলো, আরাম করা, বিশ্রাম করা, ধীরে ধীরে স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করা ইত্যাদি। তারাবীহ নামাজের ফাঁকে ফাঁকে যেহেতু কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নেয়া হয় এবং নামাজের সময় প্রলম্বিত করে ইবাদতের মাত্রা বৃদ্ধি করা হয় এজন্য একে তারাবীহ বলা হয়ে থাকে। হাদীস শরীফে একে সালাতুল লাইল, কিয়ামে রমাযান, কিয়ামুল লাইল ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়েছে।
রমজান মাসে দিনে রোজার পাশাপাশি রাতে ইবাদাত বন্দেগীর ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন— কিয়ামুল লাইল হিসেবে তারাবীহ নামায। কিয়ামুল লাইল বলতে নফল ও সুন্নাত নামাজ বুঝানো হয়। এজন্য তাহাজ্জুদ নামাজও এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এ সম্পর্কে গুরুত্বারোপ করে রাসূল (স) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা রোজা ফরজ করেছেন এবং রাতে কিয়াম করাকে (নামাজে দাঁড়ানকে) নফল করেছেন।’ (বায়হাকী)
রমজানের রাতে ঈমান ও সওয়াবের আশায় নামাজ আদায় করলে অতীত ও ভবিষ্যতের সব গুণাহ মাফ হয়ে যায়। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে রয়েছে, যে ‘রমজানের রাতে ঈমান (বিশ্বাস) ও সওয়াবের আশায় (সতর্কতাসহ) নামাজ আদায় করবে, তাঁর পূর্বের সব গুণাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারী) অপর বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ তাঁর অতীত ও ভবিষ্যতের সব গুণাহ মাফ করে দিবেন। (ঐ) ভবিষ্যতের সব গুণাহ মাফ করার অর্থ হলো, আল্লাহ তাকে গুণাহ থেকে বাঁচান ও গুণাহের কাজ হতে দূরে রাখেন।
রাসূল (স) বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য রমজানের রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি রাতের নামাজকে সুন্নাত করেছি। যে রমজান মাসে ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে রোজা পালন করে ও রাতের নামাজ আদায় করে তার অতীতের সব গুণাহ মাফ করে দেয়া হয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সে নবজাত শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে যায়।’ (নাসায়ী)
পবিত্র কুরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘(প্রকৃত মুমিন তারা) যারা রাতকে তাদের রবের উদ্দেশ্যে সিজদা ও নামাজে কাটিয়ে দেয়।’ (সূরাহ ফুরকান-৬৪) আল্লাহ তা‘আলা আলোচ্য আয়াতে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারীদের প্রশংসা করেছেন।
আয়েশা (রাযি) বলেন, ‘তোমরা রাতের নামাজ ত্যাগ করো না। কেননা রাসূল (স) কখনও রাতের নামাজ ত্যাগ করতেন না। এমনকি তিনি অসুস্থ হলে অথবা দুর্বলতা অনুভব করলে বসে বসে হলেও নামাজ আদায় করতেন।’ (আবু দাউদ) মাওঃ আশরাফ আলী থানভী (র) বলেন, রমজানের সাথে তারাবীহ নামাজকে যুক্ত করায় বুঝা গেলো, রমজানের সাথে তারাবীহের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। যা অন্য ইবাদতে নেই। রাসূল (স) তারাবীহ নামাজ পড়ার জন্য কঠোরভাবে হুকুম দেননি। তবে এর মর্যাদা ও ফযিলত বর্ণনা করেছেন। তিনি তারাবীহ নামাজ মাত্র কয়েকদিন পড়েছেন। তারপর পড়েননি। কারণ এ নামাজ ফরজ হওয়ার আশঙ্কা ছিল।’ এ নামাজ সুন্নাত। ঈশার নামাযের পরই তারাবীহ নামাজের সময়। রাসূল (স) এ সময় তারাবীহের নামাজ আদায় করেছেন। (বুখারী)
রাসূল (স) এর যুগে জামা‘আতে তারাবীহের প্রচলন ছিল না। হযরত উমার (রা) এর সময় থেকে জামা‘আতে তারাবীহের প্রচলন হয়। উমার (রা) উবাই ইবন কাবকে (রা) ইমাম নিযুক্ত করেন। নবীর (সা) ইন্তেকালের পর এবং আবু বকরের (রা) ইন্তেকালের পর উমার (রা) যখন খলিফা হন তখন তারাবীহের জামা‘আতগুলোকে এক বিরাট জামা‘আতে পরিণত করেন। তারাবীহের নামাজ জামা‘আতে আদায় করা সুন্নাত। তারাবীহের নামাজে পবিত্র কুরআন খতম করা নবীর (স) সুন্নত নয়। তবে নফল নামাজে বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা উত্তম। মেয়েরা তারাবীহের নামাজ আদায় করবেন।
হযরত আরফাজাহ বলেন, আলী (রা) লোকদেরকে রমাজান মাসে রাতে নামাজের হুকুম দিতেন এবং পুরুষদের জন্য একজন ইমাম ও মহিলাদের জন্য একজন ইমাম নিযুক্ত করতেন। আমি মহিলাদের ইমাম হতাম।
লেখক: প্রভাষক, শাহ মখদুম বিশ্ববিদ্যালয়