জাতীয় সংসদ ভবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব সংসদ ভবন আছে। বাংলাদেশের আইন সভার নাম হচ্ছে জাতীয় সংসদ। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা এখানেই বসে দেশের নীতি নির্ধারণ করেন, আইন পাস করেন।

সংসদ ভবনের স্থপতি লুই আই কান (এস্তোনীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক)। সহকারী স্থপতি : মাজহারুল ইসলাম । ছাদ ও দেয়ালের স্ট্রাকচারাল ডিজাইনার: হ্যারি ব্লুম। নির্মাণ শুরু ১৯৬১, সম্পন্ন ১৯৮২। কনক্রিটের, ইটের তৈরি। ২০৮ একর জমির ওপর নির্মিত এই সংসদ ভবনটি তিনতলাবিশিষ্ট। দরজা: ১৬৩৫টি, জানালা:  ৩৩৫টি, সিঁড়ি: ৫০টি, টয়লেট: ৩৪০টি, লিফট: ১৮টি। এর উচ্চতা হচ্ছে ১৫৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। নির্মাণ কাজের ব্যয় হয়েছিল ১৯৭ কোটি টাকা। ভবন উদ্বোধন করা হয় ২৮ জানুয়ারি ১৯৮২ সালে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার এর উদ্বোধন করেন।

সাংবাদিকদের জন্য আসন সংখ্যা: ৪০টি। দর্শকদের জন্য আসন সংখ্যা: ৪৩০টি। পার্টি কক্ষ ৩টিতে মোট আসন সংখ্যা: ১৫ হাজার ৪৪০টি। সর্বমোট আসন সংখ্যা: ১৬ হাজার ৩৬১টি।

ইংরেজি নাম হাউস অব দ্য নেশন অব বাংলাদেশ। জাতীয় সংসদ ভবনের প্রতীক হচ্ছে শাপলাফুল। এটি এক কক্ষবিশিষ্ট। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের মোট সদস্যসংখ্যা হচ্ছে ৩৫০টি। বর্তমানে সংসদের নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৫০টি এবং ১৯৭৩ সালে নারীদের সংরক্ষিত আসন ছিল ১৫টিজাতীয় সংসদে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সদস্যসংখ্যা হচ্ছে ৩০০টি। জাতীয় সংসদে পূর্বে অধিবেশন বসত তেজগাঁওস্থ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সংসদ নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোনো বিদেশি প্রথম আমাদের জাতীয় সংসদে ভাষণ দেন যুগোস্লাভিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মার্শাল জোসেফ টিটো৩১ জানুয়ারি ১৯৭৪। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ৬০ জনকে নিয়ে কোরাম গঠিত হয়ে থাকে। গণভবন ও বঙ্গভবন হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের বাসভবন।

ঢাকার শের-এ-বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সকে ঘিরে রয়েছে চারটি প্রধান সড়ক। উত্তর দিকে লেক রোড, পূর্ব দিকে রোকেয়া সরণী, দক্ষিণ দিকে মানিক মিয়া এভিনিউ এবং পশ্চিম দিকে মিরপুর রোড।

মূল ভবনটি কমপ্লেক্সের কেন্দ্রে অবস্থিত। এমপি হোস্টেল এবং জরুরী কাজে ব্যবহৃত ভবনসমূহ কমপ্লেক্সের বহির্ভাগে অবস্থিত। মূল ভবন ঘিরে অবস্থিত কৃত্রিম হ্রদ, দুটি বাগান এর মাঝের শূণ্যস্থান পূরণ করেছে। মূল ভবনটি (সংসদ ভবন) মূলতঃ তিন ভাগে বিভক্ত: মেইন প্লাজা- ৮২৩,০০০ বর্গফুট, সাউথ প্লাজা- ২২৩,০০০ বর্গফুট, প্রেসিডেন্সিয়াল প্লাজা- ৬৫,০০০ বর্গফুট।

মেইন প্লাজা : মেইন প্লাজার মূল অংশটি হচ্ছে সংসদ অধিবেশন কক্ষ। এখানে একই সময়ে ৩৫৪ জন সদস্যের সংস্থান রাখা হয়েছে। ভিআইপিদের জন্য দুইটি পোডিয়াম এবং দুইটি গ্যালারি রয়েছে। পরাবৃত্তাকার ছাদসম্পন্ন অধিবেশন কক্ষটির উচ্চতা ১১৭ ফুট। ছাদটি স্বচ্ছভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে দিনের আলো এতে প্রবেশ করতে পারে।

উপরের অংশে অভ্যাগত এবং গণমাধ্যমের জন্য গ্যালারীর ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও এর বিভিন্ন অংশে রয়েছে: প্রথম তলায় একটি গ্রন্থাগার, তৃতীয় তলায় সংসদ সদস্যদের জন্য লাউঞ্জ এবং উপর তলায় মিলনায়তন।

সাউথ প্লাজা : দক্ষিণ দিকে মানিক মিয়া এভিনিউর অভিমুখে সংসদ ভবনের সাউথ প্লাজা অবস্থিত। এর ক্রমোচ্চ (Gradually rises) ২০’ উচ্চতার ভবন কাঠামো সৌন্দর্য বর্ধনের পাশপাশি সংসদ ভবনের মূল প্রবেশ পথ (অধিবেশন চলাকালে) হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এখানে আরো রয়েছে: নিয়ন্ত্রিত প্রবেশপথ, ড্রাইভওয়ে, প্রধান যন্ত্রপ্রকৌশল কক্ষ, গাড়ি পার্কিং-এর জন্য বিস্তৃত পরিসর, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, রক্ষনাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলীদের অফিসকক্ষ, উপকরণ সরঞ্জাম রাখার স্থান এবং মূল ভবনে যাওয়ার জন্য উন্মুক্ত চত্বর।

প্রেসিডেন্সিয়াল প্লাজা : উত্তর দিকে অবস্থিত প্রেসিডেন্সিয়াল প্লাজা সম্মুখে লেক রোড অবস্থিত। এই প্লাজা সংসদ সদস্য এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মার্বেলের তৈরি মেঝে, গ্যালারি এবং খোলা পথ এই প্লাজার নির্মাণশৈলীর বৈশিষ্ট্য।

 

Print Friendly

Related Posts