ওপার বাংলার বর্ষার কবিতা ॥ শ্রীজাত

য়তো এমনই কোনও বর্ষার ঝমঝমে বৃষ্টির দিন। সকাল থেকেই আকাশ কালো করে রয়েছে, দুপুর হতে না হতে চারপাশ ঝাপসা করা বৃষ্টি নেমে এল। আমরা কী দেখব জানলার বাইরে তাকালে? পাড়ার বাড়িগুলোর ছাদ, দূরে কোনও একটা ব্রিজের টং, ভিজতে থাকা স্কাইক্র্যাপারগুচ্ছ…তিনি কিন্তু তা দেখছেন না।

তিনি দেখছেন বিস্তীর্ণ প্রান্তরে বৃষ্টির অবিরত ঝরে চলা। দেখছেন, আর লিখে রাখছেন একের পর এক লাইন। মেঘের হাতে চিঠি পাঠাচ্ছেন। তিনি স্বয়ং কালিদাস। হয়তো এমনই কোনও বর্ষাকালে তিনি লিখেছিলেন মেঘদূত।

সেই দিন থেকেই আজকের দিন। বর্ষাকাল যে কবিদের সব চাইতে উর্বর সময়, এ কথা মোটামুটি প্রমাণিত। সারা জীবন ধরে যেমন বর্ষার কবিতা লেখা হয়ে চলে। সারা জীবনের বর্ষাকালগুলোতেও লেখা হয় অনেক কবিতা।

তোমরা যা বলো তা বলো, বর্ষাকালের দাবিই আলাদা। জানলার বাইরে ঝির  ঝির থেকে ঝমঝম জমে উঠবে আর ডায়েরির পাতায় নতুন নতুন কবিতা নেমে আসবে না, এ আবার হয় নাকি? বৃষ্টি যদি আসে, কবিতাও তার পিছু পিছু আসবেই।

কথাটা যে মিথ্যে নয় মোটেই, সেটা হাতেনাতে প্রমাণ হল, যখন একজন বললেন, ‘বৃষ্টির সঙ্গে কবিতার একটা নিবিড় যোগাযোগ তো আছেই।’ ফোনের ওপার থেকে ভেসে আসা মেঘের মতো কণ্ঠস্বর স্বয়ং শঙ্খ ঘোষের। তাঁর কবিতায় যেমন ফিরে ফিরে এসেছে বৃষ্টি, বৃষ্টিতেও ফিরে ফিরে তাঁর কাছে এসেছে কবিতা।

“বর্ষার কবিতা না হলেও, আমার অনেক কবিতাই বর্ষাকালীন”, বলছিলেন শঙ্খবাবু। “বর্ষাকালে মনকে আরও নিজের করে পাই বলে মনে হয়। একবার মনে আছে, ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে সেদিন, ওয়েলিংটন স্ট্রিট ধরে অকারণেই হেঁটে যাচ্ছি, হঠাৎ কয়েকটা লাইন মাথায় এল। ‘বৃষ্টি নামে’ বলে ছোট কবিতাটি এই ভাবেই পাওয়া। আজও সেই স্মৃতি স্পষ্ট হয়ে আছে।”

এই কবির কলম থেকেই তো আমরা পেয়েছি সেই সব লাইন ‘পাথরপ্রতিমা তাই পাথরে রেখেছে সাদা মুখ/ আর তার চারধারে ঝরে পড়ে বৃষ্টি অবিরল/ বৃষ্টি নয়, বিন্দুগুলি শেফালি টগর গন্ধরাজ’।

লিখতে গিয়ে মনে পড়ে যাচ্ছে এক অলস মেঘলা বিকেলের কথা। বৃষ্টি আর কবিতা, দুই সম্পর্কেই ধারণা পাল্টে দিয়েছিল কয়েকটা মাত্র কবিতার লাইন ‘আমিও ভেঙেছি কিছু, ছোট মাপে/ এই ধরো জলের গেলাস/ বৃষ্টির ভিতরে হেঁটে শ্রাবণের কিছুটা ভেঙেছি’।

ওই দিন আমার সামনে অন্য এক বর্ষাকাব্য নিয়ে হাজির হয়েছিলেন উৎপলকুমার বসু। এভাবেও ভাবা যায়, দেখা যায় বৃষ্টিকে? যেন বৃষ্টি একটা অবিশ্রান্ত অঝোর পর্দা, যার শরীর ভেঙে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি আমি। প্রতি মুহূর্তে তৈরি হতে থাকা নতুন নতুন ফোঁটাগুলোকে ভেঙে চুরমার করেই তো আমার এগিয়ে চলা। আমি তো তা হলে শ্রাবণের কিছুটা ভাঙলাম!

শ্রাবণও ভেঙেছে কিছু কম নয়। এই বাংলার কবিদের, কবিতাদের সে বারবার নিংড়ে নিয়েছে। তবেই লেখা হয়েছে এই কবিতা

‘অন্তরের পথঘাট এবার বর্ষায় গেছে ভেঙে
খোয়া-খল ছড়িয়ে রয়েছে
হাঁ-খোলা নয়ানজুলি উঠে এসে বসেছে সমূহ
বুক জুড়ে।
শান্তি নেই, পথঘাট বাজার কোথাও শান্তি নেই
শুধু হেঁটে যাবো বলে, ভালোবাসা
তোমাকে পথিক
ক’রেও কি শান্তি আছে?’

চিরকালীন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। বৃষ্টি তাঁর আঙুলে পোষা ছন্দের মতো ঘুরঘুর করত।

নইলে কী ভাবে এক জন মানুষ লিখতে পারেন ‘বৃষ্টি যখন নামল, আমি উঠোনপানে একা/ দৌড়ে গিয়ে ভেবেছিলাম তোমার পাবো দেখা/ কিন্তু তুমি নেই বাহিরে, অন্তরে মেঘ করে/ ভারী ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে’। বা এমন আরও অজস্র পঙ্ক্তি? প্রেম আর প্রবাদের মাঝখানে পায়চারি করতে থাকা শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা বারবার ভিজে উঠেছে তুমুল বৃষ্টিতে।

যদিও বর্ষাকাল আলাদা করে এই শক্তিমান কবিকে লেখায়নি হয়তো, বলছেন কবিকন্যা তিতি।

তাঁর স্মৃতি বলছে, “বাবা বর্ষাকাল খুব ভালবাসতেন। পাহাড়, জঙ্গল বা সমুদ্রে আমরা বারবার বর্ষাতেই বেড়াতে যেতাম। চাইবাসায় বর্ষার স্মৃতিও বাবার কবিতায় বারবার ফিরে এসেছে। কিন্তু বাবাকে কখনও বর্ষাকাল বলে আলাদা করে কবিতা লিখতে দেখিনি। বরং বাবার লেখা অনেক সুবিখ্যাত বৃষ্টির কবিতাই বছরের অন্যান্য সময়ে লেখা। আসলে দুঃখ আর শোকই বাবার কাছে বর্ষাকালের মতো ছিল।” হয়তো সেটাই ঠিক, তাই বুকের মধ্যে ভারী ব্যাপক বৃষ্টির শব্দ নিয়েই চলে গেলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়।

তবু, বৃষ্টির সঙ্গে কবিতা জন্ম নেওয়ার কোনও অলীক যোগাযোগ সেই কবে থেকে শুরু হয়েছে কে জানে। হাজারো বদল সত্ত্বেও, বৃষ্টির শেকলে বাঁধ পড়বার ইচ্ছে হারায়নি কবির মন।

বর্ষার সকাল-দুপুরগুলোতে  বৃষ্টি নেমে আসামাত্রই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখ ভরে উঠত ছেলেমানুষের মতো খুশিতে। যেন বৃষ্টি নয়, কবিতাই এল ঝেঁপে। খ্যাতি আর প্রাপ্তির শিখরে বসে থাকা একজন সাহিত্যিকের মধ্যে তখন জেগে উঠত পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতাকে শাসন করা বেপরোয়া সেই যুবক। যে লিখতে পারত, ‘যখন বৃষ্টি পড়ে তখন গাছের নীচে দাঁড়াই একলা/ দূরে মাঠের ওপারে মাঠ শূন্য ঝাপসা/ বৃষ্টি থেকে বৃষ্টি আসে, ঢেউ-এর পর ঢেউ-এর বৃষ্টি/ গাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকার নিঃস্বতা কী বিষম নিঃস্ব।’

কিন্তু তিনি তো সমক্ষের সুনীল। আড়ালের কবি সুনীল কি পাল্টে যেতেন বৃষ্টি এলে? “ও কিন্তু বরাবরই বর্ষাকাল ভীষণ ভালবাসত। কম বয়সে তো ভিজতেই বেরিয়ে যেত, পরেও বৃষ্টি এলে ঘরের জানলা হাট করে খুলে বসে থাকত। আমি ফিরে দেখতাম বইপত্র বিছানা বালিশ সব ভিজে একাকার! বর্ষায় আলাদা করে বেশি লিখত কি না জানি না, তবে বর্ষাই ছিল ওর প্রিয়তম ঋতু”, এক পশলা স্মৃতি গলায় নিয়ে বলছেন স্বাতীদি।

এখন এই যে দু’জন বৃষ্টিভেজা মানুষ, এই যে দু’জন বর্ষাখ্যাপা কবি, এদের দুজনের গলাতেই কিন্তু উঠে আসত রবিঠাকুরের গান, বাইরে যখন বৃষ্টি…। আর সেই মানুষটি, বাংলা ভাষার সবচাইতে বড় বিস্ময় হয়েও বৃষ্টি-শিকলের হাতছানি এড়াতে পারেননি। ভাগ্যিস পারেননি। তাই অমন সব গান-কবিতা-ছবি পেয়েছি আমরা।

এখনও যখন শান্তিনিকেতন যাই, মেঘ করে আসা বিকেলে আম্রকুঞ্জে এমনিই হেঁটে বেড়াই, মনে হয় ইশ, যদি বর্ষার চাদর সরিয়ে, শ্রাবণ ভেঙে পৌঁছে যেতে পারতাম সেই আম্রকুঞ্জে! যেখানে হয়তো বা শান্ত মুখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আলতো পায়চারি করছেন সুদর্শন এক কবি, সর্বকালের সেরা এক সঙ্গীতকার, হয়তো বা টিপটিপ হতে থাকা বিকেলে বাড়ির বারান্দায় বসে তিনি লিখে ফেলছেন শ্রাবণের আরও একখানা অবিস্মরণীয় গান। আর দূরে… মেঘের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘনিয়ে আসছে সন্ধে…

যাঁরা আদতে কবি, তাঁদের কলমও কখনও রোদ আর মেঘের সিগন্যাল মেনে চলে বৈকী। কে জানে কী হয়। যখন ঘুম ভেঙে দেখা যায় জানলার বাইরে কালো করে এসেছে আকাশ, ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে খুব, চা চেপেছে রান্নাঘরে, কাজে যাবার ইচ্ছে বা উপায় কোনওটাই নেই…তখন কী করেন একজন কবি? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এক রকম নয়।

“আমি কিন্তু বৃষ্টির সময়ে বৃষ্টির কবিতা লিখিইনি প্রায়। বাইরে যখন বৃষ্টি পড়ছে, তখন তো সেটা উপভোগ করবার সময়। হয়তো পরে লিখেছি”, বলছিলেন জয় গোস্বামী, যাঁর কবিতায় বৃষ্টি এসে বারবার ভিজিয়ে গিয়েছে পাঠকদের।

“তবে ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’ যখন শেষ করছি, তখন তিনটে দিন কী বৃষ্টি, কী বৃষ্টি! বেরোনোই যাচ্ছে না ঘর থেকে বাইরে ওই রকম বৃষ্টি হয়ে চলেছে, আর আমি ঘরে বসে লেখাটা শেষ করছি। সেও এই রকমই কোনও এক বর্ষাকাল হবে’’, বললেন জয়। কে জানে, হয়তো তাঁরও বুকের কোণে জমানো রয়েছে অন্য এক বৃষ্টির জল।

কে জানে কারও কারও ক্ষেত্রে হয়তো বৃষ্টির সঙ্গে মাটির সম্পর্ক থেকেই উঠে আসে কবিতা। বাংলার মতো সুন্দর বৃষ্টি আর কোথায়ই বা থাকতে পারে, এমনই তো ভাবব আমরা, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বৃষ্টির তো কাঁটাতার নেই, তার ভিসা লাগে না দেশ পেরোতে। তাই সময় থেকে সময়ে, দেশ থেকে দেশে সে কবিদের তাড়িয়ে বেরিয়েছে। তাই পাবলো নেরুদা লেখেন, ‘and that you know the earth and the rain like my mouth, since we are made of earth and rain.’ বা সিলভিয়া প্লাথ বলেন, ‘I woke up to the sound of rain.’ অর্থাৎ বৃষ্টিকে কবিতায় অন্তত কেউই এড়াতে পারছেন না।

বিদেশের বৃষ্টিতে বেশ কিছু ভিজে যাওয়ার পরেও দেশের বৃষ্টিকেই অনেক বেশি কবিতা-নম্বর দিচ্ছেন একেবারে হালফিলের কবি রাকা দাশগুপ্ত। অল্প কয়েক দিনের লেখালেখিতেই নজর কেড়েছেন। পেয়েছেন কৃত্তিবাস পুরস্কারও।

রাকার কবিতা বলছে, ‘কোনও দূর দেশে আজ খুব জোরে বৃষ্টি নেমে গেছে। / এখানেও হাওয়া দিচ্ছে। ঠান্ডা ভিজে হাওয়া।/ সে ভারি অঝোর বৃষ্টি। দিকচিহ্নহীন।/ ধুয়ে মুছে যাচ্ছে সব রাস্তাঘাট। বিস্মৃতিপ্রবণ/ মাটি ফুঁড়ে গন্ধ উঠছে কৈশোরের। বাংলা টিনটিন,/ শঙ্কুর শনির দশা, কাকাবাবু-সন্তু কিংবা এনিড ব্লাইটন…/ এত তীব্র অসময়ে কী করে বর্ষা এল, বলো!’ আপাতত কোরিয়া-নিবাসী রাকা সদ্য ঘুরে এলেন সুইডেন। বৃষ্টি পেয়েছেন দু’দেশেই। কিন্তু কবিতার ক্রিজে এগিয়ে রাখছেন কলকাতার শ্রাবণকেই।

বৃষ্টির কবিতায় সিদ্ধহস্ত এই সময়ের সমাদৃত এক কবি লিখছেন, ‘সে হাতে কোনও দিন গরম চা,/ কখনও নীল পেন, সাদা কাগজ।/ স্কুটার ছুটে যাওয়া তেপান্তর/ ভিজিয়ে দিয়েছিল শ্রাবণমাস। / কে কার দেবদাস, পারু কোথায়?/ কোথায়? কত দূর ধর্মদা?/ ক্ষতটি ঢেকে রেখে সারা জীবন/ কী লিখি, কেন লিখি পরোয়া নেই/ আবারও হাত ধরে এমনই রিমঝিম শ্রাবণমাস!”

এমন বহু কবিতাতেই বৃষ্টিকে ধরে রেখেছেন পিনাকী ঠাকুর। তাঁর স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, ‘বর্ষাকাল আমার কাছে সত্যিই কবিতা নিয়ে আসে। হয়তো বৃষ্টির সকালে গরম মশলা কিনতে বেরিয়েছি, হুট করে মাথায় দুটো লাইন চলে এল। যদি ভুলে যাই, টুকে রাখি মোবাইলে। গত তিন চার বছরে বর্ষাকালেই সব চেয়ে বেশি লিখেছি। আমার বইগুলোর কৃতিত্ব তাই অনেকখানি বৃষ্টিরই!’

আসলে বৃষ্টি দিয়ে বোধ হয় অনেক কিছুকে স্পর্শ করতে পারা যায়, ছুঁয়ে ফেলা যায়। যা আমার হাতের নাগালের বাইরে, তাকেই আমি আদর করতে পারি বৃষ্টি মারফত। তাই এই সময়ের আশ্চর্য সঙ্গীতকার, নাগরিক কবিয়াল কবীর সুমন লেখেন, ‘বৃষ্টি যেখানে তোমার চোখের জলে/ অন্য কারোর দুঃখের কথা বলে/ সেইখানে হবে দেখা/ তোমার সঙ্গে একা’।

কে জানে কোন সময়ে লেখা এই গান, কিন্তু এ তো আমাকে বারবার টেনে নিয়ে যাচ্ছে সেই বৃষ্টির কাছেই। যেমন নিয়ে যাচ্ছে মল্লিকাদির লেখা বৃষ্টির কবিতা। তাঁর কথা তাঁর মুখ থেকে শোনার উপায় নেই আর। নইলে ঠিক জানি, বৃষ্টি নিয়ে এমন কিছু একটা বলতেন, যা সক্কলের থেকে আলাদা। কেননা ওই মানুষটির দেখার চোখদুটো যে বড্ড আলাদা ছিল।

আলাদা ছিল আরও একজন একরোখা কবি। আপাদমস্তক বেপরোয়া সেই মানুষটি এ যুগের আস্ত মেঘদূতই লিখে ফেলেছিলেন। ‘আষাঢ় মাসের পয়লা তারিখে সকালবেলায়/ দেখল যুবক গাভীন মেঘের ধীর চলাচল/ যেন মেঘ নয়, মেঘের শরীরে সহেলিস্বজন/ শ্লথকম্পিত পায়ে হেঁটে যায় জীবনযাপনে’।

তিনি এ কালের জয়দেব। জয়দেব বসু। মেঘের হাতে ভালবাসার কথাগুলো তুলে দিয়ে বড্ড তাড়াতাড়ি আড়ালে চলে গেলেন। নইলে এবারের বর্ষায় তাঁর নতুন লেখা শুনতে নিয়মমাফিক পৌঁছে যেতাম ঠিক, মেঘলা কোনও বিকেলবেলায়।

মনটা খারাপ হয়ে এল লিখতে লিখতে। শুরু করেছিলাম কালিদাসের মেঘদূত দিয়ে, এখন মনে পড়ে যাচ্ছে ‘মেঘপিওনের ব্যাগের ভিতর মনকেমনের দিস্তা/ মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়, ব্যাকুল হলে তিস্তা’…এও তো আরেক মেঘদূত।

বৃষ্টির তোড়ে চিঠি ভাসিয়ে দেওয়ার সাধ হয়তো সব কবিরই থাকে। অথচ চিঠির বদলে সে নিজেই তো ভেসে গেল এক ঝিরঝিরে বর্ষার সকালবেলায়, ফ্রেম থেকে কলমে, আপাদমস্তক কবি ঋতুদাকে ছেড়ে দিতে হল সেই বৃষ্টিআগুনের হাতেই।

হয়তো আকাশ কালো করে আসা বর্ষাকালের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে বরাবরের মনকেমন, চিরকালের ডিপ্রেশন। এই বর্ষা শুরুর দিনগুলোও তেমনি কাটল আমার। অলস আলগোছে, খোলা জানলার বাইরে তাকিয়ে তাকিয়েই তো কেটে গেল কতগুলো সকাল। কোনও কাজে মন নেই, অকাজেও  না। মন যে কীসে আছে, কে জানে। আসলে খারাপ আছে মন। নানা কারণে। কাজের খাতিরে বাইরে যেতে হচ্ছে মাসখানেকের জন্য। কলকাতার ঝমঝমানো বৃষ্টির কথা মনে পড়বে খুউব।

মনখারাপ কবিতার জন্যেও। সেই কবে শেষ একখানা কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি আমি, তার পর আর হয়নি। আসবে কি? এই বর্ষায় সে আসবে কি? অপেক্ষা করা ছাড়া, একটানা এই ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ঠায় বসে থাকা ছাড়া আমার আর উপায় নেই কোনও। কেবল মনে পড়ে যাচ্ছিল গুলজারের একখানা কবিতার কথা, যাকে ছবি হিসেবে চিনি আমরা। ইজাজত।

ওই সারা রাতের ঝোড়ো বৃষ্টিতে দুটো জীবন একে অপরকে পেরিয়ে গেল পাশাপাশি। যেভাবে দুটো ট্রেন চলে যায়। আর সেই দুই ট্রেনের আলোর জাফরিতে আবছা দেখা গেল তৃতীয় একজনের চেহারা।

এও তো বৃষ্টিরই কবিতা। এই সব ভাবতে ভাবতেই কয়েকটা লাইন বৃষ্টির ছাঁটের মতো নেমে এল খাতার পাতায়। হয়তো কবিতাই হয়ে ওঠেনি এই লেখা, তবু, আমাকে বাঁচিয়ে তুলেছে আরেকবার।

এবারের বর্ষায় তাকেই ভাগ করে নিলাম সকলের সঙ্গে—

imageaaaaa

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts