তবুও শুভ চিন্তার জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ

বাজেটে সরকারী ও বেসরকারী চাকুরীজীবিদের আয়কর প্রসঙ্গে

মোঃ রফিকুল ইসলাম প্রতি বছর জুন মাস এলেই সরকার বাজেট পেশ করেন এবং উক্ত বাজেটের উপর ভিত্তি করেই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের খাত-ওয়ারী উন্নয়নে বরাদ্ধ দেয় হয়। তদ্রুপ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একই ধরনের নীতিমালা অনুকরণ করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকেন।

প্রতি বছরই দেশের বেসরকারী শিল্পপতি, বিভিন্ন বনিক সমিতি, উদ্যোক্তা সমিতিসহ সরকারের সহযোগী সকল সংগঠনের সাথে বাজেট পূর্ব অর্থাৎ প্রাক বাজেট আলোচনা করেন এবং তাদের থেকে উন্নয়নমুখি বিষয়াদির উপর সুপারিশ গ্রহণ করে বাজেট প্রণয়ন করা হয়। দেশ চালাতে হলে বেসরকারী খাতকে অবশ্যই মুল্যায়নে রাখতে হবে। কেননা সরকারের রাজস্ব আয় বেসরকারী খাত থেইে অর্জিত হয়ে থাকে। দেশে সতের কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র বাইশ লক্ষ মানুষ সরকারী চাকুরীজীবি।

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন সেলাই কারখানা দিয়ে দেশ চলে না, দেশের উন্নয়ন হয় না। আজকে সেই সেলাই কারখানা অর্থাৎ BGMEA and BKMEA ইন্ডাস্ট্রিতে আনুমানিক পঞ্চাশ লক্ষ লোক কাজ করেন। এছাড়া বেসরকারী ব্যাংক, বীমা থেকে শুরু করে উৎপাদনমুখী বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ নানাবিধ কল-কারখানায় কোটি লোকের চাকুরী হয়েছে এবং বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তথা-স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় লক্ষ লক্ষ লোক কাজ করেন সুতরাং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরিত করতে হলে বেসরকারী খাতকে অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে।

কেননা সতের কোটি লোকের মধ্যে মাত্র বাইশ লক্ষ কর্মজীবি মানুষের পরিবারের পাঁচ সদস্য গণনা করা হলে  গড় হিসাব দাঁড়াবে এক কোটি দশ লক্ষ মানুষ বাকী পনের কোটি নব্বই লক্ষ মানুষ বেসরকারী এবং বেসরকারী আয় দিয়েই জীবন পরিচালনা করে আসছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক রেমিটেন্সের উর্দ্ধগতি সেটাও বেসরকারী মানুষের প্রেরিত রেমিটেন্সের অংশ।

সরকারের অনেক পরে উপলব্ধি হলেও এবারের বাজেট বক্তৃতায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী একটি চমৎকার কথা বলেছেন সরকারী খাতের মত বেসরকারী খাতেও পেনশন স্কিম চালু করবেন। বিষয়টি শুনে বেসরকারী খাতের কর্মজীবি মানুষগুলো একটি আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। মনে রাখতে হবে দেশের সর্বস্তরের মানুষই দেশের নাগরিক।  যেহেতু সরকারী খাত সিমিত সেহেতু দেশের সকল লোক সরকারী চাকুরী পায়নি। মনে রাখতে হবে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া শেষ করে কেউ কেউ সরকারী চাকুরী করেন আবার কেউ কেউ বেসরকারী চাকুরী করেন।

উদাহরণস্বরুপ সরকারী চাকুরীর শুন্য পদে নিয়োগের জন্য বিসিএস পরীক্ষায় লক্ষ লক্ষ লোক অংশ গ্রহণ করেন কেউ সোনার হরিণ নামে খ্যাত চাকুরীটি পেয়ে যান কেউ চাকুরী পেতে ব্যর্থ হন। সরকারী চাকুরীতে ব্যর্থ হয়ে কেউ কিন্তু বসে নেই। যেহেতু সবাই শিক্ষিত সেহেতু সবাই বেসরকারী বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে জীবন চালাচ্ছেন। এই বেসরকারী চাকুরীজীবি মানুষগুলো নিরবে নিবৃত্তে তাদের অর্জিত আয়ের উপর সরকারী ট্যাক্স অর্থাৎ ইন-কাম ট্যাক্স দিয়ে সরকারের রাজস্ব খাতে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন।

ভ্যাট, ট্যাক্স না দিলে সরকার কখনই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবে না। সুতরাং বেসরকারী খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দিয়ে শিল্প বান্ধব বাজেট পেশ করা হলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে দেশের শিল্পপতিগণ হাত বাড়িয়ে দেবেন। দেশের শিল্প উন্নয়নে সরকারের ভুমিকা হবে শিল্পপতিদেরকে উৎসাহ দেয়া। শিল্পপতিরাই সরকারের উন্নয়নে অংশীদারী হিসেবে কাজ করে যাবেন।

সরকারের মনে রাখতে হবে সরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানে হাবু-ডুবু খাচ্ছে, ঐ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা বছরের পর বছর সরকার ভুর্তকী দিয়ে যাচ্ছে। তাদের জন্য সরকার বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা এমনকি দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব বা বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে।  সেখানে বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা আয় করে নিজের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি  কোন কোন কর্মকর্তা তাদের অর্জিত আয়  থেকে সরকারকে ইন-কাম-ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছে।

একই দেশে বসবাস করে এবং একই দেশের নাগরিক হয়ে দুটি নীতিতে পড়ে আছি। সরকারী চাকুরীজীবিদের জন্য সরকার নতুন পে-স্কেল ঘোষনা দিয়ে তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করেছেন। ১৪২৩ সাল থেকে সরকারী চাকুরীজীবিদেরকে বিশ ভাগ বৈশাখী উৎসব ভাতা দিয়েছেন। পক্ষান্তরে আমরা বেসরকারী চাকুরীজীবি আমাদের কি হবে। আমরাও সরকারকে ভোট দেই, ইনকাম ট্রাক্স দেই, সরকারী নিয়ম-নীতি পালন করি এবং দেশের নাগরিক। সরকারী এবং বেসরকারী মানুষগুলো একই রাস্তায় চলাচল করি, একই বাজারে কেনা বেচা করি, একই খাবার খেয়ে জীবন যাপন করি তাহলে সরকার কেন বেসরকারী চাকুরীজীবি মানুষগুলো নিয়ে শুভ চিন্তা করলেন না। সরকারী কর্মজীবিদেরকে নতুন পে-স্কেল দেয়ার কারণে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারী কর্মজীবিগণ বৃদ্ধিকৃত বেতন পেয়ে বাজার করছেন বেসরকারী কর্মজীবিরা কিভাবে বাজার করবেন।

মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী মহোদয় পূর্বেই ঘোষনা দিয়েছিলেন পবিত্র রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য  টিসিবির মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয় করবেন এবং শুরুও করেছিলেন কিন্ত ব্যবসায়ীদের সাথে মিটিং-এর পরের দিন তা বন্ধ করা হলো কার স্বার্থে।

পরিশেষে, মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি দেরী হলেও শুভ উপলব্ধি করতে পেরেছেন তদ্রুপ বেসরকারী খাতেও পেনশন স্কিম চালু করবেন। পাশাপাশি বেসরকারী কর্মজীবিদের নতুন পে-স্কেল এবং বৈশাখী উৎসব প্রদানের জন্য বেসরকারী শিল্পপতিদেরকে উৎসাহ যোগাবেন।

মোঃ রফিকুল ইসলাম  বীমা কর্মী
piclmds@gmail.com

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts