পর্ব-৩১
মি. সেভ গার্ডদের ডাক দেয় বলে, যতো তাড়াতাড়ি পারো মিস ইন্কুয়ারীকে তলব কর। এতক্ষণে মিসেস টাইমের হৃদয় যেন শান্তি পায়। মি. সেভ মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য তলব করছে মিস ইন্কুয়ারীকে। এটা শুভ লক্ষণ। মিস ইন্কুয়ারী তার বাহিনী নিয়ে এসে হাজির। দূর থেকে তার বিভিন্ন রকম লোকজনসহ আগমন করে। ইন্কুয়ারীর অনুসন্ধান তা আবার সোজা কাজ নয়। নিজে একা করা যায় না। ঐ দূরে থেকে সে এসেছে। তা অবশ্য জরুরী তলব। মিস ইন্কুয়ারী অবশেষে এসে হাজির হয়। মি. সেভ ফুল স্তবক অর্পণ করে মিস ইন্কুয়ারীকে। মিসেস টাইমের দিকে তাকিয়ে বলেন, তা আপনি কেমন আছেন?
মিসেস টাইম বলে, আমি ভালো আছি। আপনি ভালো?
মিসেস টাইম ধন্যবাদ দেয় ইন্কুয়ারীকে বলে,
“ ধন্যবাদ ধন্যবাদ
ইন্কুয়ারী
কথা আছে তোমার সাথে
কিছু যে দরকারী
ধন্যবাদ দেই ধন্যবাদ
মিস ইন্কুয়ারী।”
পর্ব-৩২
ইন্কুয়ারী বলে, আমি ভালো আছি। মি. সেভের দিকে তাকিয়ে বলে, স্যার তলব করেছেন কেন?
আমরা একটা সন্ধান নিয়ে বিপাকে পরেছি। ব্যাপারটা মর্মর্স্পশী। এই ব্যাপারে আপনার লোকজন দিয়ে আমাদের সাহায্য করতে হবে।
মিস ইন্কুয়ারী খুশী হয়ে বলে, একশবার স্যার। সব কিছুর অনুসন্ধান করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমাদের এই দায়িত্ব সম্পন্ন করতে হবে।
মি. সেভ মিসেস টাইমকে বলে, আমরা মহা বিপদে পড়েছি।
মিস ইন্কুয়ারী বলে, কি বিপদে পড়েছেন?
পৃথিবীতে বাংলাদেশ নামক একটা দেশ আছে। সেখানে একটা কিশোরী মেয়ে পাজী বিজ্ঞানী ফসিলের এলাকায় বন্ধী হয়ে আছে।
মিস ইন্কুয়ারী রেগে বলেন, কারণ কি?
মিস সেভ বলে, সে একজন বাঙালি। সে বাংলা ভাষায় কথা বলে।
মিস ইন্কুয়ারী বলে, তা বাংলা ভাষায় কথা বলে, অপরাধ কি?
মি. সেভ বলে, বাংলা ভাষার অপরাধ বাংলা ভাষার নাকি ফসিল নেই।
মিস ইন্কুয়ারী ক্ষেপে গিয়ে বলে, আর যদি অনুসন্ধান করে বাংলা ভাষার ফসিল আমরা এনে দিতে পারি?
মিসেস টাইম খুশি হয়ে যায়। খুশি হয়ে বলে, বাংলা ভাষার ফসিল অনুসন্ধান করে আনা যাবে।
মিস ইনুকুয়ারী বলে উঠে- এটা সম্ভব।
পর্ব-৩৩
মিসেস টাইম ও মিস ইন্কুয়ারী পৃথিবীর গবেষণাগারে অনুসন্ধান বোর্ডে বসে। গবেষণায় বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ফসিলের স্থান নির্ণয় করা আছে। বোতামগুলি টিপে টিপে চেক করে ইন্কুয়ারী। ফসিলের স্থানে বাংলা ভাষা পাওয়া যাচ্ছে। মিসেস টাইম কিশোরী মেয়েটির জন্য কষ্ট হচ্ছে। সে তার সহযোগি মিসসহ টাইমকে ডেকে আনে। মিস এসিস্ট্যান্ট টাইমকে কিশোরী তুয়াকে দেখতে অনুরোধ জানায়। কিশোরী তুয়া কেমন আছে। তাকে দেখতে হবে। মিস এসিস্ট্যান্ট টাইম দায়িত্ব নিয়ে চলে যায়। বোর্ডে একটা রোবট ফিট করা আছে। বিভিন্ন সুইচ টিপ দিলে নানা রকম সাউন্ড ভেসে আসছে, সবাই চিন্তার সাথে বসে আছে।
রোবট বলে,
“আমি মি. রোবট
আমি মি. রোবট
বিরাট কায় দেহ আমার
কিন্তু মনটা সফট
মনটা আমার সফট
আমি মি. রোবট
আমি মি. রোবট
আমার আছে কি দরকার।
আমি করি উপকার
আমি করি উপকার।”
পর্ব-৩৪
পৃথিবীময় বাংলা ভাষা নিয়ে চিন্তা চলছে। বারে বারে বাংলা ভাষার অপরাধ কয়।
রোবট চিৎকার করে বলে উঠে- এ ভারি অন্যায়, এ ভারি অন্যায়। বাংলা ভাষার জন্য সালাম, রফিক, বরকত, মারা গেছে। এবার কিশোরী এক মেয়েকে বন্ধী করা হয়েছে। এ ভারি অন্যায়, এ ভারি অন্যায়। পৃথিবী শুদ্ধ মায়ের ভাষাকে নিয়ে বারে বারে বাঙালিকে ঠকানো হচ্ছে। ঠকানো যাবে না। হ্যালো এক, দুই, তিন অনুসন্ধান করেন, অনুসন্ধান করেন। এসিস্ট্যান্ট বোর্ডের মাধ্যমে কথা বলে উঠে বলে- এক, দুই, তিন বিজ্ঞানী ফসিল কিশোরী মেয়েটিকে আবার বিচারের জন্য দরবারে নিয়ে গেছে। মিসেস টাইম ক্ষেপে যায়, বলে উঠে- না, না, না বিজ্ঞানী ফসিল এত অন্যায় বাংলার সাথে করতে পারবে না। না, না, না।
এদিকে ইন্কুয়ারী ম্যাসেজ করে পাঠায়, বলে- বিজ্ঞানী ফসিল তুমি তোমার বিচার বন্ধ কর। আমরা কিছু ক্ষণের মধ্যে তোমাকে জানাবো।
ইন্কুয়ারী অনেক চিন্তায় পড়ে। রোবট দিয়ে বলে পাঠায়-
“বন্ধ করো
বন্ধ করো বিচার
এখানেই নেই কোন দরকার
বন্ধ করো বিচার।
বন্ধ করো বিচার।”
পর্ব-৩৫
মিস ইনকুয়ারী লোকজন পদব্রজে ও বিভিন্ন জায়গা অনুসন্ধান করছে। করতে করতে পথ চলতে চলতে তারা তুয়া নামক অনুসন্ধানী মেয়েটি পথের পাশে এক বাঙালি সাধককে বসে থাকতে দেখে। তার হুরো হুরিতে সাধক বলে, ব্যস তুমি কোথায় যাও?
তারা তখন সব কিছু খুলে বলে।
তোমাদের জুড়ি বোর্ডের নেতারা বহুত বোকা। আর তাই এই সমাধানের ব্যাপারটা তাদের দেরি হচ্ছে।
সাধক সবাইকে চমকিয়ে তার শত ছিন্ন বোঝার মধ্যে থেকে কি যেন বের করে দেয়। পুরাণ কাগজটা
সাধক বলে, এটার নাম চর্যাপদ। এটাই বাংলা ভাষার ফসিল বলতে পারো।
সাধক বলে,
“শোধ নিবো, নিবো শোধ
বাংলা ভাষার ফসিল এটা
এর নাম চর্যাপদ।
শোধ নিবো, নিবো শোধ
বাংলা ভাষার ফসিল এটা
এটার নাম চর্যাপদ।
শোধ নিবো, নিবো শোধ।”
পর্ব-৩৬
খুব ক্ষেপেছে। বাংলা ভাষার ফসিলের কোন খবর এখন পর্যন্ত মিলে নাই। হঠাৎ করে মি. অল নোইং গজ গজ করে বলে উঠে, বিজ্ঞানী ফসিল তোমাদের সাথে কথা বলবে।
বিজ্ঞানী ফসিল মিসেস টাইম ও ইন্কুয়ারীকে স্তব্ধ করে দিয়ে বলে, তোমাদের কথা রাখতে পারোনি। আমি বাঙালি কিশোরীকে এখনই মেরে ফেলবো। মিসেস টাইম অবাক হয়ে যায়। অত্যাচারী ফসিলের সামনে মেয়েটি সাহসীর মতো দাঁড়িয়ে আছে। কোন মৃত্যু ভয় নেই। মিসেস টাইম ও মিস ইন্কুয়ারী মি. অল নোইং রোবটের সামনে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। চার দিকে যেন ঝড় বয়ে যায়। হৈ চৈ শব্দে আকাশ চুম্বক মেয়ে, কণা কিশোরী তুয়ার পাশে এসে দাঁড়ায়।
মিসেস টাইম বলে,
“অলনোইং
অলনোইং
কত দূর মি. তোমার আজ
ক্ষেপেছে মি. ফসিল রাজ
কত দূর আজ
তোমার কাজ
কত দূর আজ
তোমার কাজ।”
পর্ব-৩৭
চারদিকে বোর্ড দুলে উঠে। বিজ্ঞানী ফসিলের সৈন্যরা গর্জে উঠে, বোর্ড দুলতে থাকে। কে যেন তৃতীয় পক্ষ চিৎকার করে উঠে বলে,
“বিজ্ঞানী ফসিল বোকা
বিজ্ঞানী ফসিল বোকা
আমি রূপ রেখা
আমি রূপ রেখা। ”
বিজ্ঞানী ফসিল ক্ষেপে যায়। চিৎকার করে বলে উঠে-
“তুমি রূপ রেখা
এসেছো একা।
আমার আছে বাহিনী
করছে সবাই কানাকানি।”
রূপ রেখা চিৎকার করে বলে,
“তোমার আছে বাহিনী
আমি সব জানি
আমি সব জানি
আমি সব মানি।”
রূপ রেখা তার হাত দিয়ে কি যেন তুলে ধরে বলে,
“কিশোরী এখন নিরাপদ
হাতে আমার চর্যাপদ।”
বিজ্ঞান ফসিল অবাক হয়ে গেল বলে,
“তোমার কথা মানি
চর্যাপদ কি?”
রূপ রেখা বলে,
“জানতে চাও জানো
আমার কথা মানো
বুঝানো মুসকিল
চর্যাপদ বাংলার ফসিল।”
ততক্ষণে অল নোয়িং রোবট বলতে থাকে চর্যাপদ হলো আদি ফসিল।
মিসেস টাইম, ইন্কুয়ারী ও মি. সেভ বিজ্ঞানী ফসিলের সামনে গিয়ে হাজির হয়। বিজ্ঞানী ফসিলকে সবাই কথায় আক্রমন করে। কিশোরী তুয়াকে মুক্ত করে দেয় বলে, কিশোরী তুয়া তুমি জিতে গেছো। তোমার বাংলা ভাষার ফসিলের নাম চর্যাপদ।
কিশোরী তুয়া অবাক হয়ে বলে, চর্যাপদ!
পর্ব-৩৮
এতোক্ষণে বিজ্ঞানী ফসিল নিজের ভুল বুঝতে পারে। কোন কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক না। আর তাই বাংলা ভাষাকে ছোট করে দেখা তার ঠিক হয় নাই। ছোট কিশোরী নিজ ভাষার জন্য আজ যেন মিথ্যে শাস্তি পেয়েছে।
“কি লজ্জা কি লজ্জা
বলে উঠে বিজ্ঞানী ফসিল।”
সে কিশোরী তুয়াকে কাছে টেনে নিয়ে বলে,
“আমায় মাফ করে দাও
বাংলা ভাষার গান গাও।”
কিশোরী তুয়া গান গেয়ে বলে উঠে- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। সাথে সাথে বিজ্ঞানী ফসিল তার দরাজ গলায় গেয়ে উঠে- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।
মিসেস টাইম, মিস ইনুকুয়ারী ও মি. সেভও গেয়ে উঠে- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।
সবাই অবাক হয়ে যায়। ইয়া বড় অল নোইং রোবট এতক্ষণে ওদের মাঝে হাজির হয়েছে। তার মেকী গলায় গেয়ে উঠেÑ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।
তুয়া অল নোইংয়ের কাছে বলে, চির দিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাঁজায় বাঁশি।
পর্ব-৩৯
সব শেষে রূপ রেখা বিজ্ঞানী ফসিলকে লক্ষ্য করে বলে,
“জানো বাংলা লক্ষ আশা
বাংলা যে আন্তর্জাতিক ভাষা।”
এবার সবাই বিজ্ঞানী ফসিলকে আক্রমন করে বলে, বাংলা আন্তর্জাতিক ভাষা, যে ভাষার জন্য মানুষ মারা গিয়েছে। সালাম, বরকত, রফিক, সবাই মায়ের মুখের ভাষার জন্য শহীদ হয়েছে।
“সরি, সরি, সরি
আমি লাজে মরি
বাংলায় গাই গান
বাংলায় রাখি মান।
সরি, সরি, সরি
আমি লাজে মরি
বাংলায় গাই গান
বাংলায় রাখি মান।”
[] সমাপ্ত []