অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র মাহে রমজানে জুমাবারের গুরুত্ব অনেক। মাগফিরাতের মাঝামাঝি অবস্থায় সপ্তাহের জুমার দিন সমাগত। জুমাবারকে বলা হয় সাইয়্যেদুল আইয়াম বা সাপ্তাহিক দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিবস।
কোন কোন স্থানে গরিব অক্ষম ব্যক্তি যারা হজের ফরজ আদায় করতে পারে না তাদের জন্য সালাতুল জুমা হজের সাওয়াব নিয়ে আসে।
বিখ্যাত সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত আছে, প্রিয়নবী হুজুরে কারীম (স) ইরশাদ করেছেন, সূর্য উদিত হয় এমন সব দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিবস জুমা। এদিন হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিন তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এদিনই তাকে জান্নাত থেকে আবার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। একমাত্র জুমার দিনই কিয়ামত সংঘটিত হবে।’ (তিরমিযী শরীফ ১/৩৫৪)।
তিনি আরও ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই জুমার দিন এমন একটি মুহুর্ত আছে যখন বান্দা আল্লাহ তা’য়ালার কাছে যা-ই ফরিয়াদ করে আল্লাহ তাকে দান করেন। তখন সাহাবিরা জানতে চাইলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (স)! আইয়াতুস সাআহ হিয়া অর্থাৎ সে মুহূর্ত কোনটি ইয়া রাসূলাল্লাহ? হুজুর জানালেন, ‘যখন নামাজ শুরু হয় তখন থেকে প্রত্যাবর্তন সময়ের মধ্যে।’
নবীজীর প্রিয় সাহাবি আবদুল্লাহ ইবন উমর থেকে বর্ণিত আছে, কোন ব্যক্তি যদি জুমাবারে ইন্তেকাল করে আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা তাকে কবরের কঠিন পরীক্ষা থেকে রেহাই দান করেন।
এজন্য পবিত্র জুমার দিন এবং জুমা আনুষঙ্গিক সালাত ও এবাদত আমাদের জন্য দ্বীন-দুনিয়ার অনেক সৌভাগ্য নিয়ে আসে। আর মাহে রমজানের একটি জুমার এবাদত ৭০টি জুমার এবাদতের সমান সাওয়াব পাওয়া যায়। সুবহানাল্লাহ।
কোন কোন হাদিসে পবিত্র জুমার দিন ফজরের নামাজের পর থেকে জুমার জন্য তৈরি থাকা, পাক-পবিত্র হয়ে মসজিদে আসার অফুরন্ত সাওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে। একই ভাবে সহীহ শুদ্ধভাবে জুমার নামাজে অংশগ্রহণের অশেষ পুণ্য ও সৌভাগ্য নিহিত বলে অগণিত হাদিস থেকে সাবিত আছে।
ইসলামের মহান চতুর্থ খলিফা হযরত উসমান (রা) বলেছেন, ‘ইমাম যখন জুমার খুতবা পাঠ করতে দাঁড়ান তখন আপনারা তা শুনবেন ও কর্ণপাত করে থাকবেন। যে ব্যক্তি দূরে বসার কারণে শুনতে পায় না সে চুপ করে কর্ণপাত করে থাকবে। এক্ষেত্রে সেও চুপ করে শ্রবণকারীর সমান সাওয়াব পাবে। অতঃপর যখন নামাজ শুরু হবে তখন আপনারা কাতার সোজা করে দাঁড়াবেন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবেন, কেননা কাতার সোজা করে দাঁড়ানো নামাজের পূর্ণত্বদানের সহায়ক।’ (মুয়াত্তা মালিক)।
আল্লাহ পাক কুরানুল কারীমে ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোরান শরীফ পাঠ করা হয়, তখন তোমরা কর্ণপাত করে শোন এবং চুপ থাক। অবশ্যই তোমরা দয়াপ্রাপ্ত হবে।’
আল্লাহতা’য়ালা পবিত্র জুমার গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে কোরানুল কারীমে পূর্ণাঙ্গ একটি সূরা নাজিল করেছেন। এতে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘হে ইমানদার লোকেরা! যখন তোমাদের জুমার সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহতা’য়ালার জিকিরে স্মরণে ভদ্রোচিতভাবে তাড়া কর এবং পরিত্যাগ কর ব্যবসা-বাণিজ্য। এটিই তোমাদের জন্য পরম উত্তম কাজ, যদি তোমরা জ্ঞান দিয়ে জানতে পার। আর যখন নামাজ শেষ হয়, তোমরা পৃথিবীতে কাজকামে ছড়িয়ে পড়। আর তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ফজল ও অনুগ্রহ কামনা কর। আর বেশি বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ ও জিকির কর। অবশ্যই তোমরা সফলকাম হবে।’