এস এম শরিফুল ইসলাম: প্রখ্যাত জনপ্রিয় লেখক ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র কাহিনীকার ডা. নীহাররঞ্জন গুপ্তের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী আজ।
বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল ১৯১১ সালের ৬ জুন পিতা সত্যরঞ্জন গুপ্তের কর্মস্থল কলকাতায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থান কলকাতায় হলেও তার পৈত্রিক ভিটা নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধুমতী নদী পাড়ের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী গ্রাম-জনপদ ইতনায়। প্রায় ১ একর ২০ শতক জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত তার পৈত্রিক বাড়িটি যাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করেছে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়।
এই গুণী সাহিত্যিকের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী উৎযাপন উপলক্ষে এই প্রথম বারের মতো জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং ডা. নীহাররঞ্জন গুপ্ত ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ইতনায় আজ (বৃহস্পতিবার) দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে বরেণ্য লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, শিল্পীর জীবন ও কর্মের ওপর সেমিনার, নীহাররঞ্জন সড়ক উদ্বোধন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণ ও কবিগানের আসর।
জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হেলাল মাহমুদ শরীফ।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করবেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ডীন ড. জীবন কৃষ্ণ সাহা।
নীহাররঞ্জন গুপ্ত চাকরিজীবী পিতার বিভিন্নস্থানে অবস্থানকালে ১৯৩০ সালে তিনি কোন্ন নগর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরবর্তীতে কৃষ্ণনগর কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই তিনি আইএসসি পাস করে কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর ডাক্তার হিসেবে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। চাকরি জীবনের বাধ্যবাধকতা তার কাছে বিরক্তিকর মনে হওয়ায় তিনি এ চাকরি ছেড়ে কলকাতায় ব্যক্তিগতভাবে আবার ডাক্তারি পেশায় নিযুক্ত হন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কলকাতায় বিশেষ পরিচিত হয়ে ওঠেন। নীহার রঞ্জন গুপ্তের শৈশব থেকে সাহিত্যে হাতে খড়ি হয়েছিল। ষোল বছর বয়সেই তার প্রথম লেখা উপন্যাস ‘রাজকুমারী’ ছাপা হয়।
তার রচিত উপন্যাসের সংখ্যা দুইশতেরও অধিক। প্রকাশিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে-মঙ্গলসূত্র, উর্বশীসন্ধ্যা, উল্কা, বহ্নিশিখা, অজ্ঞাতবাস, অমৃতপাত্রখানি, ইস্কাপনের টেক্কা, অশান্ত ঘূর্ণি, মধুমতি থেকে ভাগীরতী, কোমল গান্ধার, ঝড়, অপারেশন, ধূসর গোধূলী, উত্তর ফাল্গুনী, কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী, কালো ভ্রমর, ছিন্নপত্র, কালোহাত, ঘুম নেই, পদাবলী কীর্তন, লালু ভুলু, কলঙ্ককথা, হাসপাতাল, কাজল লতা ও কিশোর সাহিত্য সমগ্র।
তার কালজয়ী উপন্যাস ‘লালুভুলু’ পাঁচটি ভাষায় চিত্রায়িত হয়েছে। ১৯৮৩ সালে উপন্যাসটি বাংলাদেশেও চিত্রায়িত হয় এবং দর্শককুলের প্রশংসা অর্জন করে। নীহাররঞ্জনের অনেক উপন্যাস থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়েছে। বিশেষ করে তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘উল্কা’ দীর্ঘদিন ধরে থিয়েটারের দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে।
নীহার রঞ্জন গুপ্ত ১৯৮৬ সালের ২০ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ডা. নীহাররঞ্জন গুপ্ত ফাউন্ডেশনের অন্যতম সংগঠক চিত্রশিল্পী এস এম আলী আজগর রাজা বলেন, দেরিতে হলেও জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল ডা. নীহাররঞ্জন গুপ্তের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে ইতনায়, লেখকের পৈত্রিক ভিটায়। এজন্য আমরা আনন্দিত, এজন্য আমরা গর্বিত।