কবিতার বরপুত্রকে স্মরণ



স্বাধীনতা তুমি/রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।/স্বাধীনতা তুমি/কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো/মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-/স্বাধীনতা তুমি/শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা/স্বাধীনতা তুমি/পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল। (স্বাধীনতা তুমি/শামসুর রাহমান)

শামসুর রাহমানের কবিতায় বাঙালিজাতির স্বাধীনতা প্রাপ্তির চেতনার দীপ্তস্বর উচ্চারিত। তিনি লেখেন যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় আক্রান্ত ও বেদনামথিত কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’। যা আজো মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। যা আজও সকল বয়সের মানুষকে উজ্জীবিত করে। তার সৃষ্টিশীলতার বিশালতার জন্য বাংলা কবিতায় তাকে স্বাধীনতার কবি বলা হয়।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি প্রয়াত হন।

সৃষ্টি ও মননের দ্যুতিময় উপস্থাপনা তাকে দেয় সমকালীন বাংলা কবিতার প্রধান কবির মর্যাদা। কবি হিসেবে দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।

বাংলা ভাষায়, বাংলা কবিতায় কবি শামসুর রাহমান উজ্জ্বল উপস্থিতির মাধ্যমে অবদান রেখে গেছেন। তিনি শুধু নগর জীবনের রূপকারই নন, বিভিন্ন সংগ্রাম, আন্দোলন, গণমানুষের প্রতিবাদী উচ্চারণ এবং জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি ওঠেছে তার কবিতায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি মজলুম আদিব (বিপন্ন লেখক) ছদ্মনামে কলকাতার বিখ্যাত দেশ ও অন্যান্য পত্রিকায় কবিতা লিখতেন। আজো বাঙালি চেতনায় নাড়া দিয়ে যায়।

শামসুর রাহমান ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী একজন জনমানুষের কবি। তাকে বলা হয় কবিতার বরপুত্র।

১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরনো ঢাকার মাহুতটুলীর ৪৬ নং বাড়িতে কবি জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের নাম আমেনা খাতুন ও পিতা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী। পৈতৃক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রামে।

১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিং নিউজে সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৫৭-১৯৫৯ রেডিও পাকিস্তানের প্রোগ্রাম প্রডিউসার ছিলেন। ১৯৬০-১৯৬৪ দৈনিক মর্নিং নিউজে সিনিয়র সাব-এডিটর, ১৯৬৪-১৯৭৭ দৈনিক পাকিস্তান ও দৈনিক বাংলায় সহকারী সম্পাদক এবং ১৯৭৭-১৯৮৭ দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শামসুর রাহমানের প্রথম কবিতার বই ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশ পায় ১৯৬০ সালে। এর পর ষাট দশকে প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে ‘রুদ্র করোটিতে’, ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘নিরালোকে বসতি’, ‘নিজ বাসভূমে’। দেশ স্বাধীনের পর প্রকাশ পায় ‘বন্দি শিবির থেকে’, ‘মাতাল ঋতিক’সহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবির ৬০টি কবিতার বই। এ ছাড়া শিশুতোষ, গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস- ‘অক্টোপাস’ ও ‘অদ্ভুত আঁধার’, নাটক ও কবিতাগ্রসহ অনুবাদগ্রন্থ, নির্বাচিত কলাম, নির্বাচিত কবিতার চারখণ্ডসহ কবির বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts