পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বাদ পেলো বাংলাদেশ। রাওয়ালপিন্ডিতে এক সেশন বাকি থাকতেই কোনও উইকেট না হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা। এর আগে দুই দলের ১৩ বারের দেখায় একটিতেও জয় পায়নি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এবার রাওয়ালপিন্ডিতে তাদেরকেই হারিয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ।
নতুন করে নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে রাজপথে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর থেকেই শুরু হয় দেশ সংস্কারের। তারই ধারাবাহিকতায় বিসিবির সভাপতির পদ ছাড়েন নাজমুল হাসান পাপন। নতুন বোর্ড সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ফারুক আহমেদ। সব নতুনের মাঝে দেশের ক্রিকেটটাও যেন নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। সরকার পতনের পর প্রথম ম্যাচেই জয় পেলো বাংলাদেশ।
শেষ দিনে জয়ের জন্য দরকার মাত্র ৩০ রান। সময় ছিল পর্যাপ্ত, হাতে ছিল ১০ উইকেট। জয় পেতে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি সফরকারীদের। দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
এর আগে টসে হেরে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠান টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত। তবে শান্তর আগে বোলিং নেয়ার সিদ্ধান্তটা হয়তো ভুল হয়নি। স্কোরবোর্ডে ৩ রান যোগ হতেই আব্দুল্লাহ শফিককে সাজঘরে পাঠান হাসান মাহমুদ। দলীয় ১৪ রানেই দ্বিতীয়বার হোঁচট খায় স্বাগতিকরা। এবার অধিনায়ক শান মাসুদকে সাজঘরে পাঠান শরিফুল ইসলাম। স্কোরবোর্ডে আর দুই রান যোগ হতেই আরও একটি উইকেট হারায় পাকিস্তান। বাবর আজমকেও শূন্য রানে সাজঘরে ফেরান বাঁহাতি এই পেসার।
১৬ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। এরপর দলের হাল ধরেন সাইম আইয় ও সৌদ শাকিল। দুজনে মিলে ৯৮ রানের জুটি। ৯৮ বলে ৫৬ রান করে সৌদ শাকিল আউট হলে ভাঙে তাদের জুটি। এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে বড় জুটি গড়েন সৌদ শাকিল। ১৪১ রান করে আউট হন সৌদ শাকিল। অন্যদিকে ১৭১ রানে অপরাজিত থাকেন রিজওয়ান। ৬ উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশও ভালো শুরু পায়। মুশফিকুর রহিমের ১৯১, সাদমানের ৯৩, মেহেদী হাসান মিরাজের ৭৭, লিটন দাসের ৫৬ ও মুমিনুলের ৫০ রানের ওপর ভর করে প্রথম ইনিংসেই লিড পায় বাংলাদেশ। সবগুলো উইকেট হারিয়ে ৫৬৫ রান তোলে টাইগাররা। পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ইনিংসে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান।
দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকদের চেপে ধরে বাংলাদেশি বোলাররা। সাকিব, হাসান মাহমুদরা ধসিয়ে দেন পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। তিনজন ব্যাটার আউট হন কোনও রান না করেই। একমাত্র রিজওয়ান ছাড়া আর কোনও ব্যাটারই তেমন রান পাননি। আব্দুল্লাহ শফিক ৩৭, বাবর আজম ২২, রিজওয়ান ৫১ ও শান মাসুদ করেন ১৪ রান। এছাড়া আর কোনও ব্যাটার ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘর। সাকিব আল হাসান ও হাসান মাহমুদ নেন ৩টি করে উইকেট। শেষ পর্যন্ত ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। আর বাংলাদেশের জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৩০ রান।
মামুলি লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কোনও বেগ পেতে হয়নি টাইগারদের। ৬.৩ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম মিলে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। আর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে টেস্টে হারালো বাংলাদেশ।