জাতীয় কবির ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী


‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আয়নায়।’ চির প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর আরেকটি বড় পরিচয়, তিনি বিদ্রোহী কবি। সর্বোপরি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি।

বাংলা সাহিত্যের অনন্য রূপকার এই মহান কবির ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। যিনি এসেছিলেন জ্যৈষ্ঠে, বিদায় নিয়েছেন ভাদ্রে। ধ্রুবতারার মতোই আবির্ভাব ছিল তাঁর। শোষিত-নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার ক্ষোভ দীপ্ত শিখার মতো জ্বলে উঠেছিলো তার কণ্ঠে। বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র ঢাকায় তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ৭৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কবিকে ১৯৭৪ সালে সম্মানসূচক ডি–লিট উপাধি দেওয়া হয়। কবিকে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয় সরকার। ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি কবিকে ভূষিত করা হয় একুশে পদকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

৭৭ বছরের জীবনকালে তিনি সৃষ্টিশীল ছিলেন মাত্র ২৩ বছর। নজরুলের এ ২৩ বছরের সাহিত্যজীবনের সৃষ্টিকর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। একটা কবিতা একা এত শক্তিমান হতে পারে আগে জানা ছিল না। ‘বিদ্রোহী’ এমনই কবিতা, যা আজকেও ‘প্রোটেস্ট কবিতা’ হিসেবে পাঠক পড়ে চলেছে।

নজরুল কখনো মাথানত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি ও অর্থবিত্তের বৈভবের কাছে। ‘চির উন্নত মম শির’ বলে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমন্ডুকতার বিরুদ্ধেও ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে।

বাংলা সাহিত্যে তার অবদান অসামান্য। অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী ও সাম্যের এ কবি আছেন কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উত্স। ছোটগল্প, উপন্যাস, গান, নাটক লিখলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-অগ্নিবীণা, সঞ্চিতা, চক্রবাক, প্রলয় শিখা, মরু ভাস্কর, দোলনচাঁপা, বিষের বাঁশি, ভাঙ্গার গান, সাম্যবাদী, পুবের হাওয়া, ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা ইত্যাদি। এছাড়া প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেন কাজী নজরুল। তার গানের বাণী হয়ে ওঠে মানবতাবাদ ও সাম্যবাদের পক্ষে শক্তিশালী হাতিয়ার।

প্রিয় কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনটিতে প্রতিবছর পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তাকে স্মরণ করে জাতি। জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন আজ ব্যাপক কর্মসূচি পালন করছে। আজ সকাল ৮টায় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এছাড়া বেলা ১১টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে নজরুল বিষয়ক একক বক্তৃতা প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক মাহমুদ শাহ কোরেশী। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহা. নায়েব আলী।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts