একজন মৃত ব্যাক্তি যা দিতে পারেন

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ একজন মৃত ব্যক্তি দুটো কিডনি, একটা লিভার, একটি হৃদপিণ্ড, দুটো ফুসফুস, প্যানক্রিয়াস, ইন্টেস্টাইন দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে একজন মৃত ব্যক্তি অন্তত পাঁচজন অর্গান ফেইলিওর হওয়া মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন। ক্যাডাভারিক ট্রান্সপ্লানটেশনের দিকে আমাদের যেতেই হবে। কারণ রোগী তো অনেক বেশি। তা না হলে অর্গান আমরা পাবো না। আমাদের সামনে অনেক দূর যেতে হবে।

বলেন, সোসাইটি অফ অরগ্যান ট্র্যান্সপ্ল্যানটেশন বাংলাদেশের প্রধান কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হারুনুর রশিদ ।

বিশ্বের সর্বত্রই মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করা বা ক্যাডাভারিক ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপরে চিকিৎসা বিজ্ঞান বেশি নির্ভরশীল।কিন্তু বাংলাদেশে আত্মীয়দের কাছ থেকে অল্প কিছু কিডনি পাওয়া গেলেও সব মিলিয়ে অঙ্গদানে রয়েছে ব্যাপক অনীহা।

বাংলাদেশ লিভার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, অনেকে রিলিজিয়াস একটা গ্রাউন্ড দাঁড় করান যে আমি মরে গেলাম, আমার লিভার খুলে নিলো, আমার হার্ট খুলে নিলো, কি নিয়ে আমি কবরে যাবো। আমরা জনগণকে বুঝাই যে ধর্মে কোন বারণ নাই কারণ সৌদি আরবের মতো জায়গায় লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট সবই হচ্ছে। ধর্মও্র এমন বলে না যে তুমি মরার পরে অঙ্গ দান করতে পারবা না।

বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতো সফল কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছিলো। কিন্তু এর পর থেকে এত বছরে দেশে মাত্র এক হাজারের মতো কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে।অথচ বাংলাদেশে বছরে ৪০ হাজারের মতো মানুষের কিডনি বিকল হয়ে যায়। বাংলাদেশে অন্যান্য রোগে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে গেলে সেটি প্রতিস্থাপনের চিত্রও একই রকমই হতাশাব্যঞ্জক।এর প্রধান কারণ বলা হচ্ছে বাংলাদেশে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান করার চিত্র খুবই করুণ।

দেশে এক কোটির বেশি মানুষ হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত। যার অন্তত ১০ শতাংশের লিভার বিকল হয়ে যায়।কর্নিয়াজনিত সমস্যার কারণে অন্ধের সংখ্যা পাঁচ লাখ।বছরে দেশে মোটে দেড়শোটির মতো কিডনি প্রতিস্থাপন হয়। বছরে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ টি কর্নিয়া সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কেবল চারটি লিভার সংযোজন হয়েছে। ফুসফুস ও হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন একেবারেই হয়নি। অস্থিমজ্জা সংযোজন কিছুটা হচ্ছে।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সবচেয়ে সফলভাবে যে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হচ্ছে সেটি হলো চোখের কর্নিয়া।সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি বলছে ১৯৮৪ সালে তাদের চক্ষু সংগ্রহের কাজ শুরুর পর থেকে ৩৬ হাজার ব্যক্তির অঙ্গীকার পেয়েছেন তারা।

সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক ডা মোহাম্মদ জয়নাল আবদিন বলেন, অঙ্গীকার দাতাদের মৃত্যুর পর তাদের আত্মীয়রা প্রায়ই তাদের কোনো খবর দেন না। মৃত ব্যক্তিদের নিয়ে আত্মীয়দের আবেগও তাদের জন্য একটি বড় বাধা।এমনও হয়েছে যে চক্ষু দান করেছেন কিন্তু তাদের আত্মীয়রা আমাদের খবর দেননি। সেক্ষেত্রে আমরা সেই কর্নিয়া আমাদের পক্ষে পাওয়া সম্ভব না। আমরা একটা ইমোশনাল জাতি।

একটা মানুষ মারা যাওয়ার পর আমরা যখন শোকাতুর পরিবারে কর্নিয়া গ্রহণ করার জন্য যাই তখন ওখানে আরো যে মানুষগুলো আছে তাদের অন্যভাবে মোটিভেট করে যে আমরা এরকম সময় এই কাজটা কেন করি। কিন্তু আসলে এখানে শোকের ঊর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর মানবতার কথা আমাদের ভাবা উচিত।

বিবিসি প্রতিবেদন থেকে

Print Friendly

Related Posts