কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় অধিবাসীদের অন্ধত্ব নিবারণে পরামর্শ

চক্ষুরোগ বিষয়ক কর্মশালা

 

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ কক্সবাজারে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্বের হার অত্যন্ত বেশি হওয়ায় এটা নিবারণে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় ও আঞ্চলিক চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেন, যদিও রোহিঙ্গাদের রোগতত্ত্ব সম্পর্কিত কোনও উপাত্ত পাওয়া যায়না, তবে মিয়ানমারে বসবাসকালে তাদের সীমিত স্বাস্থ্যসেবা সুযোগ এবং কক্সবাজারের স্বাস্থ্যশিবিরে তাদের অভিযোগের ধারা থেকে এটা বোঝা যায় যে তাদের বড় একটি অংশ চোখের ছানি, চালশে ও কর্নিয়া সমস্যা ভুগছে।

বিশেষজ্ঞরা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের ওপর অন্ধত্ব ও অন্যান্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক একটি জরিপ পরিচালনার পরামর্শ দেন যাতে সেখানকার প্রকৃত চক্ষুস্বাস্থ্য পরিস্থিতি জানা যায় এবং সেটা মোকাবিলা করা যায়।

বুধবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর ব্রাক সেন্টার ইন মিলনায়তনে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক ও কক্সবাজারের স্থানীয় সম্প্রদায়ের চক্ষু স্বাস্থ্যসেবা সাড়া – পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যত করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব সুপারিশ করেন তারা। অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, কাতার ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট এবং কিউসিভি এক্সপান্ডিং আই কেয়ার প্রজেক্টের সহায়তায় আইএনজিও ফোরাম ইন আই হেলথ এবং ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর প্রিভেনশন অব ব্লাইন্ডনেস (আইএপিবি) এ কর্মশালার আয়োজন করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ প্রধান অতিথি হিসাবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন আইএপিবি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন আইএপিবি দক্ষিণ এশিয়া চ্যাপ্টারের চেয়ার ডা. তারাপ্রসাদ দাস, এশিয়া প্যাসিফিক অ্যাকাডেমি অব অফথালমোলোজির ভাইস-প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আভা হোসেন এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ও ন্যাশনাল আই কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা।

যুক্তরাষ্ট-ভিত্তিক সেভা ফাউন্ডেশনের পরামর্শক ডা. জেরি ভিনসেন্ট মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যাতে তুলে ধরা হয় রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত।

তিনি বলেন, “কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের চক্ষু স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা মেটানো একটা কঠিন কাজ। কিন্তু বাংলাদেশে চক্ষুখাতের অংশীজনদের মধ্যকার চমৎকার সহযোগিতা, সুন্দর পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক দাতাদের সমর্থনে সেটা সম্ভব হবে। যেহেতু কক্সবাজারেই রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহত শরণার্থী শিবির, সেকারণে এটি হবে কোনও শরণার্থী সংকটে গৃহীত বৃহত্তম চক্ষু স্বাস্থ্যসেবা সাড়া।”

অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ এবং আইএনজিও ফোরামের চেয়ার ও ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. জারিন খায়েরও কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন।

ইউএসএইড, ইউনিসেফ, ইউএনএইচসিআর, সুইস রেড ক্রস, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সেভ দ্যা চিলড্রেন, ওয়ার্ল্ড ভিশন ইন্টারন্যাশনাল, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, সিডিডি, ফ্রেন্ডশিপ, ওব্যাট হেল্পার্স, কারিতাস বাংলাদেশ, ক্যাথোলিক রিলিফ সার্ভিস, সিবিবিএসএইচ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, আইএপিবি, সেভা ফাউন্ডেশন, অরবিস ইন্টারন্যাশনাল, ফ্রেড হলোজ, সিবিএম, সাইটসেভার্স, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ওবিএস, এপিএও, এনইসি, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, চাইল্ড সাইট ফাউন্ডেশন এবং আরআরআরসির প্রতিনিধিরা কর্মশালায় অংশ নেন।

বক্তারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় প্রাথমিক চক্ষু স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভুক্ত, কোনো রকম বৈষম্য ছাড়া ছানি অপারেশন ও চশমা প্রদানের মতো মৌলিক চক্ষু স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং চক্ষুরোগের রেফারাল ব্যবস্থা গড়ে তোলারও সুপারিশ করেন।

 

ছবি: কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন যুক্তরাষ্ট-ভিত্তিক সেভা ফাউন্ডেশনের পরামর্শক ডা. জেরি ভিনসেন্ট।

Print Friendly

Related Posts