ডায়াবেটিস কখনো সারে না, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডায়াবেটিস এমনই একটি রোগ, যা কখনো সারে না। কিন্তু এই রোগকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই ডায়াবেটিস এখন উদ্বেগের কারণ। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ।

ডায়াবেটিস শব্দটি আমাদের সবার কাছেই বেশ পরিচিত। এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কোনো ডায়াবেটিসের রোগী নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ডায়াবেটিস এখন একটি মহামারি রোগ। এই রোগের অত্যধিক বিস্তারের কারণেই সম্প্রতি এমন ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

আইরিশ ইনডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, যখন আমরা কার্বোহাইড্রেট বা সাধারণ শর্করাজাতীয় খাবার খাই, তখন তা ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়। ইনসুলিন হচ্ছে একধরনের হরমোন। এর কাজ হলো এই গ্লুকোজকে মানুষের দেহের কোষগুলোয় পৌঁছে দেওয়া। এরপর সেই গ্লুকোজ ব্যবহার করে শরীরের কোষগুলো শক্তি উৎপাদন করে। সেই শক্তি দিয়েই রোজকারের কাজকর্ম করে মানুষ। সুতরাং যখন এই গ্লুকোজ শরীরের কোষে পৌঁছাবে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হবে।

যখন কারও ডায়াবেটিস হয়, তখন ওই মানুষের শরীরে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে দেহের কোষে গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না। এতে করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এই কারণে ডায়াবেটিস রোগীর ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। যখন প্রস্রাব বেশি হয়, তখন ডায়াবেটিসে ভোগা রোগী তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন।

অন্যদিকে, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ বের হয়ে যায়। এতে করে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে পারে না দেহের কোষগুলো। ফলে রোগী দুর্বলতা অনুভব করেন। রোগী যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তবে তার রক্তনালি, স্নায়ু, কিডনি, চোখ ও হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো
ডায়াবেটিস রোগের সাধারণ কিছু লক্ষণ রয়েছে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখলে সহজেই চিহ্নিত করা যায় ডায়াবেটিস। আর যত আগে ডায়াবেটিস চিহ্নিত করা যাবে, তখনই নিতে হবে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ। ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো হলো:

১. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
২. তেষ্টা পাওয়া
৩. নিয়মিত খাওয়ার পরও ঘন ঘন খিদে
৪. প্রচণ্ড পরিশ্রান্ত অনুভব করা
৫. চোখে ঝাপসা দেখা
৬. শরীরের বিভিন্ন অংশের কাটাছেঁড়া সহজে সারে না
৭. খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া
৮. হাতে-পায়ে ব্যথা বা মাঝে মাঝে অবশ হয়ে যাওয়া

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুর কবীর বলেছেন, ডায়াবেটিস রোগীর জন্য হাঁটা সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। সে হাঁটবে অন্তত ৪৫ মিনিটের কিছু বেশি। একটু গতি বেশি রাখতে হবে। যেকোনো সময়ই করতে হবে। তবে নির্দিষ্ট একটি সময়ে। কেউ যদি সকালে সুবিধা বোধ করে, সকালে করতে হবে। কেউ যদি সন্ধ্যায় মনে করে, তখন করতে হবে। আপনার সুবিধামতো একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটবেন। প্রতিদিন কাছাকাছি সময়ে হাঁটলে ভালো হয়। তবে যার অন্য ধরনের সমস্যা আছে, তার হাঁটতে গিয়ে অন্য রোগ বাড়িয়ে ফেললে হবে না। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Print Friendly

Related Posts