দুদককেও পাত্তা দিচ্ছেন না তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী সোনা মিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : মাদক ব্যবসা করে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপত ইউনিয়নের কদমী গ্রামের মিজানুর রহমান মিজান ওরফে সোনা মিয়ার বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগে তাকে সম্প্রতি ফরিদপুর দুদকে ডেকে পাঠানো হয়। তবে দুদককে পাত্তা না দিয়ে সেখানে উপস্থিত হননি সোনা মিয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা মাদক ব্যবসায়ীদের ১৪১ জনের একটি তালিকা জানুয়ারিতে দুদকে পাঠানো হলেও এতদিন তা হিমাগারে ছিল। তালিকার কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলে দুদকও নড়েচড়ে বসেছে। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের গডফাদারদের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ ও অবৈধ সম্পদের খোঁজে জোরেশোরে অনুসন্ধান শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন।

সম্প্রতি মাদক কারবারিদের সেই তালিকা ধরেই যেসব মাদক কারবারি মাদক বিক্রি করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের তালিকায় মিজানুর রহমান অন্যতম, তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় দুদকের সহকারী পরিচালক কমলেশ মণ্ডলকে। ইতোমধ্যে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তা। ওইসব তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে নোটিশ পাঠানো হয় মিজানকে। মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য। তিনি জানান, মিজানুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করার জন্য নোটিশ করা হয়েছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক কমলেশ মণ্ডলের সই করা নোটিশে গত ১৪ জুন সকাল ১০টায় ফরিদপুর কার্যালয়ে মিজানুর রহমান ওরফে সোনা মিয়াকে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছিল। অসুস্থতার কথা জানিয়ে মিজান দুদক কার্যালয়ে হাজির হননি জানিয়ে সে সময় দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নোটিশে ১৪ জুন জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল। কিন্তু মিজানুর রহমান মোল্লা নাকি অসুস্থ। সময় প্রার্থনা করেছেন মৌখিকভাবে। ঈদুল ফিতরের পর তার দুদক কার্যালয়ে আসার কথা জানিয়েছেন।’ তবে লিখিতভাবে কিংবা কোনো আইনজীবীর মাধ্যমেও মিজান সময় প্রার্থনা করেনি, মৌখিকভাবে সময় নিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছিলেন। তবে ঈদুল ফিতরের পর প্রায় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো দুদকে দেখা করেননি তিনি।

জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ রয়েছে। অল্প কয়েক বছরেই কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি।

জানা গেছে, লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড করে বেড়াতেন সোনা মিয়া। এমনকি চুরি-ডাকাতিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ডাকাতির অভিযোগে কাশিয়ানি থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সেই মিজান এলাকায় গোপনে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ঢাকায় চলে যান। সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে আবারো এলাকায় আসেন। ধীরে ধীরে এলাকায় গরুর ফার্ম, কৃষি খামার, মাছের খামার, অ্যাপার্টম্যান্ট ব্যবসা, মার্কেটসহ তিন বছরের ব্যবধানে দেড়শত কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলেন মিজানুর রহমান ওরফে সোনা মোল্লা।

ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ঢাকা, ফরিদপুর ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি বিক্রির মাধ্যমে অল্প কয়েক বছরেই এই সম্পদের পাহাড় গড়েন। দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মিজান মাদক কারবারি করে কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রায় দেড়শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এ সংক্রান্ত অভিযোগ আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। আমরা আরো অনুসন্ধান করছি। মাদক কারবারির সঙ্গে যত বড় ক্ষমতাধর ব্যক্তিই থাকুক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

Print Friendly

Related Posts