ধামরাইয়ে চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসী দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলি

রাসেল হোসেন, ধামরাই: শুক্রবার ঢাকার ধামরাইয়ের জমিজমা সংক্রান্ত সালিশে ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসীর মধ্যে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দফায় দফায় সংঘর্ষে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ ১০-১২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেছে। এতে সাংবাদিক ও পুলিশের এএসআইসহ কমপক্ষে ২০জন আহত হয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতা ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও তার বোনের বাড়িঘরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা ও ব্যাপক লুটপাট করেছে এবং তার পক্ষের লোকজনের ১০টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করেছে। আত্মরক্ষায় ইউপি চেয়ারম্যান কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করলে পরিস্থিতি আরও বিস্ফোরন্মুখ হয়ে উঠে।

ছবি তোলার সময় সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় বলেও ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই ইউপি চেয়ারম্যানকে নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখে।

পুলিশ খবর পেয়ে ওই ইউপি চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করতে গেলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশের উপর চড়াও হলে পরিস্থিতি অনুকুলের বাইরে চলে যায়। ফলে পুলিশ সংঘবদ্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতেফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে।
চলে জনতা পুলিশ ও চেয়ারম্যান বাহিনীর মধ্যে ত্রিমুখী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঘটনাটি ঘটে বাদ মাগরিব ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নের কুটিরচর গ্রামে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে রাতভর পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়।

এলাকাবাসী জানান, সুয়াপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মোঃ হাফিজুররহমান সোহরাবের সঙ্গে তার চাচাত ভাই মোঃ আব্দুল হামিদের জমিজমা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বাদ জুমা ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে এক সালিশি বৈঠক বসে। এ সালিশি বৈঠক চলাকালে বাদ মাগরেব ইউপি চেয়ারম্যান চড়াও হয়ে ফাঁকা গুলি করে। এতে এলাকাবাসী জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যানের উপর চড়াও হয়। তারা চেয়ারম্যানকে তার বাড়িতেই অবরুদ্ধ করে রাখে। ওই ইউপি চেয়ারম্যান আত্মরক্ষার জন্য কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করলেও কোন কাজে আসেনি।

জনতা তার বাড়ির চারপাশ ঘেরাও করে অবস্থান নেয়। দফায় দফায় চলে ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসীর মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। এতে আহত হয় মোঃ আব্দুল হামিদ, তার (হামিদের) পিতা মোঃ মোতালেব হোসেন, চাচা মোঃ মোন্নাফ হোসেন, হামিদের মামা, স্ত্রী, ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষের এএসআই মোঃ নুরু মিয়া, মোঃ জুলমত আলী, আমেনা বেগম, পায়েল আক্তার, সুর্যত আলী, মোঃ সাগর আলী, মোঃ শাকিম ও সাংবাদিকসহ উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০জন।

খবর পেয়ে ধামরাই থানা পুলিশের এসআই ভজন রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে জনতা পুলিশের উপরও চড়াও হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণকরে।

ফলে পুলিশ-জনতা ও চেয়ারম্যান বাহিনীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হাফিজুরর হমান সোহরাব বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাদের পারিবারিক ঝামেলার মধ্যে মোঃ আবুল চোরা, হুনো চোরার ছেলে মোঃ পান্নো চোরা, ধামরাই উপজেলা মটর চালক লীগের সভাপতি স্বীকৃত গরুচোরা মোঃ আবুবকর সিদ্দিক ও মোঃ সেলিম হোসেনসহ ৫০-৬০ সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক দেশীয় অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালিয়ে আমার লোকজনের ১০টি মোটর সাইকেলসহ বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। আমি দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক আমারই জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই।

এ ব্যাপারে এসআই ভজন রায় বলেন,জমিজমা নিয়ে সালিশি বৈঠককে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অবরুদ্ধ ইউপি চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করতে গেলে জনতা চড়াও হয়।

এ ব্যাপারে অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্দ রিজাউল হক দীপু বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের জানমালের নিরাপত্তা ও এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাতভর পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।

Print Friendly

Related Posts