পদ্মার ভাঙনে ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ:  প্রতি বারের মত মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর ভাঙনে পাঁচটি গ্রামের ৫শ’ ঘর বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

গত এক সপ্তাহে নদীগর্ভে বড় বাহাদুরপুর, ছোট বাহাদুরপুর, উজানকান্দি, কদমতলী ও রামকৃষ্ণপুর গ্রাম ব্যাপক ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছে দ্রুত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা না নিলে স্কুল, এতিমখানা ও মসজিদসহ অসংখ্য বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে যাবে। ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলো আশে পাশের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। অনেকেই ভাঙ্গনের ভয়ে ঘর বাড়ি, আসবাবপত্র নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন।

বাহাদুরপুরের সোনামুদ্দিন নামের নামের ব্যক্তি বলেন,এখন রাস্তায় কোন রকম আছি। আমার ঘর বাড়ি,গাছপালা,জিনিসপত্র সব নদীতে চলে গেছে। কোর রকমে একটা ছাপড়া ঘর সরাতে পারছিলাম।
উজানকান্দি গ্রামের সোবাহান মিয়া বলেন,কোন রকম দিন মজুরি কইরা সংসার চালাইতাম। পরিবারের সবাই আমার উপড়ে নির্ভর কইরা থাকে। নদীতে আমার জমিজমা সব চইলা গেলো। এখন খুব কষ্টে দিন যাইতেছে।

কদমতলী গ্রামের বলেন, মঙ্গলবার রাতেই তার বাড়ির কিছু অংশ নদীতে ভাঙছে। কোনো মতে ঘর-বাড়ি সরিয়েছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

ঢাকার এক প্রেসে কাজ করেন ফরহাদ হোসেন ও আনোয়ার হোসেন, হোটেল শ্রমিক শাজাহান, জেলে রাজ্জাক আলী, কৃষক দুলাল মোল্লাসহ ওই গ্রামের অন্যন্ত ৩০ টি পরিবার গত সপ্তাহে সর্বহারা হয়েছেন। তাদের বসতভিটা এখন সর্বনাশা পদ্মার গর্ভে। ক্রমান্নয়ে পদ্মার এই ভাঙন অব্যাহত থাকলে ভাঙনের পরিমান বেড়ে দ্বিগুণ হবে বলে আশঙ্কা করছেন। এবার যেভাবে নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে ৩-৪ দিনে অন্তত ২০ টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

গোপিনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস বলেন, এ বছরের পদ্মার ভাঙনে গেলো এক সপ্তাহে কমপক্ষে ২০০ বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখনই ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ না ফেলা হলে আগামী এক সপ্তাহে আরও দুই থেকে তিনশত বাড়িঘর পদ্মার গর্ভে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা বয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, গেলো মাসে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভায় পদ্মার এমন ভাঙনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে ভাঙনকবলিত এলাকার পরিদর্শন করে তালিকা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পদ্মার নদীর ভাঙনের ব্যাপারে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ইলিয়াস মেহেদী জানান, ভাঙনের ব্যাপারে ইতিমধে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ভাঙনকবলিত এলাকার পরিদর্শনও করা হয়েছে। দ্রুত ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণে প্রস্তাবও করা হয়েছে।

Print Friendly

Related Posts