ঐতিহাসিক ‘রোজ গার্ডেন’ এখন সরকারের

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ পুরান ঢাকার ঋষিকেশ দাস রোডের ঐতিহাসিক ‘রোজ গার্ডেন’ নামক বাড়িটি এখন সরকারের। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটি বাড়ির মালিক লায়লা রকীব ও তার সন্তানদের কাছ থেকে ক্রয়ের রেজিস্ট্রেশন দলিল গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্রয়ের রেজিস্ট্রেশন দলিল গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের জন্ম ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সভার সাক্ষী রোজ গার্ডেন ভবনটি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব গত ৮-ই আগস্ট সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদন দেয়।

কমিটির অনুমোদন অনুযায়ী রোজ গার্ডেনের বর্তমান মালিকদের সাথে আলোচনা করে সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বাড়ির ভবনসহ সম্পত্তির মূল্য ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে। সেই প্রেক্ষিতে রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী রোজ গার্ডেন ভবনের দলিল গ্রহণ করেন।

বিনিময়ে অর্থের চেক ও রাজধানীর গুলশানে ২০ কাঠা জমিসহ সেখানে নির্মিত একতলা ভবন রোজ গার্ডেন মালিক পক্ষের কাছে বিক্রয় সংক্রান্ত দলিল হস্তান্তর করেন।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোজ গার্ডেন ভবনটির একটি ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। কারণ, এ ভবন থেকে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন উপমহাদেশের অন্যতম পুরাতন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। রোজ গার্ডেনকে পুরাতন ঢাকার ঐতিহাসিক স্মৃতি চিহ্নসমূহ তুলে ধরতে জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।

রোজ গার্ডেনের মূল কাঠামো পরিবর্তন না করে এর প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন হৃষিকেশ রোডের এই ভবনেই যাত্রা শুরু হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। তৎকালীন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দুই বছরের মধ্যেই বাঙালিদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে প্রতিষ্ঠিত হয় এই দলটি। অবশ্য পরে ১৯৫৫ সালে দলটিকে ধর্মনিরপেক্ষ রূপ দিয়ে নাম হয় আওয়ামী লীগ।

মূলত, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই পাকিস্তান আমলে বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চলেছে আর তাদের নেতৃত্বেই রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ।

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, রোজ গার্ডেন ১৯৩১ সালে ঋষিকেশ দাস নামে এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পুরান ঢাকার ঋষিকেশ রোডে ২২ বিঘা জমির উপর একটি বাগানবাড়ি তৈরি করেন।

বাড়িটির বাগানে প্রচুর গোলাপ গাছ থাকায় এর নাম হয় ‘রোজ গার্ডেন’। এছাড়া বাগানটি সুদৃশ্য ফোয়ারা, পাথরের মূর্তি ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত ছিল। মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় পাঁচটি কামরা আর একটি বড় নাচঘর আছে। নিচতলায় আছে আটটি কামরা।

সাত হাজার বর্গফুট ভবনটির মোট আয়তন। উচ্চতায় ৪৫ ফুট। ছয়টি সুদৃঢ় থামের উপর এই প্রাসাদটি স্থাপিত। প্রতিটি থামে লতাপাতার কারুকাজ করা। প্রাসাদটির স্থাপত্যে করিন্থীয়-গ্রীক শৈলী অনুসরণ করা হয়েছে।

ঋষিকেশ দাশ ভবন নির্মাণের কিছুদিন পর দেউলিয়া হয়ে যান। ১৯৩৭ সালে রোজ গার্ডেন বিক্রি হয়ে যায় খান বাহাদুর আবদুর রশীদের কাছে। এর নতুন নামকরণ হয় ‘রশীদ মঞ্জিল’।

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ১৯৬৬ সালে কাজী হুমায়ুন বসির ভবনটির মালিকানা লাভ করেন। ১৯৭০ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘বেঙ্গল স্টুডিও’কে ইজারা দেয়া হয়। এ সময়ে চলচ্চিত্রের সূটিং স্পট হিসাবে এই ভবনটি ব্যবহৃত হয়। এখানে চিত্রায়িত কাহিনী চিত্র ‘হারান দিন’ এ রোজ গার্ডেনের সেই সময়কার চিত্র সংরক্ষিত আছে।

এরপর ১৯৯৩ সালে কাজী হুমায়ুন বসিরের বংশধর কাজী রবিক বাড়িটির মালিকানা ফেরত পান। ১৯৮৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই প্রাসাদটি সংরক্ষণ তালিকাভুক্ত করে।

Print Friendly

Related Posts