`বিচারের বাণী’ একটি ব্যতিক্রমী প্রকাশনা

সাগর জামান : জেলা লিগ্যাল এইডের চেয়ারম্যান এবং মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে মাগুরা থেকে প্রকাশিত হয়েছে “বিচারের বাণী” শীর্ষক একটি ব্যতিক্রমী স্মরণিকা।

মোট বিশটি অনবদ্য প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এ প্রকাশনায়। বিষয় ভিত্তিক রচনার পাশাপাশা অন্য অনুষঙ্গের অবতারণা ঘটেছে “বিচারের বাণী”তে। পেশাদার লেখক না হয়েও এ প্রকাশনার লেখিয়েরা লৈখিক দক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রকাশনা শিল্পে নান্দনিকতার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন।

প্রবন্ধের পাশাপাশি কবির হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত অনুভূতি বাণীবদ্ধ হয়েছে “বিচারের বাণী”তে স্থান পাওয়া কবিতায়। গুণগতমান উন্নত মুদ্রণ আর সৃজনশীল প্রজ্ঞার স্ফুরণ এই প্রকাশনাকে সুধীমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত করেছে।

আইন বিষয়ক প্রাসঙ্গিক রচনা সমূহের বাইরে, “স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের মৌলিক দলিল -একটি প্রয়োজনীয় সহজ পাঠ” শীর্ষক রচনা এই প্রকাশনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রা যোগ করেছে। এই প্রবন্ধের রচয়িতা শেখ মফিজুর রহমান তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন ঋজুভাবে। সাবলীল ভাষা বিন্যাস আর প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত দিয়ে তিনি রচনা করেছেন এই প্রবন্ধটি।

উদ্ধৃতি দেয়া যেতে পারে, “কাউকে ভালোবাসতে চাইলে, তার সম্পর্কে জানতে হবে, তাকে চিনতে হবে তবেই তাকে প্রকৃত ভালোবাসা যাবে। তেমনি একটি দেশে জন্মালেই সে দেশ আপন হয় না। দেশকেও জানতে হবে। এর ইতিহাস খুঁজতে হবে। তবেই সে দেশকে ভালোবাসা যাবে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি একটি মহান মুক্তিযুদ্ধের ফসল। একটি লোকায়িত জাতি হিসাবে বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আত্মপরিচয়ের সুদীর্ঘ সংগ্রামে লিপ্ত। সুখে দুঃখে এক হয়ে বেঁচে থাকার সুতীব্র আকাঙ্খায় বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র গঠনে অনুপ্রেরণা যোগায়। আর সেই অনুপ্রেরণার সূত্র ধরেই আসে মহান একাত্তর। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সব থেকে গৌরবোজ্জল অধ্যায়।

বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের আদি অনুপ্রেরণার উৎস খুঁজে পেতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র একটি অনন্য দলিল। ”

এভাবে অর্থালংকারের মাধ্যমে এই প্রবন্ধের সূচনা করে বিশদভাবে প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা ও গুরুত্ব যুক্তিসম্মত তথ্য উপাত্ত দিয়ে উপস্থাপন করেছেন শেখ মফিজুর রহমান। তিনি গভীর অন্বেষণের মাধ্যমে চিরসত্যকে উদঘাটন করতে পেরেছেন। এই রচনার ভেতর বোদ্ধা মননশীল একজন লেখকের পরিচয় পাওয়া গেছে ।

মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক তাঁর “চলমান আইনগত সহায়তা কার্যক্রম ও করণীয়” শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি প্রাসঙ্গিক ভাবনা নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি তাঁর প্রবন্ধের সূচনায় বলেছেন “সকলেই আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী,এই ধারণা হতেই জনকল্যাণকারী রাষ্ট্রসমূহে আইনগত সহায়তার উৎপত্তি। বাংলাদেশ আইনগত সহায়তা আইন ২০০০ ” এর প্রবর্তনের পূর্বে সরকারিভাবে আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য এ দেশে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ছিলো না। কোড অব সিভিল প্রসিডিউর অনুযায়ী নিঃস্ব ব্যক্তির দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়েরের সীমিত সুযোগ থাকলেও তা ছিল প্রক্রিয়াগতভাবে জটিল। অপর দিকে নতুন আইনটি প্রবর্তনের পর আইনি সহায়তা সহজে প্রাপ্তির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।

“বিচারের বাণী”তে প্রকাশিত প্রতিটি রচনা পাঠককে আকৃষ্ট করার উপযোগী। এর আরো একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হলো প্রতিটি অধ্যায়ে আলাদা চিত্তাকর্ষক শোভন প্রচ্ছদ।

অসচ্ছল সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থসামাজিক কারণে বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অসমর্থ বিচার প্রার্থীকে আইনি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি এধরণের ব্যতিক্রমী প্রকাশনা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। মাগুরা জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির প্রকাশনায় “বিচারের বাণী” কে জানার অনাবিল ভুবনের অনন্য প্রবেশদ্বার হিসাবে চিহ্নিত করা যায়।

এধরনের প্রকাশনা অব্যাহত থাবুক, খুলে যাক জ্ঞানের সব ক’টা কপাট এমনটাই প্রত্যাশা করি।

Print Friendly

Related Posts