ভোলায় বাংলাদেশের পতাকা উড়েছিল ৭১-এর ৩ মার্চ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ভোলায় পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল।

অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম থেকেই সারা দেশের সাথে ভোলায়ও স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল হতে থাকে। ৩ মার্চ সকাল থেকেই এখানকার ছাত্র-জনতা মিলে রাজপথে নেমে জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত করে। সদর রোডের বরিশাল দালানের সামনে পথ সভা শেষে মিছিল সহকারে তৎকালীন মহাকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে (বর্তমান হিসাব রক্ষন অফিস) গিয়ে পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে পোড়ানো হয়। উত্তোলন করা হয় লাল-সবুজের বাংলাদেশের পতাকা।

এ ঘটনায় ভোলায় মুক্তি পাগল মানুষের মনোবল আরো বেড়ে যায়। তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহের এ তথ্য জানান।

মুক্তিযোদ্ধা তাহের জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৭০ এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে তাল-বাহনা শুরু করে। এর প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ চলছিলো। বহু জায়গায় পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে অনেক মানুষ মারা যায়। ক্রমশই পশ্চিম পাকিস্তানীরা বুঝতে পরেছিল যে বাঙালীরা তাদের সাথে আর থাকবেনা।

তিনি আরো বলেন, এ আন্দোলন আরো বেগবান ও পাক সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য ৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে আ সম আব্দুর রবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ কার্যক্রমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে আমরা ভোলার মুক্তি পাগল ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেই। ৩ মার্চ সকাল থেকেই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সদর রোডে জড়ো হতে থাকে। জয় বাংলা, তোমার আমার ঠিকান-পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার নেতা-আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছিল রাজপথ।

তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের ভোলা মহাকুমার সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আনোয়ার হোসেন জানান, পাকিস্তানী বাহিনীর নানা অত্যাচার ও নির্যাতনের ফলে আমাদের (ছাত্রদের) মনে তাদের পতাকার উপর প্রচন্ড ঘৃণা জন্মেছিল। ফলে সেদিন ৩মার্চ মিছিল সহকারে মহাকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থান নেই আমরা। মুহূর্তের মধ্যে পাক পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। একই স্থানে উড়ানো লাল সবুজের পতাকা।

মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন আরো জানান, সেদিন ছাত্রলীগ নেতা ছালেহ আহমেদ, জুলফিকার আহমেদ, ছাইফুর রহমান, ফজলুল কাদের মজনু, ওবয়দুল হক বাবুল, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মাফুজুর রহমান বাচ্চু, মুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহের, মিন্টু দেবনাথ, সাংবাদিক আফছারউদ্দিন বাবুলসহ আরো অনেকে অংশগ্রহণ করেন। মূলত ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে মার্চের সকল আন্দোলনে এখানে ছাত্র জনতা অংশগ্রহণ করেন।

তিনি বলেন, পরবর্তিতে ৭ মার্চ জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা মুক্তির সংগ্রামকে আরো বেগবান করেছে। তাই নানা কারণে মার্চ মাস আমাদের প্রেরণার উৎস বলে মনে করেন এ মুক্তিযোদ্ধা।

বাসস

Print Friendly

Related Posts