মুজিববর্ষের ক্ষণগণনায় যত আয়োজন

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ।জন্মশতবার্ষিকীর মাহেন্দ্রক্ষণ আজ। জন্মশতবার্ষিকীর মাহেন্দ্রক্ষণও আজ।বর্ণাঢ্য সংগ্রামবহুল জীবনের অধিকারী বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেয়া স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী জীবনের অবসান ঘটিয়ে লন্ডন হয়ে ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

চলতি বছরের ১৭ মার্চ তাঁর জন্মগ্রহণের শততম বছর পূর্ণ হবে। ইতোমধ্যেই আগামী ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘মুজিব বর্ষ’ ঘোষণা করা হয়েছে।

ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জন্ম শতবর্ষ’ উদযাপনের কাউন্টডাউন শুরু হচ্ছে আজ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয়ভাবে বিকেলে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে মুজিব বর্ষের কাউন্টডাউন অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

এরপর প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও সকল পাবলিক প্লেসে একই সঙ্গে কাউন্টডাউন শুরু হবে। এছাড়া সারা দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের ২৮টি পয়েন্টে, বিভাগীয় শহরগুলো, ৫৩ জেলা ও দুই উপজেলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীতে মোট ৮৩টি পয়েন্টে কাউন্টডাউন ঘড়ি বসানো হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে একটি বাস্তবায়ন কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, আওয়ামী লীগের ১০ জন সিনিয়র নেতা, বর্তমান সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, ঢাকার দুই মেয়র, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুজন সাবেক গভর্নর, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মী।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব কবি ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জাতির পিতার শততম জন্মবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবেও কর্মসূচি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারি আতশবাজি উৎসবের মাধ্যমে শুরু হবে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র, প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন, ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ এবং হাতে হাত রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি গড়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণ।

এছাড়া কনসার্টসহ নানা আনন্দ আয়োজন ও রক্তদানসহ সেবাধর্মী কর্মসূচি রয়েছে। ১৭ মার্চ মূল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বঙ্গবন্ধুর সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্বকে। তাদের মধ্যে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ প্রমুখ।

মুজিববর্ষের মূল উৎসব শুরু হবে আগামী ১৭ মার্চ থেকে। চলবে পরের বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত। মাঝখানের পুরো সময়টাকে মুজিববর্ষ পালিত হবে। বছর ব্যাপী উৎসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবের প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশ করা হবে। গান, কবিতা, নৃত্যায়োজন, নাটক, সিনেমাসহ সব মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে বঙ্গবন্ধুর কীর্তি। সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠন, রাজনীতিবিদ, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতি কর্মীর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।

১৭ মার্চ সূর্যোদয়ের সময়ই ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হবে ম‚ল অনুষ্ঠান। এদিন ঢাকা ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় একই সঙ্গে অনুষ্ঠান শুরু হবে। সকালে টুঙ্গিপাড়ায় থাকবে জাতীয় শিশু দিবসের নানান আয়োজন। এরপর বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে মূল অনুষ্ঠান। প্রকাশ করা হবে জন্মশতবার্ষিকীর বিভিন্ন স্যুভেনির, স্মারক বক্তৃতা, অনুষ্ঠিত হবে দেশি-বিদেশি শিল্পীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সারা দেশেই হবে আনন্দ র‌্যালি। সাজানো হবে গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা, সড়কদ্বীপ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৭ মার্চের মূল আয়োজনে থাকবেন বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্বরা।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের মানুষের জন্য একশ’ ডিজিটাল সার্ভিস দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। দেশের মানুষ এর আগে ৪০ ধরনের সেবা পেয়েছেন। এবার আরও ৬০ ধরনের সেবা যুক্ত হচ্ছে। সরকারী এসব এখন মোবাইলেই পাওয়া যাবে। মুজিববর্ষকে কেন্দ্র করে লোগো উন্মোচন করেছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। নির্মিত হয়েছে একটি ওয়েবসাইট। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বর্ষটি স্মরণীয় করে রাখতে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।

Print Friendly

Related Posts