মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় ৫ জিডি

নিজস্ব প্রতিনিধি: চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (ভাইস চেয়ারম্যান) মবিন সুজনের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়া ও সরকারি ঘর দেয়ার নাম করে টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে মতলব দক্ষিণ থানায় জিডি করেছেন পাঁচ ব্যক্তি (জিডি নং-১০২০)।

জিডিতে উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের ৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার নাসিমা বেগমসহ কাউসার আলম পান্না (পিতা-মজিবুর রহমান) ও নারায়ন মজুমদারকে বিবাদী করা হয়।

গত ২৯ এপ্রিল এ জিডিগুলো করেন, উপজেলার নায়েরগাঁও ইউনিয়নের পাটন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তুহিন ফাতেমা, নারায়নপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের রিক্সাচালক মো; জাহাঙ্গির, একই ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের রিক্সাচালক মো: ছানাউল্লাহ, একই গ্রামের কৃষক মো: সুবহান ও রিক্সাচালক মো: হাকিম।

জিডিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তুহিন ফাতেমা উল্লেখ করেন, ৩ বছর আগে মো. মবিন সুজন (বর্তমানে উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) আমার ছেলেকে চাকরি দেবে বলে দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু তিনি অদ্যবধি চাকরি তো দেনইনি, টাকা চাইলে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। বর্তমানে আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।

কালিকাপুর গ্রামের রিক্সাচালক মো. জাহাঙ্গির উল্লেখ করেন, বিগত ৩ বছর আগে নারায়নপুর ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার নাসিমা বেগম দালান ঘর দিবে বলে ৩০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু সে কিছুদিন আগে আমাকে সরকারি টিনের ঘর দিয়ে বলে আপাতত এই ঘরে থাক, পরে দালান ঘর দিব । কিন্তু সে দালান ঘর না দিয়ে বর্তমানে সে মো. মবিন সুজনকে দিয়ে আমাকে পুলিশের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বর্তমানে আমার পরিবার নিরাপত্তহীনতায় ভূগছে।

গোবিন্দপুর গ্রামের রিকশাচালক মো: ছানাউল্লাহ উল্লেখ করেন, নারায়নপুর ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার নাসিমা বেগম চার রুমের দালান ঘর দেয়ার নাম করে ভাইস চেয়ারম্যান মবিন সুজনকে দিবে বলে প্রথমে ৩০ হাজার টাকা নেয় এবং এরপর বিভিন্ন সময়ে আরো ২০ হাজার টাকা নেয়। পরর্বতীতে একটি দালান ঘর দিলেও উক্ত ঘরের কন্ট্রাক্টর কাউসার আলম পান্না এলাকার একটি স্কুল ঘরের পুরাতন ইট দিয়ে কাজ শুরু করে এবং ৩০ বস্তা সিমেন্ট দাবী করে। আমি সিমেন্ট কিনে না দেয়ায় ঘরের কাজ না করে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলছে এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বর্তমানে আমার পরিবার নিরাপত্তহীনতায় ভূগছে।

একই গ্রামের কৃষক মো. সোহান তার জিডিতে উল্লেখ করেন, ভাইস চেয়ারম্যান মো. মবিন সুজনকে ৮ মাস আগে ওয়ার্ডের মেম্বার শাইজদ্দিন ঢালীর মাধ্যমে তিন মাসের মধ্যে তিন রুমের দালান ঘর দিবে বলে আমার কাছ থেকে ৪৮ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু ৬ মাস পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘জমি আছে ঘর নাই’ এমন ব্যক্তিদের দালান ঘর আসে। সেখান থেকে আমাকে একটি ঘর দেয় কিন্তু খরচ বাবদ আরো ১৬ হাজার টাকাসহ ৬৪ হাজার টাকা নেয়। এ ঘর নির্মানে কন্ট্রাক্টর কাউসার আলম পান্না স্কুলের পুরাতন ইট দিয়ে কাজ শুরু করে এবং ৩৫ বস্তা সিমেন্ট দাবি করে। কিন্তু আমি সিমেন্ট দিব না জানালে সে কাজ বন্ধ রাখে এবং আমাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এতে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

গোবিন্দপুর গ্রামের রিকশাচালক মো. হাকিম তার জিডিতে উল্লেখ করেন, ইউপি মেম্বার শাইজদ্দিন ঢালীর মাধ্যমে ভাইস চেয়ারম্যান মো. মবিন সুজন একটি টিনের ঘরের নাম করে ৮ মাস আগে ১৯ হাজার টাকা নেয়। পববর্তীতে একটি ঘর দিলেও মালামাল ক্রয়ের মাধ্যমে আরো ১০ হাজার টাকা খরচ করায়। কিন্তু আমি পরে জানতে পারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিনামূল্যে এ ঘর দিয়েছেন। এমতাবস্থায় আমি কিছু বললে আমাকে ভয়ভীতি দেখায়।

এ ব্যাপরে মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইন-চার্জ স্বপন কুমার আইচ বলেন, তাদের অভিযোগ পেয়েছি, জিডি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মবিন সুজনের সাথে এ বিষয়ে তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Print Friendly

Related Posts