গ্রামের স্মৃতি ॥ স্বপন ঘোষ

পাখ-পাখালির কাকলীতে ভরা, ছায়াঢাকা সেই গ্রাম,
এখনও টানে কী মোহে আমারে, মনে পড়ে অবিরাম৷
নানান কাজে ব্যস্ত থাকায়, হয়না সময় যাওয়ার,
ইচ্ছে জাগে ছায়া গায়ে মেখে, হাওয়ার পরশ পাওয়ার৷
হৃদয়ে আঁকা গ্রামটি আমার, পটের ছবির মত,
অনাবিল সুখ বিলায় আমারে, দোলা দেয় অবিরত৷
সকাল হলেই স্লেট-পেন্সিল, আদর্শলিপি সাথে,
পাঠশালাতে রওনা হতাম, মেম্বর বাড়ির পথে৷
অ আ শেখাতেন কালিপদ স্যার, কতনা যতন করে,
স্মৃতির জানালা খুলে দেখি আর, সেই কথা মনে পড়ে৷
কাক -কালোজল, দীঘল পুকুর, শান বাঁধানো ঘাট,
বিকালে সেখানে বসাতো মেয়েরা জমাটি কথার হাট৷
মাছের লোভে পানকৌড়ি এসে, পুকুরে দিত যে ডুব,
ঠোঁটে মাছ তুলে আনতো যখন, আনন্দ পেতাম খুব৷
শীর্ণ নদীটি বহমান ছিলো, গ্রামের পূব পাশ ধরে,
সে নদীর জলে ডুব সাঁতার হতো, এপার-ওপার করে৷
সে নদীর জল তৃষ্ণা মেটাতো, জুড়াতো তাপিত প্রাণ,
আজও শুনি যেন বুকের গহীনে, সে নদীর কলতান৷
বোসদের বাড়ির দুর্গাপূজায়, আনন্দ হত যে কত!
সেন বাড়ির কালি পূজায়ও হত, আনন্দ সেই মত৷
ফসল কাটা শেষ হলে পরে, অঘ্রাণের মৌসুমে,
সৌখিন দলের যাত্রাপালা, উঠতো যে বেশ জমে৷
বড় বাড়ির বিশাল উঠানে, হ্যাজাক বাতি জ্বেলে,
রাতের যাত্রায় উঠত মেতে, জোয়ান, বুড়ো, ছেলে৷
সাগর ভাসা,সোরাব-রুস্তম,রামের যাত্রা দেখে,
রাত শেষে বাড়ি ফিরতাম চোখে, ঘুমের কাজল মেখে৷
শীতের পিঠা-পুলির কথা, মনে পড়ে বারবার,
মায়ের হাতের মিঠে কড়া পিঠের, স্বাদ পাবো কি আর?
মন্ডল বাড়ির অনুকূল কাকার, বউয়ের হাতের পুলি,
কত যে প্রিয় ছিলো আমাদের, কেমনে সেকথা ভুলি?
ফাল্গুনের শিব চতুর্দশীতে, শিবের পূজা হত,
আমাদের বাড়ির মন্দিরে তার, আয়োজন ছিলো কত!
রাত ভর চলতো পূজার উত্সব, ঢাক-কাঁসরের বোল,
খিচুড়ি-ক্ষীরের প্রসাদ পেয়ে, মানুষের কি কলরোল!
চৈত সংক্রান্তি নীলের পূজায়, বোস বাড়ির মেলায়,
দল বেঁধে সবাই যেতাম ছুটে, ভর দুপুরের বেলায়৷
জলে ভেসে ওঠা চড়ক গাছে, হতো যে চড়ক পূজা,
মেলায় খেতাম মন্ডা-মিঠাই, গজা আর বারোভাজা৷
উত্সুক হয়ে থাকতাম আবার, নীল আসবে কবে,
আবার আমরা মিলব সবাই, চৈতালি উত্সবে?
মনে পড়ে সেই ফেলে আসা গ্রাম, আর মানুষের কথা,
স্মৃতির পাতায় হাতড়ে বেড়াই, মনে জাগে বড় ব্যথা৷
বুকে জেগে রয় সেই স্মৃতিময়, ফেলে আসা গ্রামখানি,
আজও যেন আমায় ডাকে বারবার, দেয় শুধু হাতছানি৷
স্বপন ঘোষ
২৯.০৬.২০২০ খ্রিঃ
Print Friendly

Related Posts