অপরিকল্পিতভাবে নদী খননের মাটি বিক্রিতে হুমকিতে সেতু

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার অরঙ্গবাদ সেতুর নিচ থেকে নদী খননের মাটি বিক্রির ফলে হুমকিতে পড়েছে সেতু। বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের অরঙ্গবাদ সেতুর নিচের মাটি ড্রাম ট্রাক ও ট্রলি দিয়ে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে এসব মাটি। এ সকল ড্রাম ট্রাক ও ট্রলি সেতুর একেবারে গোড়া দিয়ে উঠানামা করায় মাটি দেবে যাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমের সামান্য বৃষ্টিপাতে সেতু ধসের আংশকা রয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।

এছাড়া সেতু থেকে আঞ্চলিক সড়ক হয়ে সিংগাইর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মারাত্মকভাবে। অপরিকল্পিতভাবে নদী খননের মাটি ডাম্পিং করায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আশেপাশের ফসলি জমির মালিকেরা। অথচ নিলাম পাওয়া ব্যক্তিদের এসব মাটি ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, বাড়ি ঘরের ক্ষতি হলে সেগুলো মেরামতের শর্তে নিলাম দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া ডাম্পিং স্পটের সীমানার বাইরে থেকেও বাড়তি মাটি বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে নিলামে মাটি ক্রয় করা এসব মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মে মাসের ২৮ তারিখে অরঙ্গবাদ ব্রীজের নিচ হতে পূর্বদিকে (নদীর বাম তীর) ১৬ হাজার ৪’শ ৭০ ঘনফুট, ৩৯ হাজার ২০০ ঘনফুট, ৫২ হাজার ৫০০ ঘনফুট ও পশ্চিম দিকে পারভেজের কুলবাগান পর্যন্ত ৩৬হাজার ৪০০ঘনফুট মাটি/ বালির ডাম্পিং স্পটের নিলাম আহবান করা হয়।

জুন মাসের ১ তারিখে অনুষ্ঠিত নিলামে সেতুর পশ্চিম পাশ ৬০ পয়সা দরে বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান সাকিব কার্যাদেশ পান। অপরদিকে পূর্বপাড়ে ৬৪ পয়সা দরে কার্যাদেশ পান মো. শাহাবুদ্দিন নামের এক ব্যক্তি।

এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে অরঙ্গবাদ সেতু নির্মান করাহয়। লার্জ ব্রীজ কন্সট্রাকশনের (এলবিসি) প্রকল্পের আওতায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতু নির্মান করা হয়। এলাকাবাসীরা বলেন, নিলাম পাওয়া ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় ইচ্ছে মতো মাটি নিচ্ছে। এতে করে সেতু, রাস্তাঘাট আশেপাশের বসতভিটার ক্ষতি হচ্ছে। ইটের সোলিংয়ের রাস্তায় সামান্য বৃষ্টি হলে চলাচল করা অযোগ্য হয়ে পড়ে। এছাড়া ডাম্পিং স্পটের নির্ধারিত মাটির বাইরেও নদীর পাড় থেকে মাটি নিচ্ছে এসব ব্যবসায়ীরা। এতে বর্ষা মৌসুমে আশেপাশের ফসলি জমিগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে বেতিলা মিতরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান সাকিব বলেন, নিয়ম মেনে মাটি নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাটি ব্যবসায়ী মো. শাহাবুদ্দিন জানান, সেতুর নিচ দিয়ে আমার সাইডের কোন ট্রাক যাতায়াত করে না। ব্রীজের সামনে পূর্ব পাশে রাস্তা ব্যবহার করলেও তা মেরামত করেই সাইড পরিচালনা করা হচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক এ্যাড. আজহারুল ইসলাম আরজু বলেন, সরকার জনগনের স্বার্থে নদী খননের পরিকল্পনা হাতে নিলেও অসৎ কিছু ব্যক্তিদের কারণে সে প্রকল্প তেমনভাবে কাজে আসছে না। অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন ও এর মাটি বিক্রি করে এক পক্ষ বেশ লাভবান হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন জানান, খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly

Related Posts