টাঙ্গাইলে ৯ উপজেলায় বন্যা, ৫শ গ্রাম প্লাবিত

আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলে আবারো বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ৪টি নদীর পানি বিপদসীমার উপরে রয়েছে। তবে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই আরও অবনতি হচ্ছে। জেলার ৯টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

তবে নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের গ্রামগুলো নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। নতুন নতুন রাস্তাঘাট ও ব্রিজ পানিতে ভেঙে যাচ্ছে। জেলার নিচু অঞ্চল ও চরাঞ্চলের অনেক গ্রামের ঘড়-বাড়ি, ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

এছাড়া ত্রাণ সহায়তাও পাচ্ছে না অনেকেই। বন্যায় জেলায় এখন পর্যন্ত ৩ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দেড় লক্ষাধিক মানুষ। হুমকির মুখে রয়েছে বিভিন্ন এলাকার রক্ষাবাঁধ। আর দ্বিতীয় দফার বন্যায় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে।

জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, শুক্রবার সকালে যমুনা নদীর পানি ১১ সে.মি. বৃদ্ধি বিপদসীমার ৭৬ সে.মি., ঝিনাই নদীর পানি ১২ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮৭ সে.মি. এবং বংশাই নদীর পানি ১০ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে ৬৫ সে.মি. বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধলেশ্বরী নদীর পানি ১ সে.মি. কমে বিপদসীমার ১৪৮ সে.মি. বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, জেলায় এখন পর্যন্ত টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, ভূঞাপুর, কালিহাতী, ধনবাড়ী, গোপালপুর, বাসাইল এবং মির্জাপুর উপজেলায় নিমাঞ্চল এবং চরাঞ্চলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এই ৯ উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের অন্তত ৫০৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

অপরদিকে ৫টি পৌরসভা আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে কালিহাতী এবং নাগরপুরে ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বন্যায় ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬৭২ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৪৩ হাজার ৩০০টি। আর পানিবন্দি লোক সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ২শ’ জন।

অপরদিকে ৭৩৭টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে এবং আরো আংশিক ১৭ হাজার ৪৫৬ টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ২ টি স্কুল নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আংশিক আরো ৬৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া নদীভাঙনে ১টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং আংশিক ৩৬ টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ৯ উপজেলার ৫৫২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, জেলায় এখন পর্যন্ত ২ কি.মি. সম্পূর্ণ কাচা রাস্তা এবং আংশিক ৩৪৯ কি.মি. কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপরদিকে ৭১ কি.মি. পাকা রাস্তা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও সম্পূর্ণ ৫টি ব্রিজ এবং আংশিক ৪৩টি ব্রিজ ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে টিউওবেল ১৪১ টি এবং ৫ কি.মি. আংশিক নদীর বাঁধ ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া জেলায় মোট ৩৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এই আশ্রয় কেন্দ্রের লোক সংখ্যা ৩ হাজার ১৬১ জন। ১১টি গবাদি পশুও আশ্রয় নেয়। ৯২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৬০০ মে.ট্রন জির চাল, নগদ ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। অপরদিকে শিশু খাদ্য ২ লাখ টাকা এবং গোখাদ্য ৬ লাখ টাকা এবং শুকনা প্যাকেট ৬ হাজার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এগুলো বিতরণ কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, প্রথম দফায় বন্যায় টাঙ্গাইলে ৩ হাজার ৮৩৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২৭ হাজার ২৩৩ জন। আর দ্বিতীয় দফায় বন্যায় এখন পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার) ৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে বোনা আমন, রোপা আমন (বীজতলা), আউশ, সবজি, লেবু রয়েছে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ফের নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামনে বন্যা পরিস্থিতি আরো ব্যাপক অবনতি হবে। বিভিন্ন এলাকার রক্ষাবাঁধ ভাঙনরোধে কাজ করা হচ্ছে। পানি সরে গেলে নদীভাঙন তীব্র হবে বলে তিনি জানান।

 

 

 

Print Friendly

Related Posts