গর্ভবতী ডায়াবেটিক মায়েদের চোখের যত্ন

 প্রফেসর ডা. সৈয়দ এ. কে. আজাদ
(চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞও ফ্যাকো সার্জন)
গর্ভকালীন মায়েদের যত্ন বললেই মনে হবে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের তত্বাবধানে নিয়মিত চেক আপ; কিছু নিয়মমাফিক রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাম, কিছু ভিটামিন এবং ভালো ভালো খাওয়ার উপদেশ। মা যদি হন ডায়াবেটিক রোগী, তবে পরিপর্যা এখানেই শেষ হবে না।
যে সমস্ত মায়েদের ডায়াবেটিস থাকে তাদের মনে রাখতে হবে গর্ভকালীন সময়ে তাদের চোখের দৃষ্টি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী আন্যতম। আগে থেকেই এইরুপ সমস্যা বিদ্যমান থাকতে পারে যা মায়েদের জানা নাও থাকতে পারে।
ঝূকিপূর্ণ যারা: যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস আছে এবং তা নিয়ন্ত্রনে নেই। সাথে উচ্চরক্তচাপ এবং রক্তে আতিমাত্রায় কোলেষ্টেরল। মদ্যপান ও ধূমপানে অভ্যস্থ। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী প্রাথমিক আবস্থায় কোন উপসর্গ নাও দিতে পারে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমেরিকায় ৪০% -৪৫% সদ্য সনাক্ত ডায়াবেটিস রোগীর বেলায় কমবেশী রেটিনোপ্যাথী পাওয়া যায় এবং এক্ষেত্রে অর্ধেকেই জানেন না তার চোখে সমস্যা আছে।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী কি: এটি চোখের এমন একটি অবস্থা যেখানে ডায়াবেটিসজ্বনিত কারনে চোখের রক্তনালীতে এক ধরনের পরিবর্তন আসে যার কারনে উক্ত রক্তনালী থেকে রক্তের জলিয় অংশ নি:সৃত হয় বা রক্তক্ষরণ হয়। ফলে দৃষ্টি সমস্যা এমনকি অন্ধত্ব দেখা দেয়।
চোখ পরীক্ষা কেন প্রয়োজন: ডায়াবেটিস হলো কর্মক্ষম জনগোষ্ঠির অন্ধত্বের অন্যতম কারন। এই অন্ধত্ব প্রতিরোধ করতে হলে রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত হওয়া জরূরী। গর্ভাবস্থায় যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও রেটিনোপ্যাথী আছে তাদের চোখের অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। যাদের আগে থেকে রেটিনোপ্যাথী নাই তাদের বেলায় সমস্যাটি নূতন করে দেখা দিতে পারে বিশেষ করে যাদের রক্তের সুগারের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত বা বেশী।
চোখ পরীক্ষা কখন কিভাবে: সম্ভব হলে গর্ভাবস্থার আগেই একবার চোখ পরীক্ষা করানো। যদি রেটিনোপ্যাথী থাকে তবে রেটিনোপ্যাথীর মাত্রা বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। আর যদি রেটিনোপ্যাথী না থাকে তবে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের মধ্যে ২য় বার চোখ পরীক্ষা করানো। যদি গর্ভকালীন পরীক্ষায় রেটিনোপ্যাথী ধরা পড়ে তবে ২/৩ মাস অন্তর নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে হবে। আর যদি এর মধ্যে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা; হঠাৎ কম দেখা; একটা জিনিসকে দুইটা দেখা ; চোখের সামনে কালো স্পট দেখা ইত্যাদি উপসর্গ পরিলক্ষিত হয় তবে সাথে সাথে চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। চোখ পরীক্ষার সময় অবশ্যই চোখের দৃষ্টি , চোখের প্রেসার, রেটিনা পরীক্ষা বা অফথেলমোস্কোপি এবং প্রয়োজন হলে ওসিটি করে দেখতে হবে।
রেটিনোপ্যাথী প্রতিরোধে করণীয়: ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। উচ্চরক্তচাপ থাকলে তাও নিয়ন্ত্রন করতে হবে। কোলেষ্টেরলের মাত্রা বেশী হলে তাও নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। মদ্যপান ও ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা হালকা কাজের মধ্যে থাকতে হবে। অনেকেই মনে করেন গর্ভাবস্থায় চোখের চিকিৎসা করানো ঠিক নয়। অথবা ডেলিভারির পরে চোখের ব্যবস্থা নেওয়াই ভালো। এটি একদমই ভ’ল ধারনা। কারন চোখের পরীক্ষায় যেসমস্থ ড্রপ ব্যবহার করা হয় তা গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিরাপদ। চিাকৎসায় লেসার প্রয়োগও মা ও গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ। তাই দেরী না করে একজন বিশেষজ্ঞ চোখ চিকিৎসকের শরনাপন্ন হোন।
লেখক: চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন সাবেক বিভাগীয় প্রধান, চক্ষুরোগ বিভাগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
চেম্বার: আল-রাজী হাসপাতাল (৩য় তলা), ফার্মগেট, ঢাকা। ০১৫৫২-৪০৯০২৬, ০১৭১০-৭৩৬০০৮

 

Print Friendly

Related Posts