টাইগাররা জিততে চায় আজ, পরিবর্তন আসতে পারে দলে

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ শনিবার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ভেতর দিয়ে গেছেন দেশের মানুষ। হাজার কিলোমিটার দূরে ভারতের নাগপুরে বসেও দেশের পরিস্থিতি বুঝতে অসুবিধা হয়নি ক্রিকেটারদের। নাগপুরের টি২০ ভেন্যুতে বসেও দেশের খোঁজ রেখেছেন তারা।

এই উদ্বেগের ভেতরেও গতকাল টি২০’র শেষ প্রস্তুতি নিতে হলো মাহমুদুল্লাহদের। কারণ নাগপুরে আজ টি২০’র সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচ। এই ম্যাচ ঘিরে বড় স্বপ্ন ক্রিকেটারদের। সিরিজ জিতে দেশের মানুষকে উৎসর্গ করার ইচ্ছে খেলোয়াড়দের। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আশাবাদী। টাইগাররা ভালো ক্রিকেট খেলে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতে নেবে।

একইভাবে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাও উদগ্রীব সিরিজ জিততে। এ মুহূর্তে ভারতের চেয়েও বাংলাদেশের জন্য জয়টা খুব প্রয়োজন। আর তা অনুধাবন করেই জিততে মরিয়া মাহমুদুল্লাহরা।

এক একে সমতায় থাকা দ্বিপক্ষীয় টি২০ সিরিজের শেষ ম্যাচটি রূপ নিয়েছে অলিখিত এক ফাইনালে। কারণ বিজয়ী দলের হাতে উঠবে টি২০’র ট্রফি। এদিক থেকে নাগপুরের বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে আজকের ম্যাচটি ‘ফাইনাল’।

এই মিশনে সফল হতে চাইলে মাঠে খেলতে হবে সেরাটা। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই স্বাগতিকদের চেয়ে ভালো করতে হবে টাইগারদের। ক্রিকেটাররা  চান, রাজকোটের হার ভুলে নাগপুরকে দিল্লি বানাতে।

টাইগার প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর জয়ের সহজ কৌশলটা বললেন গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে, ‘তাদের বোলিং আক্রমণ খুবই ভালো। আমরা ভালো ব্যাট করতে পারলে এবং নিজেদের কৌশল ঠিক রাখতে পারলে স্বাগতিক বোলারদের চাপে রাখা সম্ভব হবে।’ এই মন্ত্র নিয়ে খেলেই দিল্লিতে জিতেছে বাংলাদেশ।

রাজকোটের ব্যাটিং স্বর্গে সেটা সম্ভব হয়নি। প্রতিটি বিভাগেই ছোট ছোট ভুল করায় ম্যাচ হারতে হয় ৮ উইকেটে। এই ভুলগুলো শুধরে নিতেই গতকাল নিবিষ্ট অনুশীলন করা। ভিডিও সেশন দেখে নিজেদের সচেতন করার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের দুর্বলতা জেনে নিয়েছেন খেলোয়াড়রা।

দিল্লিতে মাঠের বৃত্ত ছিল ছোট, পিচ ছিল স্লো ও লো। স্বাগতিকদের চেয়েও যেখানে বেশি সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। বোলাররা দারুণ কার্যকর ছিলেন জয়ের ম্যাচে। সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম দারুণ ব্যাট করেছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচে মুশফিক রান না পাওয়ায় ১৫৩ রানের স্কোর করতে পারে টাইগাররা। ব্যাটিং স্বর্গে রোহিত শর্মা ছিলেন দুর্বার। বোলারদের গুঁড়িয়ে দিয়ে বড় ইনিংস খেলেন তিনি। নাগপুরেও ব্যাটে ঝড় তুলতে চান রোহিত। সংবাদ সম্মেলনে চোখেমুখে উচ্ছ্বাস করে বললেন, ‘আমি বড় স্কোর করতে চাই।’ ভারত নেতার বড় ইনিংস করা মানে বিপর্যস্ত প্রতিপক্ষ।

টাইগার বোলারদের প্রধান লক্ষ্যই হওয়া উচিত ভারত অধিনায়ককে শুরুতেই সাজঘরে ফেরত পাঠানো। ভিডিও অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরনের কাছ থেকে সে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এখন মাঠে প্রয়োগ করতে পারলেই হলো। কোচ বলছেন, আত্মবিশ্বাসে উজ্জীবিত তার শিষ্যরা নাগপুরে ঝলক দেখাতে পারবেন।

রাজকোটের মতো নাগপুরের মাঠের পরিধিও বিশাল। এই মাঠে বড় স্কোর করতে গ্যাপ শটস বেশি কার্যকর। স্বাগতিকরা এদিক থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও কৌশলী বাংলাদেশ দলের ওপর ভরসা করতে পারে কোচিং স্টাফ। অবশ্য স্লো ও লো উইকেট হলে অন্য কথা। এ ধরনের উইকেটে টাইগাররা ভালো করে। এই মাঠে এখন পর্যন্ত যে ১১টি আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ হয়েছে, তাতে বড় স্কোর তেমন একটা দেখা যায়নি। ইনিংস গড় স্কোর ১২২ থেকে ১২৪ রানের। তবে টি২০ লিগের ম্যাচ বিশ্নেষণ করে গড় ইনিংস স্কোর ১৫৫ রান পেয়েছেন টাইগার কোচ ডমিঙ্গো। সেদিক থেকে আশাবাদী হওয়ারই কথা। তবে এই ম্যাচেও টসের বড় ভূমিকা থাকবে বলে জানান কোচ, ‘আমার মনে হয় শিশির ফ্যাক্টর হবে। টসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দুই দলই পরে ব্যাট করতে চাইবে।’

সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশকে একাধিক পরিবর্তন আনতে হতে পারে। বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের গোড়ালির পুরোনো ব্যথা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে বলে জানান প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। যদিও গতকাল নেটে কয়েক ওভার বল করেছেন তিনি। তবে তাকে নিয়ে গতকাল পর্যন্ত অনিশ্চয়তার খবর পাওয়া যায়নি। বরঞ্চ খেলা হচ্ছে না ডানহাতি পেসার শফিউল ইসলামের। তার জায়গায় স্পিনিং অপশন হিসেবে নেওয়া হচ্ছে তাইজুল ইসলামকে। কুঁচকিতে টান পড়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের জায়গায় ঢুকছেন মোহাম্মদ মিঠুন।

ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারানে জানান, অনুশীলনে দৌড়ানোর সময় এই চোট পান মোসাদ্দেক। ড্রেসিংরুমের সামনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা গেছে তাকে। তবে এই ম্যাচের টেকনিকের চেয়েও মনস্তাত্ত্বিক গেম বেশি কাজে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ধরনের কৌশলে স্বাগতিক ভারত পরিপকস্ফ। মুশফিক-মাহমুদুল্লাহদেরও পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। সুতরাং ম্যাচ জিততে প্রয়োজন সঠিক রণকৌশল এবং অলআউট ক্রিকেট খেলা।

Print Friendly

Related Posts