শেখ জামালের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাহ মতিন টিপু: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের দ্বিতীয় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের ৭০তম জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

শেখ জামাল ছিলেন সংস্কৃতিপ্রেমী ও একজন ক্রীড়াবিদ। তিনি ছিলেন চৌকস ও মেধাবী সেনা কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লং কোর্সের প্রথম ব্যাচের কমিশন্ড অফিসার।

লেখাপড়া করেছেন ঢাকার রেসিডেনসিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এখান থেকে এসএসসি ও ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে গৃহবন্দি হন তিনি। বড় ভাই শেখ কামাল বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। একদিন সেই পথ ধরলেন শেখ জামালও। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য কিশোর শেখ জামাল ১৯৭১ সালের ৫ আগস্ট ধানমণ্ডির তারকাঁটার বেড়া দেওয়া পাকিস্তানি বাহিনীর বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে ভারতে যান। ধানমণ্ডি থেকে পালিয়ে ভারতের আগরতলা পৌঁছানো ছিল রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের স্বাধীনতার জন্য সেই ঝুঁকি নিয়েছিলেন তিনি। আগরতলা থেকে কলকাতা হয়ে ভারতের উত্তর প্রদেশের কালশীতে মুজিব বাহিনীর (বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স) ৮০ জন নির্বাচিত তরুণের সঙ্গে শেখ জামাল ২১ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষে যোগ দেন ৯ নম্বর সেক্টরে। যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর স্বাধীন দেশে ফিরে আসেন। ওই দিনই বিকেলে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তম আয়োজিত স্বাধীন বাংলায় ঢাকার পল্টনে প্রথম জনসভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি।

১৯৭৪ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকায় রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো। তিনি শেখ জামালকে যুুগোস্লাভ মিলিটারি একাডেমিতে সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। ১৯৭৪ সালের বসন্তে ঢাকা কলেজের ছাত্র জামাল যুগোস্লাভিয়ার মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু একেবারে ভিন্ন পরিবেশ, প্রতিকূল আবহাওয়া আর ভাষার অসুবিধার কারণে সেখানকার প্রশিক্ষণের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো শেখ জামালের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। মার্শাল টিটো তাকে ব্রিটেনের স্যান্ডহার্স্টে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পরামর্শ দেন।

স্যান্ডহার্স্টের শর্ট সার্ভিস কমিশনের সুকঠিন গ্র্যাজুয়েট কোর্সটির মেয়াদ ছিল প্রায় ছয় মাস—৩ জানুয়ারি থেকে ২৭ জুন ১৯৭৫। ৪০০ ক্যাডেটের মধ্যে বিদেশি ক্যাডেটের সংখ্যা ছিল ৩০। ১৯৭৫ সালের মে মাসের শেষের দিকে স্যান্ডহার্স্ট থেকে ক্যাডেটরা রণকৌশলগত চূড়ান্ত অনুশীলন এক্সারসাইজ ডাইনামিক ভিক্টোরিতে অংশগ্রহণ করতে পশ্চিম জার্মানিতে ব্রিটিশ আর্মি অন রাইন যান।

স্যান্ডহার্স্ট একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে এলে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের পোস্টিং হয় ঢাকা সেনানিবাসের দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। সেখানে বীরপ্রতীক ক্যাপ্টেন নজরুলের অধীনে ‘কোম্পানি অফিসার’ হিসেবে শেখ জামালের রেজিমেন্ট জীবনের হাতে খড়ি। দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলে জামালের চাকরিকাল ছিল প্রায় দেড় মাস।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিহত হন তিনি। বিপথগামী কয়েকজন সহকর্মীই তার ঘাতক।

জন্মদিনে শহীদ শেখ জামালকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন।দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন উপলক্ষে আজ সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শেখ জামালের সমাধিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ এবং তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ ছাড়া সহযোগী সংগঠনগুলোও নানা কর্মসূচি পালন করছে।

সূত্র: রাইজিংবিডি

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts