ব্যর্থ অভ্যূত্থানে তুরস্ক-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তেজনা চড়ছে। তুরস্ক এই অভ্যূত্থানের পিছনে মার্কিন মদতপুষ্ঠ এক ধর্মগুরুর মদত রয়েছে বলে অভিযোগ তুরক্সের। নির্বাসিত ওই ধর্মগুরুর প্রত্যর্পণও দাবি করেছে কামাল আতাতুর্কের দেশ। এক পদস্থ সরকারি আধিকারিক তো সরাসরি অভ্যূত্থানের জন্য আমেরিকাকেই দায়ী করেছেন।

গতকালের অভ্যূত্থানের প্রচেষ্টার সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানের পাশেই দাঁড়িয়েছিল আমেরিকা। অভ্যূত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর আমেরিকা ওই ধর্মগুরুকে দেশে ফেরত পাঠানোর দরজাও খোলা রাখছে। মার্কিন বিদেশ দফতরের পক্ষ থেকে সাফ জানানো হয়েছে, ব্যর্থ ওই অভ্যূত্থানের ক্ষেত্রে আমেরিকার কোনও ভূমিকা থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে এবং তা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পক্ষে ক্ষতিকারক।

উল্লেখ্য, বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ওই ধর্মগুরু ফেতুল্লাহ গুলেন দীর্ঘ সতেরো বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে । দেশ ছেড়ে মার্কিন মুলুকে পাড়ি দিয়েছিলেন ১৯৯৯ সালে। তার পর আর দেশের মাটিতে পা রাখার সুযোগ পাননি। কিন্তু তুরস্কে এই সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টার পিছনে তাঁরই ‘কলকাঠি’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এরদোগান সরকার। এখন তিনি পেনিসিলভ্যানিয়ার বাসিন্দা। ‘গুলেন মুভমেন্ট’ বলে একটা বড়সড় আন্দোলনের জন্মদাতা তিনি। গুলেন নিজেকে সুন্নি মৌলবি সইদ নুরসির শিষ্য বলে মানেন। তাঁর ধর্মীয় শিক্ষাতে রয়েছে গণতন্ত্র আর বিজ্ঞান। শুক্রবারের রাতের  অভ্যূত্থানের নিন্দাও করেছেন গুলেন।

তুরস্ক সরকার গুলেনের প্রত্যর্পণ দাবি করেছে। গতকাল টেলিভিশনে প্রদত্ত ভাষনে এরদোগান বলেছেন, আমেরিকা জঙ্গিদের প্রত্যপর্ণের দাবি করলে তুরস্ক তা কখনই প্রত্যাখ্যান করেনি। এ কথা উল্লেখ করে তিনি, গুলেনকে তুরস্কের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ওয়াশিংটনের কাছে আর্জি জানান।

তুরস্কের এক মন্ত্রী সুলেমান সোয়লু একধাপ এগিয়ে আমেরিকাকেই অভ্যূত্থানের জন্য দায়ী করেছেন। তুরস্কের বিদেশমন্ত্রী মেভলুট ক্যাভোসোগলু মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরির সঙ্গে কথা বলেন। কেরি তুরস্কের নির্বাচিত সরকারের প্রতি আমেরিকার সমর্থনের কথা জানান। তিনি বলেন, তুরস্ক উপযুক্ত প্রমাণ দিলে আমেরিকা গুলেনের প্রত্যর্পণের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে। উল্লেখ্য, এরডোগান দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ, গুলেন তাঁর সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এরদোগানের এই অভিযোগের সারবত্তা খুঁজে পায়নি আমেরিকা।  অভ্যূত্থানের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর কেরি বলেছেন, গুলেনের বিরুদ্ধে তুরস্ক সরকার উপযুক্ত প্রমাণ দিলে তাঁর প্রত্যপর্ণের অনুরোধ বিবেচনা করে দেখা হবে।

যে এরদোগান গুলেনকে দেশে ফিরিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর এত চেষ্টা করছেন, এক সময় কিন্তু তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন এই ধর্মগুরু। গোলমালটা শুরু হয় এরডোগান ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার তদন্ত শুরুর পর থেকে। প্রেসিডেন্টের ধারণা ছিল, তদন্ত শুরুর পিছনে গুলেনেরই হাত ছিল। যদিও সেই অভিযোগ কখনও প্রমাণিত হয়নি। তার পর থেকেই দু’জনের দূরত্ব ক্রমে বাড়তে থাকে।

Print Friendly

Related Posts