বিডিমেট্রোনিউজ॥ প্রথমবারের মত বাংলাদেশে এসে নয় ঘণ্টার সফর নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে টুইট করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর এক টুইটে তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশের রয়েছে উন্নয়নের অসাধারণ এক গল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ সাক্ষাৎ করে আমি আনন্দিত।”
সকালে ঢাকা পৌঁছানোর পর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে তিনি যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের দর্শনার্থী বইয়ে কেরি সেই ঘটনাকে বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশে মানুষের ‘অনন্যসাধারণ এক সাহসী নেতার’ জীবনাবসান হিসেবে। “কিন্তু আজ বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে, তারই কন্যার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।”
কেরি লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়তে বাংলাদেশের এই অভিযাত্রায় বন্ধু হিসেবে সঙ্গী হতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র ‘গর্বিত’। “শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে একসঙ্গে কাজ করে যেতে চাই আমরা।”
সোমবার সকালে ঢাকা পৌঁছানোর পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে যান জন কেরি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
এছাড়া তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ধানমন্ডির এডওয়ার্ড কেনেডি সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে তরুণদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেন।
এরপর তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে। বৈঠক শেষে রাজধানীর এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার ফর পাবলিক সার্ভিস অ্যান্ড আর্টস (ইএমকে সেন্টার) মিলনায়তনে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন জন কেরির সঙ্গে।
মিরপুরে একটি পোশাক কারখানাও ঘুরে দেখেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জন কেরির বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যৌথভাবে কাজ করার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এ বিষয়ে আরেক টুইটে কেরি লিখেছেন, “নিরাপত্তা এবং সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সহযোগিতাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে বাংলাদেশে আলোচনা করেছি আজ।”
এরপর সফর শেষে জন কেরি ঢাকা ত্যাগ করেন। তিনি দিল্লির উদ্দেশে বিশেষ বিমান নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার পর ঢাকা ত্যাগ করেন। পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হক তাকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জন নিহত হওয়ার পর নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতার মধ্যেই ঢাকা ঘুরে গেলেন কেরি। গত ১ জুলাই ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের চলাফেরায় বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়।
বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেন এবং সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালকে ঢাকায় পাঠান। ওই সফরে বিসওয়াল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মার্কিন সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সহযোগিতা দেওয়ার আগ্রহের কথাই পুনর্ব্যক্ত করেছেন কেরি।