কামরাঙ্গিরচরের উন্নয়নই যার চ্যালেঞ্জ

সারওয়ার বাবর চৌধুরী মোহাম্মদ হোসেন। রাজধানীর উপকূলীয় জনপদ কামরাঙ্গিরচরের ৫৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। রাজনীতির সহজপাঠ্য অর্থকে যখন কঠিন করার চেষ্টা চলছে, চারিদিকে প্রভাব ও পেশিশক্তির আখের গোছানোর প্রতিযোগিতা, প্রতিনিয়ত মঞ্চায়িত হচ্ছে জনপ্রিয়তার ধ্বজাধারিদের নাট্যমঞ্চ,  যেখানে  সাহসি যুবকের প্রতিচ্ছবি মোহাম্মদ হোসেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগ করে রাজনীতির হাতেখড়ি। কামরাঙ্গিরচরের বিপদ-সংকুল রাজনৈতিক পথ যার মনোবলকে রুখে দিতে পারেনি। বরং নিজের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করে অলংকৃত করেছেন জনপ্রতিনিধির আসন। প্রচার বিমুখ এই নেতার জন্ম কামরাঙ্গিরচরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে নিজ পৈতৃক বাড়িতে। দৈনিক ভোরের দর্পণের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় প্রিয় কামরাঙ্গিরচর নিয়ে নিজের লালিত স্বপ্ন, আকাঙ্খা আর ভবিষ্যত ভাবনার কথা বলেছেন।

তিনি মনে করেন, এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব একটি অবশ্যম্ভাবি রুটিন-ওয়ার্ক। কিন্তু প্রতিদিন ভোর  বেলা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত অসহায় সাধারণ মানুষের কথা শোনা। তারপর তাদের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়া-এই কর্মকান্ডের মধ্যেই নির্ভার হয় প্রকৃত মানবতাবোধের কমিটমেন্ট।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ হোসেন এর একান্ত সাক্ষাৎকারটি এখানে তুলে ধরা হলো :

 

– কেমন আছেন ?
মোহাম্মদ হোসেন : হ্যাঁ। ভালোই আছি আল্লাহর রহমতে।

 

– আপনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কতটুকু পূরণ হয়েছে এ যাবত?
মোহাম্মদ হোসেন: বলতে পারেন প্রায় শতভাগ পূরণ হয়ে গেছে। যে টুকু বাকি, তা পূরণের পথে রয়েছে। কামরাঙ্গিরচরে একটি খেলার মাঠ, একটি ঈদগাহ মাঠ একটি সরকারি স্কুল, একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এরই মধ্যে। আর রাস্তাঘাটের উন্নয়ন তো চলছেই। আপনি ঘুরে দেখলেই এসব দেখতে পাবেন। একটি খেলার মাঠ করা আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যেই ছিল। নির্বাচনী মেনুফেষ্টোর বাইরে ভেতরে যখন যেটা এলাকাবাসির জন্যে অত্যাবশ্যক মনে করা হচ্ছে তাও করার চেষ্টা করছি।

hossen12
কামরাঙ্গিরচরের মানুষের সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার সংগ্রামে জয়ী হতে চাই-মোহাম্মদ হোসেন

 

 

– কামরাঙ্গিরচরকে এক সময়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন ছিনতাই আর মাদক ব্যবসার অভয়ারণ্য বলা হতো-বর্তমানে এ অভিযোগ থেকে অনেকাংশেই বের হয়ে এসেছে এই জনপদটি। এর পেছনের ইতিহাস কী ?
মোহাম্মদ হোসেন :এর পেছনের ইতিহাস হচ্ছে, এই এলাকার সংসদ সদস্য, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও ডেডিকেশন। তিনি এই এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে সহায়তা করার পাশাপাশি এখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে সদা নজরদারি রেখেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এই জনপদটিকে সিটি করপোরেশনভুক্ত করার পেছনে ছিল তারই শ্রম। বর্তমানে এর নগরায়নে নগর পরিকল্পনাবিদদের নিত্য-নতুন চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটাতে কোটি কোটি টাকার টেন্ডার পাস হচ্ছে। গত মাসেও ১৮ কোটি টাকার টেন্ডার পাস হয়েছে এলাকার উন্নয়নে। এসব কারণে এখানে বিলুপ্ত হয়েছে অনেক অসামাজিকতা আর অসামঞ্জস্যতা। বাকি যদি কিছু থেকেও থাকে ,তাও এক সময়ে থাকবে না, ইনশাআল্লাহ।

 

– আপনি কী মনে করেন, রাজনীতি এখন পেশিশক্তি আর প্রভাবশালীদের হাতে কুক্ষিগত?
মোহাম্মদ হোসেন: কারো কারো ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হলেও সবার ক্ষেত্রে নয়। আমাদের সাংসদ এই এলাকার যত উন্নয়ন ও জনকল্যাণকর কাজ করেছেন কোথাও তিনি প্রভাব বা পেশিশক্তি ব্যবহার করেননি। আমি নিজেও এতে বিশ^াসি নই। আমি মনে করি, রাজনীতি এমন এক মাধ্যম, যার মধ্য দিয়ে সমাজ ও জনগণের কাছাকাছি হওয়া যায়, তাদের জন্য ব্যাপক কল্যাণ করা যায়।

 

– কামরাঙ্গিরচরে বিভিন্ন স্থানে সরকারি খাসজমি বেদখল হচ্ছে। কুড়ারঘাট সংলগ্ন খালটি নানা উপায়ে ভরাট করে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহারের মহোৎসব চলছে। এমনকি এখানে একটি সরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হলেও এতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসি- এসব অভিযোগ আর অচল অবস্থা নিরসনে আপনার কোন জোরালো ভূমিকা আছে কী ?
মোহাম্মদ হোসেন: এরই মধ্যে আমরা এসব ব্যাপারে অনেক সফলতা অর্জন করেছি। সরকারি খাসজমি দখল মুক্ত করেই আমরা কিন্তু কামরাঙ্গিরচরে একটি বিশাল ঈদগাহ মাঠ করেছি। যা অন্য সময়ে যুবকদের খেলার মাঠ হিসেবে কাজে লাগছে। নতুন প্রতিষ্ঠিত শেখ জামাল হাইস্কুলটির জায়গাটিও ছিল বেদখলে। এমনকি যে সরকারি হাসপাতালটি এখন কামরাঙ্গিরচরে গড়ে উঠেছে সেই জায়গাটিও বিএনপির সাবেক বিদ্যুৎপ্রতিমন্ত্রী, জাতীয় পার্টির একজন প্রভাবশালী নেতা, একজন স্থানীয় হুজুর ও একজন ইউপি চেয়ারম্যন  বেদখলে নিয়ে ভোগ করতে চেয়েছিলেন। আমরা তাদের হাত থেকে সরকারি এই খাসজমি উদ্ধার করে একে জনকল্যাণে কাজে লাগিয়েছি। কুড়ারঘাট তিন রাস্তার মোড়ে আরেকটি খাসজমি সম্প্রতি উদ্ধার হয়েছে। এভাবে আমরা খাসজমি উদ্ধার করে চলেছি।  তবে এটা ঠিক, বেড়িবাঁধ এলাকার কিছু ভুমিদস্যুদের নানা স্থাপনা ও ময়লা আর্বজনায় বুড়িগঙ্গার ২য় চ্যানেল নামের এই খালটি বর্তমানে বেদখল হয়ে পড়েছে। সেটি উদ্ধারেও এরই মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন জোরালো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিছু সমন্বয়হীনতার কারণে চিকিৎসক নিয়োগ ও সেবা কার্যক্রমে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারেও মাননীয় সাংসদের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি এলাকার ও এর বাইরের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সংকট দুর করবেন।

 

– মাদকাসক্তির বাইরে যুব সমাজ এখন নতুন আসক্তি হিসেবে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে-এমন অস্থিরতা রোধে আপনার এলাকার কোন উদ্যোগ রয়েছে কি ?
মোহাম্মদ হোসেন: এটা একটি সুন্দর প্রশ্ন। কেবল যুব-সমাজই নয়, আমাদের এলাকায় পারিবারিক অশান্তি, স্বামী-স্ত্রী বিরোধ, নৈতিক অবক্ষয় ইত্যাদি অস্থিরতা দুর করতে আমি কাউন্সিলিং ব্যবস্থা নিচ্ছি। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, মসজিদের ইমাম, শিক্ষক এদের মুখোমুখি করে আমরা বিপথগামি ও বিপদগ্রস্ত মানুষের মধ্যে  মূল্যবোধ জাগ্রত করছি। তাদের সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট দিচ্ছি। এ কাজের সুবিধার জন্য আমরা গোটা কামরাঙ্গিরচর এলাকাকে ১৬টি ভাগে ভাগ করে নিয়েছি। আমরা এই কাজেও ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি।

 

– আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী ?
মোহাম্মদ হোসেন: কামরাঙ্গিরচর রাজধানীর উপকণ্ঠে অবস্থিত হওয়ায় এখান থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পৌঁছুতে মাত্র ২০ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু সেই বিচারে এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনো অনেক দূরত্বে রয়ে গেছে। আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে, এই দুরত্বটুকু শূণ্যে নিয়ে আসাসহ কামরাঙ্গিরচরের মানুষের সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার সংগ্রামে জয়ী হতে চাই।

 

– ধন্যবাদ আপনাকে ।
মোহাম্মদ হোসেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

 

ব্যক্তি জীবনে এক পুত্র সন্তানের জনক মোহাম্মদ হোসেন ।

Print Friendly

Related Posts