নীল গলা বসন্ত পাখিটাকে দেখবো বলে
গ্যালিলিও’র টেলিসকোপটা ধার নিয়েছি আমি সেই কবে
মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে এতোকাল
সাড়ে চার দশক হবে
পাখিটাকে খুঁজছিলাম আর খুঁজছিলাম
আমাদের আবাসিক পাখি নীল গলা বসন্ত
কেউ বলেন নীলকান বসন্ত
কারো কারো ভাষায় সেকরা বসন্ত
দাগী বসন্ত অথবা বড় বসন্ত নামেও ডাকেন কেউ কেউ
চর্যাপদের অক্ষরে অক্ষরে তার দেহ নীলিমায় নীল
গুহায় গুহায় পাওয়া শিলালিপির হার কণ্ঠে তার
আওয়াজ সরাবরি তার সোম-ফাঁকে পড়ে
তাল লয় ভরা সব সুর আর গান
ওয়ারি বটেশ্বর সভ্যতার উড়ন্ত প্রতিনিধি সে
প্রকৃতির বুননে বোনা এই পাখিটার ছড়ানো ডানায়
চাঁদনী পশর রাতও ম্লান হয়ে যায়
সক্রেটিসের হেমলক ভরা প্রশ্নটা খোঁজে তাই
অপমানিত চাঁদ
একজন নতুন অর্জুনের জন্য
দেবরাজ ইন্দ্র ছুটে আসে তার কাছে
দারুণ তুচ্ছতায় অবহেলা করে তা নীলগলা বসন্ত
একবারে বেখেয়াল থেকে সে তাকায় এদিক ওদিক
ফুলগুলো সব মধু মধু হওয়ার কারণ এটাই
অবারিত মাঠে ফসলের নাচন আনে ত্রিতাল ঝুমুর তাল
হংস মিথুনের সাথে সব পাখ-পাখালি
জোড়ায় জোড়ায় ঘোরে আর ওড়ে ইচ্ছে মত
আমার চোখে থাকা সেই বিখ্যাত টেলিসকোপে
অমনি দেখেছি তাকে
আবাসিক এলাকায় একদিনও দাঁড়ায়নি এই নীলগলা বসন্ত
বিগত সাড়ে চার দশক
এবার এই অঘ্রাণে
নবান্নের শুরুতেই যেন অতিরিক্ত প্রাপ্তি হিসেবে এলো একরাত
সারা বিশ্বজুড়ে সংবাদ শিরোনাম হলো আরো একবার
ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার
আর পরদিন সকালেই
সিদ্ধার্থের বোধি প্রাপ্তির মত
ক্রুশবিদ্ধ যীশুর ক্রুশে লাগা শাপমোচন রক্ত মোছা কাপড় হাতে
আমাদের আবাসিক এলাকায়
নীলগলা বসন্ত পাখি দাঁড়ালো প্রথম
অন্যরকম
আমি তাকে দেখলাম অবাক বিস্ময় বিশাল প্রাপ্তির বিশালতায়
টান টান উত্তেজনায়
কণ্ঠে তার বাংলা ও বাঙ্গালী প্রিয় শ্লোগান ‘জয় বাংলা’
আর সর্বাঙ্গে জড়ানো আমাদের প্রাণপ্রিয়
লাল সবুজ পতাকা।
২৮ নভেম্বর, ২০১৫