মধুমন্তী পৈত চৌধুরী |||||
অবিবাহিত, বিবাহিত, বিবাহ-বিচ্ছিন্ন না কি অপেক্ষমান? আপনার ‘রিলেশনশিপ স্টেটাস’ বোঝাতে এই বিকল্পগুলিই যথেষ্ট? কাগজপত্রে হলেও, সোশ্যাল মিডিয়াতে হয়তো নয়। নতুন প্রজন্মের প্রেমের রঙ বড়ই বিচিত্র! তাই বিকল্পের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে দিনে দিনে!
ফেসবুকে নতুন বন্ধু করার পরে অনেকেরই রিলেশনশিপ স্টেটাস দেখবেন, ‘ওপেন রিলেশনশিপ’। মানে কী এই ‘ওপেনের’? আসলে এই সম্পর্কে যাঁরা থাকেন, তাঁরা এতটাই খোলামেলা মনের মানুষ যে, চাইলেই একটি সম্পর্কে থেকেও নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন। নেই আনুগত্যের প্রশ্ন, নেই কোনও বাধা-নিষেধ। অর্থাত্ প্রেম এখন আর দুজনের মধ্যে আবদ্ধ নয়। অজান্তে নয়, বরং আপনার পূর্ণ সম্মতিতে তৃতীয় ব্যক্তিরও এখন স্থান আছে প্রেমের সম্পর্কে। তা হলে তো সম্পর্কে জটিলতা আসাটাই স্বাভাবিক! নয় কি?
আর তাই অনেক বন্ধুরই স্টেটাস ‘ইটস্ কমপ্লিকেটেড’। প্রেম বোধ হয় এত জটিল বছর দশেক আগেও ছিল না।. তবে এখন প্রেমে পড়া থেকে বেরিয়ে আসা পর্যন্ত জটিলতা সর্বত্র। ভাললাগা না ভালবাসা না শুধুই বন্ধু-প্রীতি! সত্যি, আবেগ বোঝা এখন পদার্থবিদ্যার কোয়ান্টাম তত্ত্বের থেকেও কঠিন!
আর এই বন্ধু-প্রীতি থেকে ‘ফ্রেন্ড-জোন’ হওয়ার ভয় এখন অনেক সম্ভাব্য প্রেমিকের মনেই।. নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবি দেখিয়েছিল, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে শুধু বন্ধু হতে পারে না। সেই যুগ পেরিয়ে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ থেকে ‘জানে তু ইয়া জানে না’ দেখাল, বেস্ট ফ্রেন্ডই হয়ে ওঠে বয়ফ্রেন্ড। তবে আধুনিক প্রেমের গাইডবুক ‘প্যার কা পঞ্চনামা’ দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন, একটি মেয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড ও বয়ফ্রেন্ড অনেক ক্ষেত্রেই এখন এক ব্যক্তি নন। আর তাতেই গোল বাধে সমূহ বিপদের। অ্রর্থাত্ জটিলতা এখানেও।.
তবে জটিলতাকে আর জটিলতা মনে হবে না, যদি তার মধ্যে অন্তর্নিহিত হাস্যরস খুঁজে পান। হ্যাঁ, জেনওয়াইয়ের রিলেশনশিপ স্টেটাসে আছে অনেক মজার সংযোজন। ইন্টারনেট-সর্বস্ব এই প্রজন্মের রিলেশনশিপ স্টেটাস আপডেটে কখনো থাকে অসম্ভবের খোঁজ, কখনো বা মনে মনে কোনও সেলিব্রিটি বা কোনও কার্টুন চরিত্রকে ডেটিং। যাঁরা ‘সিঙ্গল’ থাকেন, তাঁরাও কিন্তু আত্ম-প্রশংসা মুখর স্টেটাস দিয়ে নিজেদের একাকীত্বকে ভুলিয়ে রাখেন।.
আদতে রিলেশনশিপ স্টেটাস এখন আর শুধু প্রেমের বাঁধনে আটকে নেই। যে কোনও সাম্প্রতিক চাহিদাকেই সোশ্যাল মিডিয়া স্টেটাস বানিয়ে দেয়। হোক সে ওয়াইফাই, বা পিত্জা বা আমেরিকার নাগরিকত্বের দাবি।
কিন্তু রিলেশনশিপ স্টেটাসের এই বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময় সম্ভার আসল সম্পর্কের মাহাত্ম্যকে কি খাটো করে দেয়? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াও এক কথায় সহজ নয়।
তবে সুকুমার রায়ের গোঁফচুরির শেষ দুটো পংক্তিকে এ ভাবে নিশ্চয়ই আজ বলা যায়, (সোশ্যাল নেটওয়ার্কে) প্রেমের আমি/ প্রেমের তুমি/ আর রিলেশনশিপ স্টেটাস দিয়ে যায় চেনা।